শুক্রবার, ৪ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা
প্রস্তাব যাচ্ছে কেবিনেটে

যুবকে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের কাছ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত কোম্পানি যুব কর্মসংস্থান সোসাইটির (যুবক) স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি হেফাজতে নিতে পারবে সরকার। বুধবার বিকালে আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত মতামত (ভেটিং) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

মতামতে বলা হয়েছে, প্রচলিত আইন অনুযায়ী অভিযুক্ত কোম্পানিটিতে প্রশাসক/রিসিভার নিয়োগ অথবা সরকার যেরকম মনে করে সে অনুযায়ী এর স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তির ওপর কর্তৃত্ব জারি করতে পারবে।

ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে গত বছরের মার্চে যুবকে প্রশাসক নিয়োগ ও প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত এমএলএম কোম্পানিগুলোকে (ডেসটিনি, ইউনি পে টু) শাস্তি দিতে একটি বিচারিক কমিশন গঠনের প্রস্তাব ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত কমিশনের নেতৃত্বে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বা সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়। এরপর দীর্ঘ প্রায় এক বছর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বুধবার প্রশাসক নিয়োগে সম্মতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পেয়েছি। এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। খুব শিগগিরই প্রশাসক নিয়োগের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব আবদুল মান্নান জানান, সরকারের রুলস অব বিজনেস ৪ এর ২ ধারা অনুযায়ী যে কোনো জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়গুলো মন্ত্রিসভায় পাঠাতে হয়। সে অনুযায়ী যুবকে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টিও মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। একই সঙ্গে যুবকের মতো প্রতারক কোম্পানিগুলোকে শাস্তির আওতায় আনতে একটি বিচারিক কমিশন গঠনের প্রস্তাবও মন্ত্রিসভায় যাবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। সরকার গঠিত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতারণার মাধ্যমে ২ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে যুবক। বিপুল পরিমাণ ওই অর্থ নেওয়া হয় ৩ লাখ ৩ হাজার ৭০০ গ্রাহকের কাছ থেকে। এ অর্থ গ্রাহককে ফেরত দিতে ও সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য ২০১৩ সালে যুবকে প্রশাসক নিয়োগের সুপারিশ করেছিল সরকার গঠিত যুবক কমিশন। ১৯৯৪ সালে সদস্যদের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের মধ্য দিয়ে যুব কর্মসংস্থান সোসাইটির (যুবক) আত্মপ্রকাশ। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি সোসাইটিজ অ্যাক্টের আওতায় নিবন্ধন নেয়। এরপর জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে নিবন্ধন নিয়ে প্রায় ২০ ধরনের ব্যবসা শুরু করে। ২০০৬ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পৃথক তদন্তে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ সংগ্রহের ঘটনা বেরিয়ে আসে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে ২০১০ সালে যুবকের মাধ্যমে প্রতারিত গ্রাহকের অর্থের পরিমাণ জানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন আহমেদকে চেয়ারম্যান করে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে। ওই তদন্ত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ২০১১ সালের মে মাসে সাবেক যুগ্ম-সচিব রফিকুল ইসলামকে চেয়ারম্যান করে গঠন করা হয় যুবক বিষয়ক স্থায়ী কমিশন। এই কমিশনের দায়িত্ব ছিল যুবকের সম্পদ আয়ত্তে নিয়ে গ্রাহকের পাওনা পরিশোধের। কিন্তু আইনি জটিলতায় সেটি করতে সমর্থ হয়নি কমিশন।     

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর