শনিবার, ১২ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

রাজশাহীর ১১ নদী পানিশূন্য

পুড়ছে ফসলের খেত

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহীর ১১ নদী পানিশূন্য

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার প্রতিটি এলাকায় খাবারের পানির জন্য গভীর নলকূপগুলোতে ভিড়ের দৃশ্য প্রতিদিনের। নলকূপ বসিয়ে পানি না পাওয়ায় এবং বিকল্প কোনো উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করতে না পেরে ভিড় করেন গভীর নলকূপগুলোতে। সংসারের অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হয় পুকুরের পানি। অনেকে বাধ্য হয়ে পুকুরের পানিও পান করে থাকেন।

নাচোলের সোনাইচণ্ডি, আনসুরা, আলমপুরসহ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি গ্রামে সরকারি ও ব্যক্তিগতভাবে নলকূপ বসানো হলেও তা কাজে আসছে না। নলকূপ বসানোর দুই তিন মাসের মধ্যে আবারও অকেজো হয়ে যায়। যেগুলো এখনো সচল আছে, সেগুলো থেকে পানি তুলতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। ফলে তাদের বিকল্প পানির উৎস একমাত্র পুকুর। পুকুরের নোংরা পানি দিয়ে চলে নাচোলবাসীর দৈনন্দিন কাজ। সেই পুকুরের পানিও শুকিয়ে যাচ্ছে দাবদাহে। যেসব এলাকায় পুকুর নেই সেখানকার মানুষ পানির জন্য কয়েক মাইল পথ পাড়ি দিয়ে পানি সংগ্রহ করে থাকেন। আলমপুরের আরশাদ আলী জানান, নাচোলের বাইরের এলাকাগুলোতে ১২০ ফুটের মধ্যে পানির স্তর পাওয়া গেলেও এখানে ১৫০ ফুটের মধ্যেও পানির স্তর পাওয়া কঠিন। ৩০০ থেকে ৩৫০ ফুট পাইপ স্থাপন করার পর পানি পাওয়া গেলেও তা সামান্য। জেলার অন্য দুটি উপজেলায় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায় নলকূপ বসানো গেলেও নাচোলে একটি নলকূপ বসাতে খরচ হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। শুষ্ক মৌসুম এলেই শুরু হয় পানির সংকট। দীর্ঘ সময় ধরে ভারি বর্ষণ না হওয়ায় রাজশাহী অঞ্চলে দেখা দিয়েছে তীব্র খরা। ইতিমধ্যে তীব্র খরায় এ অঞ্চলের প্রধান ১৩টি নদীর মধ্যে ১১টির তলদেশ পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। পুকুর, খাল-বিল মিলিয়ে অর্ধেকেরও বেশি জলাধার শুকিয়ে গেছে। খেতের ফসল পুড়ছে পানির অভাবে। একই সঙ্গে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোকলেছুর রহমান জানান, রাজশাহী পানি বিজ্ঞান উপ-বিভাগের আওতায় রাজশাহী বিভাগের ১৩টি প্রধান নদীর মধ্যে ১১টির তলদেশ শুকিয়ে গেছে। এগুলোতে এখন পানির কোনো প্রবাহ নেই। এ নদীগুলো হলো রাজশাহীর বারনই, বাগমারার ফকিরনী, নাটোর সিংড়ার গুর নদী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটের পাগলা নদী, রহনপুরের পুনর্ভবা নদী, নওগাঁর ছোট যমুনা ও আত্রাই নদী, সারিয়াকান্দির বাঙালি নদী, বগুড়ার করতোয়া, নাগর নদ এবং সোনামুখীর তুলসীগঙ্গা নদী। এ নদীগুলো এখন পানিশূন্য। এ ছাড়া সামান্য পানিপ্রবাহ রয়েছে বগুড়ার মথুরাপাড়া দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, রাজশাহীর পদ্মা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদীতে। তবে এদের শাখা নদীগুলো শুকিয়ে গেছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর রাজশাহী সার্কেলের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, রাজশাহী, চাঁপাই, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জে প্রায় দেড় লাখ সরকারি নলকূপ এবং প্রায় ১০ লাখ বেসরকারি নলকূপ আছে। এর মধ্যে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় রাজশাহী, চাঁপাই ও নওগাঁর ৭০ শতাংশ ও বাকি ৩ জেলার ৪০ শতাংশ নলকূপ অকেজো হয়ে গেছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নামছে। ২০০৭ সালে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় পানির স্তর ছিল ৮৫ ফুট নিচে, ২০০৮ সালে তা ৯০ ফুট এবং ২০০৯ সালে ১১০ ফুট নিচে নিমে যায়। গত বছর বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্তর ১২০ থেকে ১৩০ ফুট পর্যন্ত নেমে গেছে। রাজশাহী অঞ্চলে পানি ও স্যানিটেশন নিয়ে কাজ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এনজিও ফোরামের প্রোগ্রাম ফ্যাসিলিটেটর সাবিত জাহান জানান, গত বছর তারা বরেন্দ্র অঞ্চলের পানির যে স্তর দেখেছেন তাতে প্রতি বছর ৫ ফুট করে নেমে যাচ্ছে। গত বছর তারা ১১০ ফুট পর্যন্ত স্তরে নলকূপ বসাতে পেরেছেন। এ বছর ১২০ থেকে ১৩০ ফুট পর্যন্ত যেতে হচ্ছে। পানির স্তর যেভাবে নামছে সেভাবে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সেটি পূরণ হচ্ছে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর