শনিবার, ১২ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

অনুমোদনহীন উঁচু ভবনে সয়লাব পুরান ঢাকা

মাহবুব মমতাজী

ইতিহাস-ঐতিহ্যের নগরী পুরান ঢাকায় গত কয়েক দশকে জনসংখ্যা যেমন বেড়েছে কয়েক গুণ, তেমনি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অনুমোদনহীন উঁচু ভবনের সংখ্যা। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে বাসস্থানগুলো সেভাবে সংস্কার না করায় বেশির ভাগই থাকছে ঝুঁকিপূর্ণ। আবার সংস্কার করলেও নিয়মবহির্ভূতভাবে ভূমির সহনীয় ক্ষমতার বেশি ঊর্ধ্বমুখী তলা নির্মাণ এখানে প্রতিনিয়ত শঙ্কা বাড়াচ্ছে আরও বেশি। পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জ, গেণ্ডারিয়া, বেগমগঞ্জ, শাঁখারীবাজার ও বাবুবাজার এলাকায় দুই শতাংশ থেকে দুই কাঠা জায়গার মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে পাঁচতলার উঁচু ভবন। এটিকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ বলে গণ্য করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। তারা জানান, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ২০০৮ অনুসারে এগুলো দেখভাল, অনুমোদন ও নিয়ন্ত্রণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)। জানা গেছে, অনুমোদন ছাড়াই নিজস্ব ক্ষমতাবলে সামান্য জায়গার মধ্যে ৫৭ সি-মঞ্জুর মার্কেটটি প্রথমে পাঁচতলা গড়ে তোলা হয়েছিল। সম্প্রতি তা আরও একতলা বাড়িয়ে ছয়তলায় উন্নীত করা হয়েছে। দয়াগঞ্জের বেগমগঞ্জ লেনে ১৭, ১৮/১-জ, ১৮/১-দ-বি, ১৯/৫/১, ১৯/সি-১ এর পাশের ভবনটি এবং ২৯ নম্বর বানিয়ানগর লেন একইভাবে বাড়ানো হয়েছে। বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকার ফুজি কালারের বিল্ডিংটিও দুইতলা ভেঙে চারতলা করা হয়েছে। আর এসব ভবন প্রধান সড়কের পাশেই অবস্থিত, যেগুলোর নিচতলায় রয়েছে দোকান আর ওপরতলা ভাড়া দেওয়া হয়েছে আবাসিকের জন্য।

স্থানীয়রা জানান, এসব ভবনের জায়গার পরিমাণ দুই থেকে আড়াই শতাংশের মধ্যে। কিন্তু প্রতিটি ভবনই নির্মাণ করা হয়েছে পাঁচতলার ওপরে। অভিযোগ পাওয়া যায়, আগে এসব ভবন চারতলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হলেও পরবর্তী সময়ে পাঁচ ও ছয়তলায় উন্নীত করা হয়েছে। এসব ভবনের কোনো ধরনের অনুমোদন নেই এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মালিকদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি। এদিকে শাঁখারীবাজারের ১৪৩টি ভবনকে ঐতিহ্য ঘোষণা করে সংরক্ষণের জন্য ২০০৯ সালে একটি সরকারি গেজেট প্রকাশ করা হয়েছিল। এ ভবনগুলো ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংস্কার বা ভেঙে নতুন করে নির্মাণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। কিন্তু সেসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই শাঁখারীবাজারের ১৫, ২৭ ও ১০৯ নম্বর বাড়ি ভেঙে স্বল্প পরিসরে নতুন করে পাঁচতলা পর্যন্ত নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়। তবে পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্বল্প পরিসরে দুই বা আড়াই কাঠা জায়গার মধ্যে পাঁচতলা কিংবা এরও বেশি উঁচু ভবন নির্মাণ অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী রাজধানীতে যে কোনো ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়ার এবং অবৈধ নির্মাণ ঠেকানোর দায়দায়িত্ব রাজউকের। এ বিষয়ে জানার জন্য রাজউকের উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফার সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর