শুক্রবার, ৪ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

১৫৯ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র

প্রতিদিন ডেস্ক

দালালকে মোটা অংকের অর্থ প্রদান করে বিভিন্ন দেশ ঘুরে মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনিভাবে প্রবেশের সময় আটক ১৫৯ বাংলাদেশিকে বহিষ্কারের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়। খবর এনআরবি নিউজের। অপরদিকে, গত এক বছরে কমপক্ষে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা ২০ ব্লগার-লেখক-প্রকাশক যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে। তারাও ধর্মীয় জঙ্গিদের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে এসাইলামের আবেদনে উল্লেখ করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, টেক্সাস, নিউইয়র্ক, পেনসিলভেনিয়া, মেট্র ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন এ ব্লগাররা।

নিউইয়র্কে ‘একুশে গ্রন্থমেলা’য় লেখক-ব্লগার অভিজিত রায় হত্যাকাণ্ডের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক মুক্ত আলোচনায় প্রবাসী কবি ও লেখক ফকির ইলিয়াস তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন, ‘ব্লগার অভিজিত হত্যাকাণ্ডের বছর পেরিয়ে গেলেও তার ঘাতকরা গ্রেফতার হয়নি। এর ফলে অন্য ব্লগার-লেখকরা নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কায় দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন। সরকার মুক্তবুদ্ধি চর্চায় নিয়োজিতদের হুমকি-ধমকি প্রদানকারীদের নির্মূলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে প্রত্যাশিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।’ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মুক্তমনা লেখকদের যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রদানের জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্টে ‘ইউএস কমিশন ফর ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম’-এর পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। যারাই ব্লগার-প্রকাশক বলে প্রতীয়মান হবে তাদের এসাইলাম মঞ্জুরিতে বিলম্ব ঘটবে না বলে মনে করছেন ইমিগ্রেশন বিষয়ক অ্যাটর্নিরা।

 

এদিকে, মেক্সিকো হয়ে যে সব বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার সময় সীমান্তরক্ষীদের হাতে ধরা পড়েছে তার মধ্যে ১৬৯ জনকে খুব দ্রুত বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতে চায় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট। কারণ, এদের বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য হয়নি যে, জীবন বিপন্ন হওয়ায় তারা দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। উল্লেখ্য, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, আলাবামা, লুইঝিয়ানা, পেনসিলভেনিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া ও নিউজার্সিতে ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে রয়েছেন বেশ কয়েক বাংলাদেশি। অনেকেই জামিনে মুক্তিলাভও করেছেন। ‘ক্ষমতাসীন সরকারের দমন-পীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে নিরাপদ পরিবেশে জীবনযাপনের অভিপ্রায়ে বাংলাদেশ ছাড়তে তারা বাধ্য হয়েছেন এবং বাংলাদেশে ফেরত পাঠালে তাদের জীবন বিপন্ন’ বলেও ইমিগ্রেশন কোর্টকে জানিয়েছেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন।

 

অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, রাজনৈতিক আশ্রয় মঞ্জুরির সমর্থনে যে ধরনের জোরালো যুক্তি এবং ডকুমেন্ট থাকা প্রয়োজন, তা কারও কাছেই নেই। তারা সেগুলো সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। অপরদিকে গত বছরের জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি এবং জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের  হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট। এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে মক্কেলদের রক্ষায় অ্যাটর্নিরা আদালতে বিস্তারিত বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। নিউইয়র্কের প্রখ্যাত ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার তার এক মক্কেলের জন্য আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন এবং সেই ডকুমেন্ট অনেকের সহায়ক হচ্ছে বলে জানা গেছে।

জাতীয়তা যাচাইয়ের জন্য ১৫৯ জনের একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমেরিকা উইং। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পাঠানো তালিকা পর্যালোচনায় দেখা যায়, আটককৃতদের বয়স ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। সবার নামের পাশাপাশি জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। কারও আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র ও অন্যান্য ট্রাভেল ডকুমেন্টের নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এদের মধ্যে সিলেট, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের অধিবাসীই বেশি।

সর্বশেষ খবর