শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

শুল্ক ফাঁকি : পাঁচ কৌশলে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার

রুহুল আমিন রাসেল

দেশে পণ্য আমদানিতে শুল্কমুক্ত বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধার অপব্যবহার করে শুল্ক ফাঁকি দিতে ৫ কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বন্ড সুবিধায় ব্যাপক পরিমাণে পণ্য আমদানি করা হলেও বন্ডের লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো তা ব্যবহার করে না। এমন প্রেক্ষাপটে ৫ কৌশলে বন্ড লাইসেন্সের অপব্যবহারকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তালিকা করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এনবিআরের তথ্যে দেখা গেছে, দেশে এখন ব্যাক টু ব্যাক এলসি বা ঋণপত্র ছাড়া বন্ডের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে পণ্য আমদানি হচ্ছে। ব্যাক টু ব্যাক এলসি ছাড়া পণ্য আমদানির আইনগত সুযোগ থাকলেও, এই সুযোগের ব্যাপক অপব্যবহার হচ্ছে। যেমন পিভিসি রেসিন ও ইভা নামীয় পণ্যগুলো ব্যাপক হারে আমদানি করা হলেও বন্ড প্রতিষ্ঠানে এর ব্যবহার নেই। যদিও বন্ড লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরেজমিন যাচাই করে প্রাপ্যতা নির্ধারণ এবং কোন প্রতিষ্ঠানে কোন পণ্য কি কাজে প্রয়োজন সে বিষয়টি নির্ধারণ করে দেয় শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদফতর (ডেডো)। যে ৫ কৌশলে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার হচ্ছে, সেগুলো হলো— বন্ড লাইসেন্সে পণ্যের প্রাপ্যতা সঠিকভাবে নির্ধারণ না করা। ডেডো কর্তৃক সঠিকভাবে সহগ নিরূপণ ও নির্দিষ্ট সময় পর পর তা হালনাগাদ না করা। বন্ডে আমদানির তথ্য পাস বইতে যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ না করা। ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তারা শিল্প-প্রতিষ্ঠানে সঠিকভাবে মনিটরিং না করা। কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট কর্তৃক বন্ডেড লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে যথাযথভাবে অডিট না করা। এমতাবস্থায় বন্ড সুবিধার অপব্যবহার বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকারী চক্র বিভিন্নভাবে সরকারের রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাদের বিরুদ্ধে এনবিআরের অবস্থান পরিষ্কার।  এদিকে শুল্কমুক্ত আমদানিতে বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধাপ্রাপ্ত রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট গত বছর ২০১৫ সালে বন্ড লাইসেন্সধারী এক হাজার ১২৮টি প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের এই তথ্য উদঘাটন করেছে। জানা গেছে, রপ্তানির শর্তে আমদানি করা শুল্কমুক্ত সুবিধার পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করে রাজস্ব ফাঁকি, আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণা, কম দামে কেনা পণ্যের বেশি মূল্য দেখানো, আবার বেশি দামে বিক্রি করা পণ্যের দাম কাগজপত্রে কম দেখানোর মতো প্রক্রিয়াতে এই প্রতিষ্ঠানগুলো এক হাজার ৬৫১ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে প্রাপ্ত তথ্যমতে, রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানাগুলো পুনঃরপ্তানির শর্তে শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধায় পণ্য আমদানির সুযোগ পায়। বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধার আওতায় রপ্তানির নামে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি হয়েছে দিনের পর দিন। ফলে প্রতি বছর শুধু আমদানি পর্যায়ে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি শুল্ককর অব্যাহতি দিয়ে থাকে সরকার। স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) অব্যাহতির হিসাব বিবেচনায় নেওয়া হলে এর পরিমাণ আরও অনেক বেশি হবে।

সর্বশেষ খবর