শুক্রবার, ৪ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

নেতার ছড়াছড়ি, তবুও অভিভাবকহীন ছাত্রদল

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্ধশত মামলায় জামিনে মুক্ত হওয়ার পরও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান এখন আত্মগোপনে। ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির নেতাদের নিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতে যাওয়া ছাড়া খুব একটা প্রকাশ্যে দেখা যায় না তাকে। সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের অবস্থাও এক। হুলিয়া নিয়ে তিনিও রয়েছেন আড়ালে। শীর্ষ পাঁচ নেতার কাউকেই দেখা যায় না প্রকাশ্যে। না তারা নয়াপল্টনে, না বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। অনেকটা অভিভাবকহীন নেতা-কর্মীরা। বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের যোগাযোগ সেই অর্থে নেই বললেই চলে। নবগঠিত ৭৩৭ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সব বলয়কে খুশি রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কেউ খুশি নয়। সৃষ্টি করা হয়েছে নতুন নতুন পদ। তবু নিষ্ক্রিয় ছাত্রদল। পদ পেয়েও ছাত্রদলে বিরাজ করছে অসন্তোষ। নতুন কমিটিতে নেই প্রাণচাঞ্চল্য। হতাশা বাড়ছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পদবঞ্চিত গুটিকয় নেতার পক্ষে বিক্ষুব্ধরা দু-এক দিন উত্তাপ ছড়ান। তবে এরপর সব দিক থেকেই ছাত্রদল নিরুত্তাপ। পদ পাওয়া নেতারাও যান না কার্যালয়ে। অবশ্য ছাত্রদলের সিনিয়র নেতারা বলছেন, ‘সামনে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল। তাই মূল দলের কাউন্সিলের আগে বড় কোনো কর্মসূচি দিয়ে ঝুঁকি নিতে চায় না ছাত্রদল। বিএনপির হাইকমান্ড থেকেই এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কাউন্সিলের আগে বড় কোনো শোডাউন থেকেও বিরত থাকবে ছাত্রদল।’ এ প্রসঙ্গে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার পর থেকে ছাত্রদলে প্রাণ ফিরে এসেছে। নেতা-কর্মীরা পার্টি অফিসে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির নেতা-কর্মীরাও যাচ্ছেন ক্যাম্পাসে। কিছু নেতার বিরুদ্ধে মামলা থাকায় তারা হয়তো সব সময় প্রকাশ্য হতে পারছেন না। এর পরও সব কর্মসূচিতেই আমরা অংশ নিচ্ছি।’ জানা যায়, জেলা, মহানগর কিংবা মফস্বলের কলেজগুলোর সঙ্গেও কেন্দ্রের কোনো যোগাযোগ নেই। বছরের পর বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা ও মহানগর কমিটি। সব মিলিয়ে ছাত্রদলের সাংগঠনিক ১২০টির মতো কমিটি রয়েছে। এর মধ্যে মেয়াদ আছে মাত্র ২০টির। বাকি ১০০ কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। জেলা পর্যায়ে এমন কমিটিও আছে, যা যুগের পর যুগ অপূর্ণাঙ্গ। চল্লিশোর্ধ্ব বয়স্কদের নেতৃত্বেই চলছে অনেক জেলা কমিটি। এ নিয়ে কেন্দ্রের নেই কোনো মনিটর। কারও কাছে কাউকে জবাবদিহিও করতে হয় না। ৩৮ মামলার হুলিয়া নিয়ে আত্মপোপনে থাকা সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বলেন, ‘প্রকাশ্যে যাওয়ার তো কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামেও সারা দেশের নেতা-কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।’ জেলা ও মহানগর কমিটিগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘শিগগিরই দেখা যাবে দৃশ্যমান অগ্রগতি।’ বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর মুক্তি দাবিতে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি আজিজ সুপার মার্কেটের বিপরীত দিক থেকে কাঁটাবন যাওয়ার পরপরই শেষ হয়ে যায়। ব্যানার ধরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি মেহেদী হাসান তালুকদারকে দেখা গেলেও মিছিলে তাকে আর দেখা যায়নি। একই দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখাও একটি মিছিল বের করে। নতুন কমিটির শুধু গুটিকয় নেতাকেই দেখা যায় মিছিলে। কলেজ শাখাগুলোতে কমবেশি মিছিল হয়। তুলনামূলক নিষ্ক্রিয় ছিল ঢাকা মহানগরের চার শাখাও। এ নিয়ে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বইছে সমালোচনার ঝড়। ছাত্রদলের একাধিক নেতা জানান, নতুন কমিটিতে পদের ছড়াছড়ি থাকলেও কিছুটা সমন্বয়হীনতা রয়েছে। বিস্তৃত কমিটির কারণেই সিনিয়র-জুনিয়র নেতাদের সমন্বয় করা পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে কমিটির ভিতরও কমবেশি অসন্তোষ রয়েছে। এ ছাড়া সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র সহ-সভাপতি ছাড়া শীর্ষস্থানীয় নেতাদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সংগঠনের ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে তারা ছাত্রদলের হাল ধরতে পারবেন কি না, তা নিয়েও বিরাজ করছে সংশয়। ছাত্রদলের সাবেক একাধিক নেতা জানান, আগে ছাত্রদলের কমিটি হলে কর্মিসভা হতো। এখন আর তা হয় না। সবই চাপিয়ে দেওয়া কমিটি। যাকে ‘পকেট’ কমিটিই বলা চলে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয়সহ ১৯টি শাখা কমিটি গঠন করা হয়েছে। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটি ছাড়া কোনো কমিটিরই প্রতিনিধি সভা হয়নি। কমিটি গঠন নিয়ে ছিল না দৃশ্যমান কোনো তত্পরতা। সারা দেশের জেলা ও মহানগর কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক কমিটিরও কেন্দ্র থেকে শুধু নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। যার ক্ষমতা বেশি, লবিং-গ্রুপিং করতে পারেন, তিনিই পদ বাগিয়ে নেন। এ প্রসঙ্গে ছাত্রদলের প্রথম আহ্বায়ক কাজী আসাদুজ্জামান আসাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের সময় ছাত্রদলের কমিটিগুলোতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন করা হতো। এখন পরিবেশ-পরিস্থিতি পাল্টেছে। কোনো সভাও করা যায় না পুলিশি ভয়ে। এ ছাড়া কমবেশি লবিং-গ্রুপিং তো আছেই।’ ছাত্ররাজনীতির সেই আগের পরিবেশ নেই বলে জানান তিনি। ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদলের ইতিহাসে ৭৩৭ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিশাল কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কাউকে বাদ দিয়ে নয়, সবাইকে সন্তুষ্ট করার নীতি গ্রহণ করে ছাত্রদল।

একই সঙ্গে ঘোষণা করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও হলসমূহ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম, ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, সরকারি বাংলা কলেজ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা জেলার কমিটি। কেন্দ্রীয় কমিটির আকার আরও বড় হতে পারে বলে জানিয়েছে সংগঠনটির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর