রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

আচরণবিধি লঙ্ঘন প্রতিযোগিতা

প্রচারণায় এমপি অভিযোগের স্তূপ কমিটি করেই খালাস ইসি

গোলাম রাব্বানী

আচরণবিধি লঙ্ঘন প্রতিযোগিতা

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের যেন প্রতিযোগিতা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী, বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী—কেউই পিছিয়ে নেই। তোয়াক্কা করছেন না আইন। রিটার্নিং অফিসার থেকে শুরু করে নির্বাচনী কর্মকর্তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি দুজন এমপির বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে একজনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। অন্যজনের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে তা কতদূর গড়ায় সেটিই এখন দেখার বিষয়। এ ছাড়া মনোনয়নপত্র জমা, নির্বাচনী ব্যয়সহ আচরণবিধি তদারকি করতে উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিয়ে ৮টি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো মনিটরিং করছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।

নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে গোলযোগের খবর যেমন আসছে, তেমনি ইসিতেও প্রার্থীদের অভিযোগের স্তূপ জমছে। তবে কমিশনের ‘তদারকির অভাবে’ বেশিরভাগ নালিশের সুরাহা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন একাধিক প্রার্থী। তারা বলছেন, তদারকি কমিটি গঠন করেই ‘খালাস’ ইসি। অবশ্য কমিশনের দাবি, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তাদের হাতে নেই।

ইউপি নির্বাচনে প্রথম ধাপের তফসিল ঘোষণার এক মাস পূর্ণ হয় গত বৃহস্পতিবার। এ সময়ের মধ্যেই তৃণমূলের এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকায় গোলযোগ-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত এক সপ্তাহে শুধু ভোলা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুরে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন তিনজন। তফসিলের আগেও নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হয়েছেন দুজন। ৭৩৩টি ইউপিতে ৪ মার্চ থেকে প্রচারণা শুরুর পর কমিশনে শতাধিক অভিযোগ এসেছে। অনেক এলাকায় বিধি ভেঙে প্রচারণায় নেমেছেন এমপিরা। তবে এসব অভিযোগ ফাইলবন্দী হলেও কোনো সুরাহা করা হয়নি। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই তা খতিয়ে দেখা হবে। মনোনয়নপত্র জমার বাধা নিয়ে আমরা স্ব-উদ্যোগে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় সব ইউপির ভোট বন্ধ করেছি।’ অন্যদিকে দুই এমপির বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি জানান, আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ক্ষমতাসীন দলের দুই এমপি বরগুনা-২ আসনের শওকত হাচানুর রহমান রিমনের বিরুদ্ধে মামলা এবং পাবনা-২ আসনের খন্দকার আজিজুল হক আরজুর কাছে বক্তব্য জানতে চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

অনেক এলাকায় বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ইসির সমন্বয় সভায় গোলযোগের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। বরিশালের আগৈলঝড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নে মহিলা চেয়ারম্যান প্রার্থী লাবণ্য আক্তার তালুকদার, একই উপজেলার রত্নপুরে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. শাহীন আলম, জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার নাংলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন, ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়ায় বর্তমান চেয়ারম্যান জাহিদুল আবেদীন (জাহিদ) গোলযোগের শঙ্কা নিয়ে অভিযোগ দাখিল করেছেন। এসব অভিযোগে ক্ষমতাসীন দল ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি উঠে এসেছে। নাংলা ইউপিতে চয়ারম্যান প্রার্থী শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তা কোনো অভিযোগ আমলে না নেওয়ায় ইসিতে এসে অভিযোগের পক্ষে প্রমাণাদিসহ আবেদন জমা দিলাম। এখন ভরসা ইসি।’ কমিটি থাকলেও সাড়া নেই : মনোনয়নপত্র জমা, নির্বাচনী ব্যয়সহ আচরণবিধি তদারকিতে উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিয়ে ৮টি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি বলে দাবি করেছে ইসির আইন শাখা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, দলীয়ভাবে ইউপি নির্বাচন নিয়ে অনেক এলাকায় সংঘর্ষ ও সহিংসতার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। লিখিতভাবে ইসিতে কী অভিযোগ এলো, গোলযোগ-সংঘর্ষ কোথায় কোথায় হয়েছে—তার কোনো তথ্য ইসি সংরক্ষণ করছে না। সঠিকভাবে মনিটরিং না করায় প্রকৃত চিত্রও পাওয়া যাচ্ছে না। তবে নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব সামসুল আলম বলেন, ‘আমাদের কাজ ভাগ করা রয়েছে। সবাই নিজ নিজ কাজের বিষয়ে সচেতন। এ নিয়ে সমন্বয়হীনতা নেই। মাঠপর্যায়ে আচরণবিধি তদারকিতে নির্বাহী হাকিমের পাশাপাশি ভিজিলেন্স টিম ও কয়েকটি সমন্বয় কমিটি কাজ করবে। এতে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হবে আশা করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রার্থী, প্রতিপক্ষ ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিয়েও অনেকের অভিযোগ রয়েছে। আমাদের কাছে যেসব অভিযোগ আসছে তা কমিশনের নজরে আনতে ফাইলে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়েও নজর রাখা হচ্ছে। নির্বাচনী এলাকায় আচরণবিধি তদারকিতে কাজ শুরু হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর