রবিবার, ৬ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রচারণায় পথে পথে বাধা হামলা সংঘর্ষ গুলি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রচারণায় পথে পথে বাধা হামলা সংঘর্ষ গুলি

প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জমজমাট প্রচার-প্রচারণা চলছে। হাটবাজার, চায়ের দোকান, সর্বত্রই নির্বাচনী উত্তাপ। প্রার্থীরা ভোট প্রার্থনায় ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। তবে নির্বাচনী প্রচারণায় পথে পথে বাধার অভিযোগ উঠছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধেই অভিযোগের তীর। এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন এলাকায় হামলা-সংঘর্ষ, ককটেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুর অব্যাহত রয়েছে। চলছে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনাও।

প্রথম ধাপের এ প্রচারণায় বিএনপিসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সরকার সমর্থক কর্মী-সমর্থকদের মাধ্যমে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপি ও অন্যান্য দলের প্রার্থীরা ক্ষমতাসীনদের দাপটে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না বলে রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগও দিচ্ছেন। এ ছাড়া নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে গতকাল ক্ষমতাসীন দলের এমপি ও পৌরসভার এক মেয়র নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

প্রচারণায় এমপি রিমন : বরগুনা-২ (পাথরঘাটা-বামনা-বেতাগী) আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন পৌরসভা নির্বাচনের মতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। গতকাল বেতাগী উপজেলার ২ নম্বর বেতাগী ইউনিয়নের কিসমত ভোলানাথপুর ও কেওড়াবুনিয়া গ্রামে নতুন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের উদ্বোধনী সভায় তিনি অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে ভোট চান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বেতাগী পৌরসভার মেয়র এ বি এম গোলাম কবির এবং ওই ইউনিয়নের দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী নজরুল ইসলাম। বক্তৃতার সময় রিমন বলেন, উন্নয়নের জন্য নৌকায় ভোট দিন। এ বিষয়ে বেতাগী সদর ও বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা স্বপন কুমার সাহা জানান, একই মঞ্চে প্রার্থী, সংসদ সদস্য ও মেয়রের উপস্থিতির বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চলছে হামলা-সংঘর্ষ : বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কবাই ইউনিয়ন পরিষদে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলাম সবুজের গণসংযোগে হামলা চালিয়ে প্রার্থীসহ কর্মীদের মারধর এবং তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও তার কর্মীদের বিরুদ্ধে। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্থানীয় পেয়ারপুর বাজারে আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তার কর্মীদের বিরুেদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। হামলায় ৯ জন আহত হয়েছেন। আহত চেয়ারম্যান প্রার্থী সবুজ অভিযোগ করেন, সকালে পেয়ারপুর বাজারে গণসংযোগ করার সময় এ হামলা হয়। তিনি বলেন, এ সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীসহ ৩০-৩৫ জন নেতা-কর্মী অতর্কিতে তাদের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় রিটার্নিং অফিসারের কাছে তিনি লিখিত অভিযোগ দেবেন বলে জানান। তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জহিরুল হক বাদল তালুকদার বলেন, তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তার সুমান ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে।

এদিকে বগুড়ার শিবগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যান দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় পুলিশ চারজনকে আটক করেছে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তারা দুই রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়েছে। গতকাল শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে বুড়িগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল গফুর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আলতাফ হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষের চারজনকে আটক করেছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ওহিদুল ইসলাম চৌধুরী শরীফ নামে বিএনপি সমর্থিত এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার রাতে সীতাকুণ্ডের বারইয়াঢালা ইউনিয়নের বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। ওহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে জানান, রাতে বেশ কয়েকজন সংঘবদ্ধ যুবক তার বাসা লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ এবং ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় লোকজন জড়ো হলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। 

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার হলতা গুলিশাখালী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ প্রার্থী রিয়াজুল আলম ঝনোর সমর্থকদের হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হারুন অর রশিদের ১৭ জন কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে ইউনিয়নের কবুতরখালী গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হারুন অর রশিদ জানান, তার সমর্থকরা লিফলেট নিয়ে কবুতরখালী গ্রামে গেলে আওয়ামী লীগের লোকজন হামলা চালিয়েছে। তবে রিয়াজুল আলম ঝনো জানান, হারুনের কর্মীদের সঙ্গে আমার কর্মীদের বাক-বিতণ্ডার একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারপিঠের ঘটনা ঘটে। এতে আমার কয়েকজন কর্মী আহত হন। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে স্থানীয় এমপির ভাই ও ছেলেসহ তাদের ক্যাডারদের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থিতা যাচাই-বাছাই কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাদের বাধার মুখে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা দীর্ঘ সময় ধরে প্রার্থিতা যাচাই-বাছাই কক্ষে ঢুকতে পারেননি। পরে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে ও লাঠিচার্জ করে দুপুর ১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে প্রার্থী ও তাদের প্রতিনিধিরা যাচাই-বাছাই কক্ষে ঢুকতে পারেন।

সর্বশেষ খবর