সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিভিন্ন দেশে মাতৃভাষা দিবস পালিত

প্রতিদিন ডেস্ক

বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গতকাল অমর একুশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

কুয়েত সিটি : কুয়েত প্রবাসীরা দেশটির বাংলাদেশ দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু করেন। পরে দূতাবাস হলে মহান ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন শেষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পাঠানো বাণী পাঠ করা হয়। এ ছাড়া এস এম মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্ব আলোচনা সভায় প্রবাসীরা তাদের বক্তব্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রেক্ষাপট ও বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরেন। কবিতা আবৃত্তি করেন আবদুল হাই, রফিকুল ইসলাম ভুলু ও রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ এহছানুল হক খোকন। নয়াদিল্লি : দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিবসটি পালন করেছে। এ উপলক্ষে হাইকমিশন প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। সন্ধ্যায় হাইকমিশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ডেনমার্ক : ডেনমার্কে বাংলাদেশ মিশনে দিবসটি উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে  কোপেনহেগেনের ‘এশিয়া হাউসে’ এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয় এবং শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নিউইয়র্ক : নিউইয়র্কে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সামনে ব্যাপক আয়োজনে অমর একুশে পালন করা হয়েছে। প্রথম প্রহরে প্রবাসীসহ বিভিন্ন দেশের ভাষাপ্রেমীরা ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ভাস্কর্য’র পাশে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ-শিশু-কিশোরসহ নানা ভাষা ও বর্ণের মানুষের উপস্থিতিতে স্থানীয় সময় দুপুরে (বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ১ মিনিটে) এই শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের ঘটনা ছিল অনেকের কাছেই বিস্ময়। ২০ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় বেলা ১টা ১ মিনিটে উদীচীর শিল্পীদের ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ সংগীতের মধ্য দিয়ে শহীদবেদিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের সময় উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন (বাংলাদেশের পক্ষে), মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উপদেষ্টা ড. নীনা আহমেদ (যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে), নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের পক্ষে ইমিগ্রেশনবিষয়ক কমিশনার নিশা আগরওয়ালসহ ইউনেস্কো, ইউএনডিপি, নিউইয়র্ক সিটি ও অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধি, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান এবং বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। কমিউনিটির সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী-রাজনৈতিক সংগঠনও শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করে। এদিকে অমর একুশ উদযাপনের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ডাক বিভাগ (ইউএসপিএস) ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় জ্যাকসন হাইটস পোস্ট অফিসে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মারক সিলমোহর’ উন্মোচন করবে। এ ছাড়া আগামী ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি জ্যাকসন হাইটসে পাবলিক স্কুল-’৬৯ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে একুশের গ্রন্থমেলা। প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তামিল ভাষাভাষীদের মিলনমেলা : বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের বাসিন্দাদের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রাজধানীর গুলশানে একটি রেস্টুরেন্টে এ আয়োজন করা হয়। ‘বঙ্গদেশ তামিল সংঘ-ঢাকা তামিলিয়ান’ বছরের প্রথমে ‘নবান্নের আদলে’ এর আয়োজন করে থাকে। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি সম্পদকুমারের সভাপতিত্বে সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি রমাকান্ত গুপ্তা, রাজেশ উইকে, জিনা উইকা, বিজয় সালভেরাজ। দুই বাংলার মিলনমেলা : ভাষার টানে দুই বাংলার হাজার হাজার মানুষ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় বেনাপোল চেকপোস্ট নো-ম্যান্স-ল্যান্ড এলাকায়। ভৌগোলিক সীমারেখা ভুলে কেবল ভাষার টানে গতকাল সকালে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া উপেক্ষা করে দলে দলে মানুষ যোগ দেন একুশের মিলনমেলায়।

নো-ম্যান্স-ল্যান্ডে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে সকাল ৯টায় প্রথম ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। মিলনমেলার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেনাপোল পৌরসভা মেয়র আশরাফুল আলম লিটন। বেনাপোল ও বনগাঁ পৌরসভা যৌথভাবে এ মিলনমেলা আয়োজন করে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে যৌথভাবে দুই দেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রতিবারের মতো এবারও দিবসটি পালন করল দুই বাংলার মানুষ। নানা রঙের ফেস্টুন, ব্যানার, প্লাকার্ড আর ফুল দিয়ে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় নো-ম্যান্স-ল্যান্ড এলাকা। দুই দেশের মানুষ একে অন্যকে বুকে জড়িয়ে ধরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে মিষ্টি বিতরণ করে বরণ করে নেওয়া হয়। ফুলের মালা ও জাতীয় পতাকা বিনিময় করেন আবেগপ্রবণ অনেক মানুষ। ভাষা দিবসের মিলনমেলায় বিজিবি-বিএসএফকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। এরপর দুই দেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে হাজার হাজার ভাষাপ্রেমী মানুষ দিবসটি উদ্যাপন করে যৌথভাবে। শিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী, ফকির আলমগীর একুশের সংগীত পরিবেশন  করেন। হিলিতে মানুষের ঢল : ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে দুই বাংলার হাজারো মানুষের পদচারণে হিলি সীমান্তে মিলনমেলায় পরিণত হয়। অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ। এ সময় ভাষার টানে ছুটে আসা দুই বাংলার আবেগপ্রবণ মানুষ মিলেমিশে একাকার হয়ে যান সীমান্তের শূন্য আঙিনায়। হাকিমপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে ভারতের উজ্জীবন  সোসাইটির  নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে সীমান্তের ভারত অংশে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে উজ্জীবনের নেতৃবৃন্দ হাকিমপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শেষে দুই বাংলার শিল্পীরা সীমান্তের দুই আঙিনায় একক ও দলীয় সংগীত, নৃত্য ও কবিতা পরিবেশন করেন। এ সময় সেখানে বিজিবি হিলি সিপি ক্যাম্প কমান্ডার সুবেদার আতাহার আলী ও বিএসএফ ১৯৯ পতিরাম ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক আলকেস সিং উপস্থিত ছিলেন।

সীমান্তহাটে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন : ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কমলাসাগর ও বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তারাপুর সীমান্তে এই প্রথমবারের মতো গতকাল যৌথভাবে উদ্যাপন করা হলো মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দিবসটি উদ্যাপনকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় কসবা সীমান্তহাট। সীমান্তহাট পরিচালনা পর্ষদের যৌথ উদ্যোগে হাটে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে দুপুর ১২টায় দুই দেশের কর্মকর্তারা ভাষাশহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। ত্রিপুরা রাজ্যের সিপাহীজলা জেলার শাসক (ডিএম) প্রদীপকুমার চক্রবর্ত্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সরাইল রিজিওন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ফজলে আহাম্মেদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বেগম লুত্ফুন নাহার, ত্রিপুরার সিপাহীজলা জেলার অতিরিক্ত জেলা শাসক দিলীপকুমার চাকমা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এ মাসুদ, কসবা উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. আনিছুল হক ভূইয়া, বিজিবি ১২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ ফরহাদ উজ জামান, ভারতের আগরতলার কবি ও লেখক অধ্যাপক রামেশ্বর ভট্টাচার্য। বর্ণমেলায়  বর্ণ শেখা : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও অমর একুশে উপলক্ষে ঢাকার ধানমন্ডির সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে আয়োজন করা হয় বর্ণমেলার। এতে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণপ্রদর্শনী, বর্ণদোলা, বর্ণমঞ্চ, বর্ণপোশাক, বর্ণপ্রযুক্তি, বর্ণাঙ্কন, বর্ণলিখন, টি-শার্টে বর্ণ, মজার পুতুল, বর্ণপণ্ডিত স্টলসহ নানা আকর্ষণ। এর মাধ্যমে ছোট ছোট শিশুরা দিনভর শিখেছে বিভিন্ন বর্ণের নাম। চিনেছে বর্ণ। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বাবা-মায়ের হাত ধরে এ মেলায় আসেন ছোট ছোট শিশুরা। দিনভর আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠেন সোনামণিরা। এতে অতিথি ছিলেন এসএম গেমসের স্বর্ণজয়ী মাবিয়া আক্তার সীমান্ত ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী জয়া আহসান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর