সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

যুবলীগ ক্যাডারদের বলি আরেক বিশ্বজিত্

প্রতিবাদের ঝড় সুনামগঞ্জে

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

দরজিদোকানি বিশ্বজিেক প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে খুনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল সুনামগঞ্জের আরেক বিশ্বজিতের ভাগ্যে। সেই ঘটনার হোতা ছাত্রলীগ থাকলেও এবারের ঘটনাটি ঘটিয়েছে যুবলীগ ক্যাডাররা। দরজিদোকানি বিশ্বজিতের নৃশংস খুনের ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সারা দেশে। একইভাবে এ ঘটনার পর প্রতিবাদের ঝড় বইছে শান্তির শহর সুনামগঞ্জে। দলিত সম্প্রদায়ের মাত্র ২৪ বছর বয়সী বিশ্বজিত্ চৌহানকে শুক্রবার বিকালে শহরের কাজির পয়েন্ট এলাকায় জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত একদল ক্যাডার। তাদের মধ্যে তানজিম তিমু জেলা যুবলীগ আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। মামলার এজাহারে ঘটনার মূল হোতা হিসেবে উঠে এসেছে তার নাম। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজিেক খুনের মিশনে অংশ নেয় ছয় ক্যাডার। উপর্যুপরি রামদার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে তাকে রাস্তায় ফেলে চলে যায় সন্ত্রাসীরা। স্থানীয় বাসিন্দারা গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠান। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে সিলেটে পাঠানো হয়। রাত পৌনে ১০টায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। সাম্প্রতিক সময়ে শান্তির শহর সুনামগঞ্জে এমন নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটেনি। এ কারণে দলিত শ্রেণির এই বিশ্বজিতের খুনের ঘটনাটি সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে। ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদের তুষচাপা আগুন। শনিবার বিকালে শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে তাত্ক্ষণিক সর্বদলীয় প্রতিবাদ সভার ডাক দেয় ‘সন্ত্রাস নির্মূল কমিটি’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন। এতে বিপুলসংখ্যাক প্রতিবাদী মানুষ অংশ নেন। প্রতিবাদ সভায় একাত্ম ঘোষণা করেন সদর আসনের এমপি পীর ফজলুর রহমান, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আয়ুব বখত জগলুল, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নূরুল হুদা মুকুট প্রমুখ। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয় ওই প্রতিবাদ সভা থেকে। পরিবারের অভিযোগ, প্রকাশ্যে দিবালোকে খুনের ঘটনাটি ঘটলেও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে মামলা নিতে গড়িমসি করে পুলিশ। পরিস্থিতি বিবেচনায় সুনামগঞ্জ সদর থানার পুলিশ যুবলীগ ক্যাডার তানজিম তিমু, রিপন, কালা, শামসুজ্জামান, এনাম ও জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শিহাবের বিরুদ্ধে শনিবার রাতে মামলা নেয়। ছয়জনের বিরুদ্ধে এ হত্যা মামলাটি করেন নিহতের বাবা খোকা চৌহান। পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, বিশ্বজিত্ চৌহানের হাছান নগরের বাড়ির পাশের ভূমি নিয়ে একই এলাকার যুবলীগ ক্যাডার তানজিম তিমু, কালা মিয়া, রিপন প্রমুখের সঙ্গে বিরোধ ছিল। এ নিয়ে নিহতের বাবা খোকা চৌহান, চাচা ভাই সিঙ্গারী চৌহান ও বিশ্বজিত্ চৌহানের ওপর কয়েক দফা হামলা চালায় তারা। পরিবারের অভিযোগ, বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল মহলকে জানানো হলেও রাজনীতির প্রভাব খাটিয়ে পার পেয়ে যায় তারা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার বিকালে বিশ্বজিত্ চৌহান শহরের কাজির পয়েন্টের দিকে যাওয়ার সময় তিমু ও তার সঙ্গীরা তার পথ আটকায়। হামলাকারীদের একজন বিশ্বজিেক ধরে রাখে, বাকিরা তাকে রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে রাস্তায় ফেলে রেখে তিনটি মোটরসাইকেলে করে সদর্পে এলাকা ছেড়ে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। চিত্কার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে বিশ্বজিেক উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে  পাঠান। এদিকে শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় শহরের হাছান নগরের বাসায় বিশ্বজিত্ চৌহানের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। এ সময় স্বজনদের পাশাপাশি কান্নায় ভেঙে পড়েন শত শত মানুষ। হূদয়বিদারক এক দৃশ্যের অবতারণা হয় সেখানে। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী শ্মশানে না পুড়িয়ে তার মৃহদেহ বাড়ির উঠানে সমাহিত করা হয়। উপস্থিত জনতা এ ঘটনায় জড়িতদের দলীয় পরিচয়কে বড় করে না দেখে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

শান্তির শহরে এ-জাতীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেই লক্ষ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান, বিশ্বজিতের বাবার করা মামলার আসামি শামসুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর