বুধবার, ৯ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

চিড়িয়াখানায় নিঃসঙ্গতায় কাটে ওদের দিন

মোস্তফা কাজল

চিড়িয়াখানায় নিঃসঙ্গতায় কাটে ওদের দিন

জাতীয় চিড়িয়াখানায় নিঃসঙ্গতায় ভুগছে বিরল ও বিপন্ন ২৬ প্রজাতির প্রাণী। বর্তমানে ১৪০ প্রজাতির ২ হাজার ৬৪৪ ধরনের পশু-পাখি রয়েছে এ চিড়িয়াখানায়। ২৬ প্রজাতির পশু-পাখি বিপরীত লিঙ্গের অনুপস্থিতিতে একা বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। বছরের পর বছর বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গীর অনুপস্থিতিতে এসব প্রাণীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিপরীত লিঙ্গবিহীন এসব পশু-পাখির মধ্যে কোনোটি পুরুষ আবার কোনোটি নারী সঙ্গীহীন অবস্থায় বেড়ে উঠছে। সঙ্গীহীন প্রাণীগুলোর সঙ্গীর অভাব পূরণে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর থেকে নতুন পশু-পাখি কেনার জন্য বেশ কয়েকবার প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। গতকাল রাজধানীর জাতীয় চিড়িয়াখানা ঘুরে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। চিড়িয়াখানায় সঙ্গীহীন ২৬ প্রজাতির মধ্যে অন্যতম হলো— আফ্রিকান গণ্ডার একটি (স্ত্রী), এশিয়ান হাতি একটি (স্ত্রী), শম্বর হরিণ চারটি (স্ত্রী), চিত্রা হায়েনা একটি (স্ত্রী), মেছো বিড়াল একটি (স্ত্রী), ভল্লুক বিড়াল দুটি (স্ত্রী), উল্লুক দুটি (স্ত্রী), কেশোয়ারি একটি (স্ত্রী), ভোঁদড় একটি (স্ত্রী), গোখরা সাপ দুটি (স্ত্রী), দাঁড়াশ সাপ একটি (স্ত্রী), হলুদ টিয়া একটি (স্ত্রী), শিম্পাঞ্জি একটি (পুরুষ), সাদা পেলিক্যান একটি (পুরুষ) ও ডেমসির সারস একটি (পুরুষ)। উল্লেখ্য, এর মধ্যে পুরুষ শিম্পাঞ্জিটি দীর্ঘ ১৫ বছর জাতীয় চিড়িয়াখানায় নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করার পর গত জুনে মারা যায়। এ ছাড়া জাতীয় চিড়িয়াখানায় নিঃসঙ্গ জীবনযাপনকারী প্রাণীগুলোর জন্য নতুন সঙ্গী আনা এবং চিড়িয়াখানায় বর্তমানে যেসব পশু-পাখি নেই কিংবা থাকলেও তা বিলুপ্তির পথে— এমন ৩৯ প্রজাতির ৩১০টি পশু-পাখি কেনার জন্য ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্প সম্পর্কে বলা হয়েছে, চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীর বিনোদন, প্রাণিবৈচিত্র্য রক্ষা ও সংরক্ষণ এবং চিড়িয়াখানার রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য নতুন প্রাণী কিনতে হবে। যদিও ইতিমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। কিন্তু এই সময়ে চিড়িয়াখানায় একটিও নতুন পশু-পাখি আনা যায়নি। এ ছাড়াও ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রস্তাবিত ক্রয় তালিকায় ছিল— লাউডগা সাপ, সোনালি সাপ, গোলবাহার, লাল মুনিয়া, হোয়াট কিং কবুতর, আঁচিল মুরগি, গাং কবুতর, তিতির, উট, লাল ক্যাঙ্গারু, জায়ান্ট ইল্যান্ট, স্যারল, আফ্রিকান সিংহ, সাদা বাঘ, চিতাবাঘ, চিত্রা চিতা, কালো বাঘ, ম্যানড্রিল, রেসাস বানর, ধূসর পেলিক্যান ও সোনালি ফিজেন্ট। এসব পশু-পাখির একটিও বর্তমানে জাতীয় চিড়িয়াখানায় নেই। অন্যদিকে ময়না, ডোরাকাটা হায়েনা, ফ্ল্যামিঙ্গো ও সালফার ক্রেস্টেড কাকাতুয়া দু-একটি করে থাকলেও এদের মজুদ বাড়াতে প্রস্তাবিত ক্রয় তালিকায় এদের নাম রয়েছে। সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত পশু-পাখি কেনার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে বলা হয়েছে, বর্তমানে চিড়িয়াখানায় ২৬ প্রজাতির পশু-পাখি বিপরীত লিঙ্গের অনুপস্থিতিতে এককভাবে বসবাস করছে। এতে একদিকে যেমন বেশ কিছু প্রাণীর বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে না, অন্যদিকে সঙ্গীহীন অবস্থায় কোনো পশু-পাখিকে বছরের পর বছর রাখা চিড়িয়াখানার মূলনীতির পরিপন্থী এবং নির্দয় আচরণ। এতে প্রাণিকুল নির্জীব থাকে এবং মাঝেমধ্যে তাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও পরিলক্ষিত হয়। ক্ষেত্রবিশেষ প্রাণিকুলের আচরণগত পরিবর্তনসহ বিভিন্ন রকম ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় এবং স্বাভাবিক আয়ুষ্কালও এতে কমে যায়। ফলে জাতীয় চিড়িয়াখানার আদর্শ ও উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। জানতে চাইলে চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. এস এম নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘চিড়িয়াখানায় বর্তমানে ২৬ প্রজাতির পশু-পাখি নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছে। এদের একাকিত্বের অবসানের জন্য প্রস্তাবিত পশু-পাখি ক্রয় কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য আমরা কাজ করছি।’

সর্বশেষ খবর