সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

নির্বাচনী ব্যয় ও বিধি লঙ্ঘন তদারকিতে বেকায়দায় ইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচনী ব্যয় ও বিধি লঙ্ঘন তদারকিতে বেকায়দায় ইসি

প্রথম ধাপের ৭৩৯ ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন আজ। আওয়ামী লীগ সব ইউপিতে দলীয় প্রার্থী দিলেও বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপি সব ইউপিতে প্রার্থী দিতে পারেনি। নির্বাচন কমিশন (ইসি) মনে করছে, আজ শেষ দিন দলীয় প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। এদিকে প্রথমবারের দলীয়ভাবে অনুষ্ঠেয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও নির্বাচনী ব্যয় তদারকি নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে ইসি। ৭৩৯ ইউনিয়নের কোথাও কোথাও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। তবে    বিধি প্রয়োগ ও ব্যয় তদারকি নিয়ে বেকায়দায় রয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এখন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শুরু হয়েছে। প্রার্থী হওয়ার পর সবার দিকে সমান নজর রাখা হবে। এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি।’ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকে এ বিষয়ে দেখভাল শুরু করা হবে। স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে ছোট্ট এ নির্বাচনে বিধি লঙ্ঘনের তদারক করাটাও সহজ হবে না তাদের কাছে। প্রতি উপজেলায় একজন করে বিচারিক ও নির্বাহী হাকিম দিয়ে পাঁচ শ’র বেশি প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় তদারক করাটাও প্রায় অসম্ভব।

প্রথম ধাপের ৭৩৯ ইউপিতে চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে আজ ২২ ফেব্রুয়ারি। ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় ২ মার্চ। ভোট হবে ২২ মার্চ। ইসির কর্মকর্তারা জানান, প্রতি উপজেলায় অন্তত ছয় থেকে নয়টি ইউপি থাকে। প্রতিটি ইউপিতে একজন চেয়ারম্যান এবং অন্তত নয়টি সাধারণ ওয়ার্ড ও তিনটি সংরক্ষিত রয়েছে। প্রতি ইউনিয়নে গড়ে ১৩টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে প্রতি উপজেলায় শ’খানেক পদ রয়েছে। এসব পদে গড়ে পাঁচজন করেও প্রার্থী হলে পাঁচ শ’ প্রার্থী প্রতি উপজেলায়। এ অবস্থায় তারা নির্বাচনী ব্যয় ঠিকমতো করছেন কি না বা আচরণবিধি সঠিকভাবে পালন হচ্ছে কি না তা কয়েকজন কর্মকর্তার পক্ষে তদারক করা কঠিন হবে বলে উল্লেখ করেন একজন নির্বাচন কর্মকর্তা। ইউপিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী পাঁচ লাখ টাকা ও সদস্য এক লাখ টাকা নির্বাচনী ব্যয় করতে পারবেন। এর বাইরে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ব্যক্তিগত খরচ ৫০ হাজার টাকা ও সদস্য ১০ হাজার টাকা ব্যয়ের সুযোগ রয়েছে নির্বাচনবিধিতে। রাজনৈতিক দল ইউপিপ্রতি ৩০ হাজার টাকা করে ব্যয় করতে পারবে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকা জরিমানার সুযোগ রাখা হয়েছে। চেয়ারম্যান পদে ব্যয় রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ১১ ফেব্রুয়ারি ৭৩৯ ইউপির তফসিল ঘোষণার পর ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আগাম প্রচারণামূলক পোস্টার-প্রচারসামগ্রী সরিয়ে ফেলার জন্য বলেছে ইসি। ইসি নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব রকিবউদ্দিন মণ্ডল বলেন, নির্বাচনী ব্যয় তদারক করা কঠিন হলেও উপজেলা পর্যায়ে ভিজিলেন্স টিম থাকবে। থাকবেন বিচারিক ও নির্বাহী হাকিম। ব্যয়সীমার মধ্যে প্রার্থী নির্বাচনী খরচ করছেন কি না এবং আচরণবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হচ্ছে কি না, তা ভালোভাবে দেখা হবে। এখনো যাদের প্রচারসামগ্রী থাকবে তাদের ছবি তুলে রাখা হচ্ছে। প্রার্থী হওয়ার পরই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচনের অন্য স্তরে ব্যয় তদারক করাটাই কঠিন হয়ে পড়ে যেখানে, এবার ছোট্ট ইউপিতে তা খুঁজে বের করা অসম্ভব বললেই চলে। এ ক্ষেত্রে আচরণবিধি লঙ্ঘনকারী কাউকে পেলে শাস্তি ও জরিমানা দিয়ে অন্যদের বিধি লঙ্ঘন রোধে বিষয়টি নজরে আনার চেষ্টা করা হবে। অগোছালো অবস্থায় নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর মাঠপর্যায়ের সঙ্গে ইসির কাজের সমন্বয়হীনতা বেড়েই চলেছে। এ বিষয়ে ইসির উপসচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা জানান, তাড়াহুড়ো করে তফসিল দিতে গিয়ে বেশ কিছু কাজে ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়েছে। এখন তা সারিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। প্রথম কয়েক দিন ভুলসহ সিডি ও মনোনয়নপত্র বিতরণ হলেও পরে তাদের কাছ থেকে ফেরত নেওয়া হয়েছে। আগামী পর্বে এসব ত্রুটি আর থাকবে না। সময়মতো প্রয়োজনী কাগজপত্র-নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছে যাবে। এবার সারা দেশে ছয় ধাপে ইউপি ভোট হচ্ছে। ইতিমধ্যে ছয়টি ভোটের দিনও জানিয়ে দিয়েছে ইসি। দ্বিতীয় ধাপের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৬৮৪ ইউপিতে ২ মার্চ পর্যন্ত মনোনয়ন জমার শেষ দিন, ভোট ৩১ মার্চ। এরপর যথাক্রমে চার ধাপে ২৩ এপ্রিল ৭১১টি, ৭ মে ৭২৮টি, ২৮ মে ৭১৪টি এবং ৪ জুন ৬৬০টি ইউপিতে ভোট হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর