সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

কুতর্ক নয়, চাই বিতর্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক

কুতর্ক নয়, চাই বিতর্ক

আমরা কুতর্ক চাই না, বিতর্ক চাই। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতে হবে। গণতন্ত্র নির্মাণে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা কখনো শক্তিশালী আবার কখনো দুর্বল। কিন্তু গণমাধ্যম সবসময় শক্তিশালী। রাজনীতিবিদরা ভুল করতে পারেন, কিন্তু গণমাধ্যম ভুল করতে পারে না। সাংবাদিক সামিয়া রহমান সম্পাদিত ‘কুতর্ক বিতর্কে গণমাধ্যম’ বইটির প্রকাশনা উপলক্ষে গোলটেবিল বৈঠকে এসব বলেন বক্তারা। গতকাল বিকালে বাংলা একাডেমির সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয় এই আয়োজন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, গণতন্ত্র আর রাষ্ট্র হচ্ছে মশারি ঢাকা খাটের মতো। গণমাধ্যমের স্বচ্ছ কাচের ঘরে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ইত্যাদি বজায় রাখতে হবে। ইনু বলেন, পোকামাকড়ের ভয়ে গণতন্ত্রের জানালা বন্ধ করা যাবে না। তাহলে গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের সবচেয়ে বড় হুমকি জঙ্গিবাদ ও সাইবার ক্রাইম। গণতন্ত্র মানে আইনের শাসন। হাসানুল হক ইনু বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী সমালোচনা সহিষ্ণু। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ ও জাতীয় পতাকা নিয়ে কখনই বিতর্ক করা যাবে না। গণমাধ্যমের উদ্দেশে তিনি বলেন, নিরপেক্ষতার নামে কখনই একজন জঙ্গি নেত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর তুলনা করবেন না। সামিয়া রহমানের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তৃতা করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, ড. ইয়াসমিন হক, ড. আহাদুজ্জামান, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন (অব.), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুবাইয়াত ফেরদৌস, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, বইটির প্রকাশক শ্রাবণ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রবিন আহসান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন সামিয়া রহমানের পিতা কাজী মাহমুদুর রহমান। গোলটেবিল বৈঠকে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ যখন একজন শিক্ষকের ওপর হাত তুলেছিল তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ছাত্রলীগকে আগাছামুক্ত করতে হবে। আমিও বলেছি যে দোষীকে শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু একটি বড়মাপের পত্রিকা রিপোর্ট করেছিল ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ছাত্রলীগের শাস্তির বিপক্ষে। রিপোর্টাররা দায়িত্ব নিয়ে রিপোর্ট করেন না। তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, গণমাধ্যম যেমন সবাইকে নিয়ে সমালোচনা করে সামিয়া রহমানের এই বইটি তেমনিভাবে গণমাধ্যমের সমালোচনা করেছে। তিনি বলেন, আমরা কুতর্ক করতে চাই না বিতর্ক করতে চাই। পলক আরও বলেন, গণমাধ্যম ছাড়া জবাবদিহিতার জায়গা খুব ছোট। দেশ, জাতি গঠনে গণমাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, গণমাধ্যম ভালো কাজ ও খারাপ কাজ দুটোই করে। এ সময় তিনি আমার দেশ পত্রিকার সমালোচনা করে বলেন, আমার দেশ পত্রিকাটি ৫ মের ঘটনাটিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে জনসাধারণের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। খালেদা জিয়া শহীদদের নিয়ে যে বিতর্ক করেছেন তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, ত্রিশ লাখের চেয়ে বেশি মানুষ শহীদ হয়েছে। এ সময় তিনি মুনতাসীর মামুনের একটি বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে নির্যাতিতা নারীর সংখ্যা দুই লাখ বলা হলেও তা মূলত ৬ লাখ হবে। মানিক বলেন, পাকিস্তানপ্রেমী খালেদা জিয়ার মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছে গণমাধ্যম। সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গণমাধ্যমের ভূমিকার কারণেই ভিয়েতনামের যুদ্ধটা শেষ হয়েছিল। তিনি বলেন, তর্ক-বিতর্ক থাকবে তা অবশ্যই যৌক্তিক হওয়া উচিত। রুবাইয়াত ফেরদৌস বলেন, তর্কহীন সমাজ মানে মৃত সমাজ। বইয়ে চিন্তার প্রকাশ করা হয়। কিন্তু জঙ্গিরা বইয়ের জবাব বই দিয়ে না দিয়ে চাপাতি দিয়ে দিচ্ছে। ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বলেন, গণমাধ্যমের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। সাংবাদিকদের কাছে আমরা জিম্মি। আমরা সংসদে ডেইলি স্টারের সম্পাদকের সমালোচনা করলাম সেটাও গণমাধ্যম সমালোচনা করেছে। ইমরান এইচ সরকার বলেন, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে কীভাবে আরও দায়িত্বশীল করা যায় তা ভাবতে হবে।

সর্বশেষ খবর