রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

ব্যাংকের টাকার ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

ঝুঁকিতে সরকারি বেসরকারি ওয়েবসাইট

রুহুল আমিন রাসেল

ব্যাংকে টাকার ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা এটিএম ব্যবহারকারী গ্রাহকদের মাঝে। ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি করে এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরি অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ভাণ্ডার থেকে বৈদেশিক মুদ্রা খোয়া যাওয়ার মতো ঘটনায় তারা হতবাক। এর প্রভাব পড়েছে অর্থনীতির ওপরও। ডিজিটাল নিরাপত্তার ভঙ্গুর চিত্রে উদ্বিগ্ন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরাও।

দেশের প্রবীণ অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ আর্থিক খাতের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আর্থিক খাতের নিরাপত্তা নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে। ব্যাংকগুলোতে যেসব মেশিন ও কার্ড ব্যবহার করা হচ্ছে তা খুবই নিম্নমানের। এতে যে কোনো সময় গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া যায়। ব্যাংকের যোগসাজশ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগজনক। এ জন্য এখনই ব্যাংকগুলোর ওপর কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। দেশের শীর্ষস্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল দেশ ও অর্থনীতির কথা বলছি। কিন্তু এটা চিন্তা করে দেখিনি এর ভালোর সঙ্গে খারাপটাও আছে। আমাদের ব্যাংকিং খাতে এটিএম বুথ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে টাকা চুরি হওয়ার পর আমরা উপলব্ধি করেছি নিরাপত্তা নিয়ে। এ ধাক্কাটা আরও আগে খেলে ভালো হতো। তবে আমি আশা করছি, সরকার এখন সচেতন হবে।’ দেশের আর্থিক খাতের ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত কম্পিউটারে বাংলা লিখনী বিজয় কি-বোর্ডের উদ্ভাবক মোস্তাফা জব্বার মনে করেন, ‘আমাদের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জর মুখে পড়ে আছে। তাই ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এ নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলা। এ জন্য সরকারকে নতুন প্রযুক্তি ও আইন তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে।’ গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি নিরাপত্তা পণ্য নির্মাতা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিউলেট প্যাকার্ড এন্টারপ্রাইজ তাদের সাইবার ঝুঁকি প্রতিবেদন-২০১৬-তে বলে, চলতি ২০১৬ সালে সাইবার নিরাপত্তায় উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে আছে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত। এটিএম বুথগুলোয় পুরনো সংস্করণের উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহার করায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, অদূর ভবিষ্যতে এটিএম বুথের নিরাপত্তা দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে সাইবার আক্রমণ চালিয়ে ব্যাংক থেকে গ্রাহকের টাকা সরিয়ে নিতে পারে দেশি-বিদেশি অপরাধীরা। এ প্রসঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস—বেসিসের সভাপতি শামীম আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বেশির ভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনলাইনে নেই। আমরা অনলাইনে পিছিয়ে আছি বলে ঝুঁকি কম। তবে সরকারি-বেসরকারি ওয়েবসাইটগুলো ঝুঁকিতে আছে। এ ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের উচিত হবে প্রতি তিন মাস পরপর তথ্যপ্রযুক্তি বা আইটি ও নিরাপত্তা অডিট করানো। উন্নত বিশ্ব ঝুঁকি মোকাবিলায় এ অডিট করে।’ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সাইবার হামলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকটা নিরাপদ বলেও মনে করেন ওয়েবসাইটভিত্তিক পণ্য ক্রয়-বিক্রয় প্রতিষ্ঠান এখনই ডটকমের এই কর্ণধার। এর আগে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে মাইক্রোসফট তাদের সতর্কতামূলক নিরাপত্তা বার্তায় বলেছে, ২০১৪ সালের জুলাই মাসের পর উইন্ডোজ এক্সপি সংস্করণে কোনো নিরাপত্তা সুবিধা দেওয়া হবে না। পরে আরেক বার্তায় মাইক্রোসফট আরেক দফা সময় বাড়িয়ে বলেছে, ২০১৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত নিরাপত্তা দেওয়া হবে। কিন্তু এ সেবাগ্রহীতাকে মাইক্রোসফটের নির্ধারিত সেবামূল্য পরিশোধ করতে হবে। সাইবার দুনিয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠার প্রেক্ষাপটে ফেব্রুয়ারিতে দেশের কয়েকটি ব্যাংকের এটিএম বুথে গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির ঘটনা ঘটল। সর্বশেষ জানা গেল, বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকেও অর্থ চুরি করেছে সাইবার অপরাধীরা। জানা গেছে, বর্তমানে দেশে তফসিলি ৫৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের এটিএম কার্ড হোল্ডার রয়েছেন প্রায় ৯০ লাখ। এর মধ্যে ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। এতে অনিরাপদ স্থানে এটিএম বুথ হওয়ায় উদ্বিগ্ন অর্থনীতিবিদ ও সাধারণ গ্রাহকরা। ঝুঁকিপূর্ণ কয়েক হাজার বুথও চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে আর্থিক খাতে সাইবার হামলার ঝুঁকি প্রতিরোধে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত সপ্তাহে এ ১০ দফা নির্দেশনা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের তত্ত্বাবধানে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পরিপূর্ণ সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি মূল্যায়ন করে তার আলোকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। প্রযুক্তিগত দুর্বলতা মূল্যায়ন করে তার আলোকে আপদকালীন পরিকল্পনা নিতে হবে। যে কোনো সাইবার বা কারিগরি আক্রমণ মোকাবিলা করার জন্য পরিকল্পনা নিতে হবে। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো যেসব সেবা দিচ্ছে, তা মোকাবিলা করতে হবে।

সর্বশেষ খবর