সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
প্রাণের বইমেলা

মানুষের ঢল বইমেলায়

মোস্তফা মতিহার

মানুষের ঢল বইমেলায়

আগের রাতের ফুলেল শ্রদ্ধার রেশ তখনো কাটেনি। শহীদ মিনারে প্রভাতফেরির ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ হূদয়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। আর সেই সুরের অনুরণন শহীদ মিনার থেকে ছড়িয়ে পড়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমিসহ সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। একুশের শোককে শক্তিতে পরিণত করেই একুশের চেতনায় ঋদ্ধ হয়ে উৎসবে মেতে উঠে বইপ্রেমী মানুষরা। নবীন গাছের পাতায় পলাশের রঙে প্রকৃতি যেমন উন্মাদনায় মেতে উঠেছিল গতকাল তেমনি উন্মাদনা লক্ষ্য করা যায় একুশের চেতনায় ঋদ্ধদের মাঝে। ৬৪ বছর আগের এ দিনের স্মরণে শরীরে একুশের উল্কি, মাথায় জড়ানো অ আ ক খ বর্ণমালার মাথাবন্ধনী, হাতে একুশের পতাকা আর ফুল, ঠোঁটের কোণে মাতৃভাষা বাংলাকে ফিরে পাওয়ার আনন্দের ঝিলিক, চোখেমুখে সংগ্রামে উদ্দীপ্ত হওয়ার শপথ। একদিকে শহীদদের স্মরণে এবং শ্রদ্ধায় সারিবদ্ধভাবে খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে শহীদের বেদিতে ফুলেল শ্রদ্ধা। অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ভেসে আসছিল পলাশ ফোটা ফাগুনের কোকিলের কুহুতান। আর পলাশ রাঙ্গা বিকালে এবং কোকিলের কুহুতানে গ্রন্থমেলায়ও নেমে এসেছিল প্রাণের জোয়ার। শহীদের বেদিতে ফুলটি রেখে এসে সেই হাতে বই তুলে নেওয়ার মধ্য দিয়ে বাঙালি প্রমাণ করেছে বইয়ের প্রতি বাঙালির আকর্ষণ অমোঘ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস ২১ ফেব্রুয়ারির গতকালের চিত্রটি এমনই ছিল। কবিতায়, গল্পে, উপন্যাসে, সাইন্সফিকশনে একুশকে নতুন করে খুঁজে নিয়েছে গোটা বাঙালি। উৎসবের রঙে একুশে ফেব্রুয়ারির আবহে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে আবালবৃদ্ধবনিতার উজ্জীবিত উপস্থিতিতে প্রাণের গ্রন্থমেলাও গতকাল ছিল একুশময় এবং ভাষাময়। শহীদ মিনার থেকে দোয়েল চত্বর। টিএসসি থেকে শাহবাগ। বাংলা একাডেমি থেকে স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। একুশের টানে বইয়ের প্রেমে সবখানেই ছিল জনসমুদ্রের বাঁধভাঙা জোয়ার। গতকাল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলার দ্বার উন্মোচন করা হয় সকাল ৮টায়। আর দ্বার বন্ধ করা হয় যথারীতি রাত ৮টায়। গতকাল বিকালে মেলায় আসেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সঙ্গে ছিলেন তার সহধর্মিণী সাবিয়া মুহিত। তিনি বেশ কিছুক্ষণ মেলায় সময় কাটান। অন্যদিকে বিকালে মেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এসেছিলেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। তিনি যুবজাগরণের স্টলসহ বেশ কয়েকটি স্টল ঘুরে মেলা প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন। নতুন বই : গতকাল ২১তম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে মোট ২ হাজার ৬০৬টি বই। গতকাল মেলায় এসেছে ২১০টি বই। এর মধ্যে গল্প ৩৭, উপন্যাস ৩৫, প্রবন্ধ ১৬, কবিতা ৫৭, গবেষণা ৪, ছড়া ৭, শিশুতোষ ১১, জীবনী ৪, রচনাবলি ১, মুক্তিযুদ্ধ ৫, নাটক ১, বিজ্ঞান ১, ইতিহাস ১, অনুবাদ ২ ও অন্যান্য ২৮। উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত নাসির আলী মামুনের ক্যামেরায় তোলা ছবিতে হুমায়ূন আহমেদের আলোচিত্রের বই ‘অনন্ত জীবন যদি’, নাসরিন জাহানের ‘নিঃসঙ্গতার পাহারাদার’, বিদ্যাপ্রকাশ এনেছে মফিদুল হকের ‘বাংলাদেশের গণহত্যা ও ন্যায়রথের অভিযাত্রা’, অনিন্দ্য প্রকাশ এনেছে মোশতাক আহমেদের ‘দেশের প্রতি ভালবাসা’, সময় এনেছে শামসুজ্জামান খানের ‘বর্ধমান হাউসে রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য প্রবন্ধ, মুনতাসির মামুনের ‘বাংলাদেশ রাজনীতি, ধর্ম ও যৌথ জঙ্গিবাদের বিকাশ’, কথা প্রকাশ এনেছে ফরিদুর রেজা সাগরের ‘ছোটদের পাঁচ,’ অনন্যা এনেছে আনোয়ারা সৈয়দ হকের ‘তুমি আগে যাবে না আমি’, পার্ল পাবলিকেশন্স থেকে হারুন-আর-রশিদের ‘পরিবেশবান্ধব সবুজ ব্যাংকিং’। মূল মঞ্চের আয়োজন : বিকাল ৪টায় অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘আবাসন : বিশ্বে ও বাংলাদেশে’ শীর্ষক বক্তৃতানুষ্ঠান। একুশে বক্তৃতা প্রদান করেন সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন। স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী রচিত ভাষা আন্দোলনের অমর নাটক ‘কবর’ মঞ্চায়ন করে নাট্য সংগঠন, থিয়েট্রেক্স বাংলাদেশ।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর