রবিবার, ৬ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

চিকিৎসাকদের ধর্মঘট খুলনায়, রোগীরা চরম ভোগান্তিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

খুলনা জেলা ও মহানগরের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ৪৮ ঘণ্টার চিকিৎসাক ধর্মঘট শুরু হয়েছে। তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাক আবদুল্লাহিল মামুনকে মারধরের অভিযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এফ এম অহিদুজ্জামানকে গ্রেফতারের দাবিতে গতকাল সকাল থেকে এ ধর্মঘট শুরু হয়।  চিকিৎসাকদের ধর্মঘটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। দূর-দূরান্ত, এমনকি জেলার বাইরে থেকে এসে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে রোগীদের।

এর আগে একই দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ধর্মঘট পালিত হয়। মধ্যে এক দিন বিরতির পর গতকাল ভোর ৬টা থেকে ফের শুরু হয়েছে ধর্মঘট। টানা কর্মসূচি চলবে আগামীকাল ভোর ৬টা পর্যন্ত। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনা শাখা, প্রাইভেট মেডিকেল প্র্যাকটিশনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমপিএ) ও প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিসিডিওএ) একযোগে এ কর্মসূচি পালন করছে। এদিকে খুলনা মহানগর ও জেলায় চিকিৎসাক ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে চিকিৎসাসেবা। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা। সরেজমিন সকাল থেকে অসংখ্য রোগীকে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ফিরতে দেখা গেছে। সাতক্ষীরা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা কিডনি রোগী গৃহবধূ ফিরোজা ইয়াসমীন চিকিৎসাকের ব্যবস্থাপত্র নিতে হন্যে হয়ে ঘুরেছেন। নির্দেশনা অনুযায়ী তিন দিন ওষুধ খাওয়ার পর বৃহস্পতিবার আইভিইউ পরীক্ষা করেছেন। কিন্তু চিকিৎসাক ধর্মঘটের কারণে পরীক্ষার রিপোর্ট এখনো হাতে পাননি। ফলে ব্যবস্থাপত্র নিতে না পেরে কিডনির ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন তিনি। একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে চিকিৎসাকরা ধর্মঘটে গিয়ে রোগীদের প্রতি অমানবিক আচরণ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন চিকিৎসা নিতে আসা ব্যক্তিরা। তারা অভিযোগ করে বলেন, নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তির অপরাধের জন্য সারা জেলার সব চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র বন্ধ থাকতে পারে না। এটি রোগীদের প্রতি চিকিৎসাকদের অমানবিকতা ছাড়া কিছুই নয়। তারা বলেন, দোষী ব্যক্তির শাস্তি হোক তা তারা চান। তবে এভাবে চিকিৎসাকদের সবকিছু বন্ধ করে বসে থাকা কোনোভাবেই তারা চান না। দ্রুত এ সমস্যার সমাধানে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। এদিকে বিএমএ খুলনা জেলা সভাপতি ডা. বাহারুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তেরখাদা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত অবস্থায় চিকিৎসাককে মারধরে জড়িতদের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে কিন্তু পুলিশ ধরছে না। বরং তারা এখন ফোনে হুমকি দিচ্ছে। বাধ্য হয়েই চিকিৎসাকরা ধর্মঘট পালন করছেন। পুলিশ যখনই আসামিদের গ্রেফতার করবে, তখনই ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হবে। প্রসঙ্গত, ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে তেরখাদা সদর ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এফ এম অহিদুজ্জামান ও তার সহযোগীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঢুকে কর্মরত অবস্থায় ডা. আবদুুল্লাহিল মামুনকে পিটিয়ে আহত করেন। এ ঘটনায় চেয়ারম্যানকে আসামি করে মামলা করলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

আ.লীগ নেতার বহিষ্কার দাবি : চিকিৎসাককে মারধরের অভিযোগে খুলনার তেরখাদা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এস এম অহিদুজ্জামানকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন নিজ দলের নেতা-কর্মীরা। গতকাল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বহিষ্কারের এ দাবি জানান। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলামসহ দলীয় নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে এস এম অহিদুজ্জামান ও তার সহযোগীরা তেরখাদা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আবদুল্লাহিল মামুনকে মারধর করায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ বিষয়ে তেরখাদা থানায় মামলা হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। এর আগে সরকারি জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে বাধা দেওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার তবিবুর রহমানকে লাঞ্ছিত করেছিলেন এস এম অহিদুজ্জামানের ভাই জাহিদুজ্জামান।

সর্বশেষ খবর