বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

ইউনিয়ন কমিটি বাছাই করছে বিএনপির প্রার্থী

মাহমুদ আজহার

পৌরসভার পর প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ভোট হচ্ছে। ভোট ডাকাতির শঙ্কা সত্ত্বেও দলীয়ভাবে এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। তৃণমূলে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে। এ নিয়ে মাঠের রাজনীতিতে ভোটের উত্তাপ বিরাজ করছে। প্রাথমিকভাবে বিএনপির ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি বাছাই করছে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী। অনেক এলাকায় ফরম বিক্রির মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে। জানা যায়, মাঠের নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হলেও আড়ালে জেলা ও উপজেলা কমিটি প্রভাব বিস্তার করছে। বসে নেই সাবেক মন্ত্রী-এমপিরাও। তারাও নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছেন। গতকাল দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের একক প্রার্থী নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতাদের কাছে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। চিঠিতে একক প্রার্থী নির্ধারণে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, জেলা ও উপজেলা নেতৃত্বের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হবে। খুব শিগগিরই এ চিঠি পাঠানো হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

বিএনপির হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর‌্যায়ের কমিটি ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী বাছাই করবে। তা সমন্বয় করবে উপজেলা ও জেলা কমিটি। কোনো ইউনিয়নে কমিটি না থাকলে উপজেলা ও জেলার মাধ্যমে সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থীর তালিকা কেন্দ্রে পাঠাতে হবে। কেন্দ্র যাচাই-বাছাই করে একক প্রার্থী নির্ধারণ করে দেবে। কোনো অবস্থাতেই একাধিক প্রার্থী দেওয়া যাবে না। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করলে বিদ্রোহী প্রার্থীকে বুঝিয়ে নির্বাচন থেকে বসানোর চেষ্টা করা হবে। এর পরও না মানলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রার্থী বাছাই করবেন তৃণমূল নেতৃত্ব। ইউনিয়ন কমিটিই চেয়ারম্যান প্রার্থী চূড়ান্ত করবে। তা উপজেলা ও জেলা কমিটি অনুমোদন দেবে। সাইনিং অথরিটির বিষয়টি নির্ভর করবে আইনে কী বলা আছে। যদি জেলা পর‌্যায়ে অথরিটি দেওয়ার নিয়ম থাকে তাহলে বিএনপি চেয়ারপারসন সেভাবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবেন। অনেকগুলো সই করাও খুবই কষ্টকর। তবে যে ধাঁচের নির্বাচন হচ্ছে, তাতে ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তৃণমূলসূত্র জানায়, প্রার্থী নির্ধারণে ইউনিয়ন পর‌্যায়ে ভোটের আগেই ভোট প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বিএনপির মাঠ পর‌্যায়ের নেতৃত্ব। ইউনিয়ন পর‌্যায়ের নেতা-কর্মীদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। অনেক এলাকায় গোপন ভোটও নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য ফরমও বিক্রি করা হচ্ছে কোনো কোনো এলাকায়। কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে শোডাউনও করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। প্রতিটি ইউনিয়ন পর‌্যায়ে কয়েকজন করে প্রার্থী ভোটের মাঠে। ধানের শীষ প্রতীক পেতেও নানা তত্পরতায় ব্যস্ত তারা। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সর্বত্রই যোগাযোগ করছেন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা। অনেক নেতাই এখন ঢাকায় প্রভাবশালী নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। সূত্রমতে, চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার খড়্গ রয়েছে। তার পরও কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তৃণমূলের জনপ্রিয় নেতারা। প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব তৃণমূল নেতৃত্বকে দেওয়া হলেও পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন সাবেক মন্ত্রী-এমপিরা। নিজেদের পছন্দের প্রার্থী তালিকাও তৈরি করছেন তারা। ওই তালিকা নিয়ে কেন্দ্রে লবিংও করছেন। এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের দিয়ে শোডাউনও করানো হচ্ছে। এদিকে নিজেদের মতো করে প্রার্থী নির্ধারণ করতে গিয়ে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও আছে সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে। টাকা-পয়সা দিয়ে মনোনয়ন নেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টাও চালাচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, ইউপি নির্বাচনে তৃণমূল নেতাদের সবাই প্রার্থী হতে চান। একক প্রার্থী নির্বাচন করতে খুবই সমস্যায় পড়তে হবে। বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে। শক্ত হাতে মোকাবিলা না করলে শুধু বিএনপিই নয়, সব রাজনৈতিক দলেই প্রার্থীর ছড়াছড়ি হবে। তবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে বিশ্বাস করে। লাখ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারের খড়্গ থাকা সত্ত্বেও আমরা ইউপি নির্বাচনে যাব। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। তৃণমূলের সবাই চায় নির্বাচন করতে।

সর্বশেষ খবর