শনিবার, ১২ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

পর্যটন বর্ষ আটকে আছে সভা আর কমিটিতে

নিজামুল হক বিপুল

সরকার ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করলেও সেটি এখনো সভা আর কমিটিতেই আটকে আছে। বছরের দুই মাস পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত পর্যটন বর্ষের জন্য কোনো বরাদ্দ অনুমোদন দেওয়া হয়নি। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যটনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত বীচ কার্ণিভাল ছাড়া আর কোনো অনুষ্ঠান বা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো কিছুই করা যায়নি। সেই রকম কোনো পরিকল্পনাও দেখা যাচ্ছে না। ফলে পর্যটন বর্ষের ঘোষণাটি এখনো শুধুই ঘোষণা আর কমিটিতে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে— ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করা হলেও বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে নেই আলাদা কোনো উইং। যার ফলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। এদিকে পর্যটন বর্ষকে সফল করে তুলতে আজ একটি মতবিনিময় সভা আহ্বান করেছে মন্ত্রণালয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করেছিলেন। সেই লক্ষ্যে গত বছরের শেষ দিকে এসে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, পর্যটন করপোরেশনে ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড পর্যটন বর্ষকে সফল করতে বিভিন্ন রকম উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি তিন দিনব্যাপী পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বীচ কার্ণিভাল। সেই অনুষ্ঠান যথারীতি শেষ হলেও পর্যটন বর্ষকে সফল করতে গত দুই মাসে দৃশ্যমান আর কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। বরং পর্যটন বর্ষকে ঘিরে শুধুই এই কমিটি, সেই কমিটি আর সভা-ই করা হচ্ছে। পর্যটন বর্ষ সফল করতে ইতিমধ্যে একাধিক কমিটি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পর্যটন সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে প্রধান করে করা এ কমিটি একটি সভা করলেও ফলপ্রসূ কিছুই এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। অর্থমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে পর্যটন বর্ষ উপলক্ষে রয়েছে আরেকটি স্টিয়ারিং কমিটি। এই কমিটির কো-চেয়ারম্যান হচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। আর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা হচ্ছেন এই কমিটির সদস্য। এর বাইরে আরেকটি কমিটি আছে। সেটি হচ্ছে জাতীয় পর্যটন পরিষদ। এর প্রধান হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। এত কমিটি থাকলেও পর্যটন বর্ষকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে সেভাবে তুলে ধরা যাচ্ছে না। সূত্র জানায়, পর্যটন বর্ষের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বরাদ্দ না পাওয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করে বলেছিলেন, এ জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। কিন্তু পর্যটন বর্ষের দুই মাস চলে গেলেও সেই বরাদ্দই আসেনি। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল পরিকল্পনা কমিশনের কাছে। কিন্তু সেই টাকা গত দুই মাসেও পাওয়া যায়নি। বরং পরিকল্পনা কমিশন থেকে উল্টো চিঠি দিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে ৫০ কোটি টাকার বাজেট দেওয়ার জন্য। মন্ত্রণালয় পূর্বের প্রস্তাব কাটছাঁট করে সম্প্রতি আবারও ৭০ কোটি টাকার একটি বাজেট দিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু সেটিও এখন পর্যন্ত অনুমোদন পায়নি। যার ফলে অর্থের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করা পর্যটন বর্ষ। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যটন বর্ষ শুধু কমিটি, সভা আর ঘোষণাতেই। বাস্তবে পর্যটন বর্ষকে পর্যটকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কিছু করা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন ও পর্যটন উইং-এর অতিরিক্ত সচিব মো. রফিকুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পর্যটন বর্ষে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বীচ কার্ণিভাল করা হয়েছে। বৌদ্ধিস্ট সার্কিট সম্মেলন করা হয়েছে। কুয়াকাটায় একটা কার্ণিভাল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। একইভাবে দেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে বিদেশিদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিকে পর্যটন বর্ষকে কীভাবে আরও সফল করে তোলা যায় এবং দেশের পর্যটন সেক্টরের উন্নয়নে আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে জন্য আজ একটি মতবিনিময় সভা ও নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। রাজধানী প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যসহ ১৩ সচিব এবং সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন।

মন্ত্রণালয় থাকলেও নেই পৃথক শাখা : বিমান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে দুটি উইং রয়েছে। এর একটি হচ্ছে বিমান ও সিভিল এভিয়েশন উইং। অপরটি হচ্ছে প্রশাসন উইং। এই উইংয়ের সঙ্গে লেজ হিসেবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে পর্যটনকে। অথচ বিশ্বের অনেক দেশেই পর্যটনের জন্য রয়েছে আলাদা মন্ত্রণালয়। কিন্তু বাংলাদেশে পর্যটন খাতের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকলেও পৃথক মন্ত্রণালয় তো দূরের কথা পৃথক উইং-ই নেই। মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পর্যটনের জন্য প্ল্যানিং সেল দরকার। হোটেল গাইড দরকার। কিন্তু পৃথক উইং না থাকায় এগুলো করা যাচ্ছে না। এমনকি যেসব প্রতিষ্ঠান পর্যটকদের জন্য ট্যুর অপারেট করছে তাদেরও কোনো নিয়মনীতি নেই। দায়বদ্ধতাও নেই। যদি পৃথক উইং থাকত তাহলে হয়তো সবকিছুকে একটা নিয়মের মধ্যে এনে পর্যটন বর্ষকে পর্যটকদের কাছে নিয়ে যাওয়া যেত এবং পর্যটন বর্ষের উদ্দেশ্যও সফল হতো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী পদক্ষেপ না নিলে পর্যটন বর্ষের উদ্দেশ্যই বিফলে যাবে। শুধু সভা-সমিতি, নৈশভোজ আর কমিটিতেই শেষ হবে পর্যটন বর্ষ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর