বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

জাপায় এরশাদ-রওশন ‘রহস্যময়’ বিরোধ

কেউ বলছেন ‘পরিকল্পিত’ কারও মতে ‘ঘোলা পানিতে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা’

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ এবং দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের মধ্যে চলছে ‘রহস্যময়’ বিরোধ। জি এম কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবং এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব পদে পুনর্বহাল করার পর থেকেই এরশাদ ও রওশনের মধ্যে এ বিরোধ চলছে। কেউ বলছেন, এটা উভয়ের পরিকল্পিত। আবার কেউ কেউ বলছেন, রওশন এরশাদের সঙ্গে থাকা চার থেকে পাঁচজন সরকার ও দল থেকে নিজেদের ফায়দা লোটার জন্য এরশাদের সঙ্গে রওশনের দ্বন্দ্ব জিইয়ে রেখেছেন।

জানতে চাইলে পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অতীতেও বড় দলগুলোর নেতৃত্বে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছিল। আমরাও তার থেকে বাদ পড়িনি। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে আমরা একযোগে কাজ করে আসছি। আমি বিশ্বাস করি, স্যার ও ম্যাডাম অবিচ্ছেদ্য অবস্থানে আছেন। সময়ই বলে দেবে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ। অনৈক্য ও বিভাজন দলের কারোই কাম্য নয়।

এরশাদের এমন সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের কারণে সোমবার রাজধানীতে সারা দেশের তৃণমূল নেতা-কর্মীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দেননি রওশনসহ দলের ৩৫ এমপি। আবার চার দিন আগে ৪ ফেব্রুয়ারি জি এম কাদের এবং রুহুল আমিন হাওলাদারের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রওশন এরশাদ আসতে চেয়েছিলেন। রওশন এরশাদকে ফোনে বলেছিলেন, ‘আমাকে নিলে না কেন’। আবার সোমবার এরশাদ সমাবেশে না আসা মন্ত্রী-এমপিদের উদ্দেশে বলেছেন, দলে যারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, এই সভায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের না আসার জন্য দলের কেউ কেউ ফোনে নিষেধ করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একদিন আগে রবিবার সংসদে ২৬ জন এমপির সমন্বয়ে সিদ্ধান্ত হয় রওশন এরশাদকে কো-চেয়ারম্যান না করা পর্যন্ত তারা এরশাদের সভা-সমাবেশে অংশ নেবেন না। তবে ওই ২৬ জনের মধ্যে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এবং এরশাদের বোন মেরিনা রহমান এরশাদের সোমবারের সভায় যোগ দিয়েছিলেন। আবার এরশাদ সম্প্রতি জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর উত্তরের কাউন্সিলে রওশনের হাত উপরে তুলে ধরে এরশাদ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, আমার আর রওশনের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। এর মধ্যে জি এম কাদেরও রওশন এরশাদের বাসায় যান এবং প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থান করেন। নেতা-কর্মীরা বলেন, এরশাদ-রওশনের দৃশ্যমান বিরোধ অনেকটাই কৌশলগত। দুপক্ষের কেউই সরকারকে চটাতে চায় না। বরং সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই জাপাকে আলোচনায় জিইয়ে রাখতে চায় তারা। এ জন্যই কিছুদিন পরপর দলের সংসদ সদস্যদের মন্ত্রিসভা ছাড়ার আলোচনা তোলা হয়। জাপার দায়িত্বশীল এক সূত্র জানায়, সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশনের সঙ্গে কথা বলেই এরশাদ গত ১৭ জানুয়ারি জি এম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান এবং নিজের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন। আর মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মহাসচিব পদ থেকে সরান তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্তে। মহাসচিব পদে হঠাত্ পরিবর্তন এবং কো-চেয়ারম্যান নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে রওশন প্রশ্ন তুললেও শেষ পর্যন্ত তিনি তা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু রওশন এরশাদের সঙ্গে থাকা কয়েকজন নেতা নিজেদের ফায়দা হাসিলের জন্য স্যার ও ম্যাডামের বিরোধ জিইয়ে রাখতে চান। তিনি বলেন, এটাও ঠিক পার্টির চেয়ারম্যান ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পক্ষে ছিলেন না। সর্বশেষ পার্টি থেকে মন্ত্রিত্ব না নেওয়ার জন্য ম্যাডামকে স্যার বলেছিলেন। কিন্তু ম্যাডাম কথা রাখেননি। ফলে নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়ার বিষয়টি থেকেই তাদের মধ্যে একটা বিরোধ রয়েছে। জি এম কাদের বলেন, এটা পরিকল্পিত, ঠিক তা নয়। তবে এটা ঠিক যে, ম্যাডাম (রওশন) এরশাদ সাহেবের পদক্ষেপের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেননি। কিছু লোক পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে।

সর্বশেষ খবর