রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

১৫ লাখ শ্রমিকের নিয়োগ স্থগিত করল মালয়েশিয়া

আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল হয়ে গেল চুক্তি

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

মালয়েশিয়া এখন থেকে আর কোনো নতুন বিদেশি শ্রমিক নেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির মন্ত্রিসভা। যেসব প্রতিষ্ঠানের এখন থেকে শ্রমিক প্রয়োজন হবে, মন্ত্রিসভা বলেছে অবৈধ বিদেশিদের বৈধ করে নিতে। তবে নারী গৃহকর্মীর বিষয়ে শিথিলতা থাকবে। দেশটির মন্ত্রিসভার বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে গতকাল সকালে জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী ড. আহমেদ জাহিদ হামিদি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ শ্রমিক নেওয়ার যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল মালয়েশিয়া, তা আনুষ্ঠানিকভাবেই বাতিল হয়ে গেল। একটি প্রতিষ্ঠিত শ্রমবাজারে বাংলাদেশের নতুন জনশক্তি প্রেরণও বন্ধ হয়ে গেল।

মালয়েশিয়ার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুসারে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপপ্রধানমন্ত্রী ড. আহমেদ জাহিদ হামিদি এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের কথা জানান। হামিদি বলেন, বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালেয়শিয়ার সরকার। এ সিদ্ধান্ত এখন থেকেই কার্যকর হবে। কোনো নিয়োগকারীর শ্রমিকের প্রয়োজন হলে দেশে অবস্থানরত বিদেশি শ্রমিকদের মধ্য থেকে নিতে পারবেন। এমনকি যে বিদেশি শ্রমিকদের কাজের অনুমতিপত্রের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তাদের মধ্য থেকেও শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া যাবে। অবৈধ অভিবাসীদের পুনর্বাসনে নেওয়া সমন্বিত কর্মসূচি সিক্স-পির আওতায় অনিবন্ধিত নয় এমন শ্রমিকদেরও নিয়োগ দিতে পারবেন নিয়োগকর্তা। তিনি বলেন, এ কর্মসূচির আওতায় আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বিদেশি শ্রমিকদের কাজে নিতে নিবন্ধনের সুযোগ দিয়েছে সরকার। আগে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সুযোগ ছিল। এরপর যেসব নিয়োগকর্তা অবৈধ শ্রমিকদের আশ্রয় দেবেন, তাদের বিরুদ্ধে কড়াকড়িভাবে আইন প্রয়োগ করা হবে বলে জানান মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী। মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম দ্য স্টার অনলাইনের খবরে জানানো হয়, এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে নিবন্ধিত ১৫ লাখ বাংলাদেশির মধ্য থেকে শ্রমিক নেওয়ার যে পরিকল্পনা ছিল, আপাতত তা স্থগিত করেছে মালয়েশিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বারনামাও উপপ্রধানমন্ত্রী হামিদিকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, এক বৈঠকের পর দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদি সব ‘সোর্স কান্ট্রি’ (জনশক্তি নেওয়ার জন্য মালয়েশিয়া সরকারের তালিকাভুক্ত দেশ) থেকে কর্মী নেওয়া স্থগিত রাখার এ ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের কত শ্রমিক প্রয়োজন, সে বিষয়ে সরকার সন্তোষজনক তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত বিদেশ থেকে কর্মী নেওয়া স্থগিত থাকবে।’ জানা যায়, বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া বেশ কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে ‘জিটুজি’ পদ্ধতিতে জনশক্তি নেওয়া শুরু করে। তবে শুধু প্লানটেশন খাতে নেওয়া শ্রমিকের সংখ্যা ছিল অত্যন্ত স্বল্প। পরে সোর্স কান্ট্রির তালিকায় বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত হলে সেবা, উত্পাদন, নির্মাণসহ অন্যান্য খাতে বাংলাদেশি কর্মী নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। প্রণয়ন করা হয় ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতি। পাঁচটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে প্রায় ১৫ লাখ কর্মী নিতে ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু পরদিনই দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী বিদেশি কর্মী নেওয়া বন্ধের কথা জানিয়ে বলেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে ‘ঘোষিত’ ১৫ লাখ কর্মী নিচ্ছে না মালয়েশিয়া। এখন সেটিই আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল হলো বলে মনে করা হচ্ছে।

পুনর্নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে : মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের নিবন্ধনের মাধ্যমে বৈধ করার প্রক্রিয়া চলছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি দেশটির সরকারের এই পুনর্নিয়োগ প্রকল্প শুরু হয়। এ প্রকল্পে বাংলাদেশসহ ১৫টি সোর্স কান্ট্রিকে একটি গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারকে আলাদা করা হয়েছে। মোট পাঁচটি ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছে এ দায়িত্ব। ইন্দোনেশীয়দের নিবন্ধন করার জন্য ইমান নামে একটি কোম্পানি কাজ করছে। মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য বুকিত ইন্দাহ নামে একটি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশসহ বাকি দেশগুলোর শ্রমিকদের নিবন্ধন করতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মাই ইজির নেতৃত্বে পিএমএফ কনসোর্টিয়াম করা হয়েছে তিনটি কোম্পানি মিলে।

 অবৈধদের বৈধকরণ প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য দেশটির সংশ্লিষ্ট সরকারি ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে মাই ইজির মাধ্যমে যারা নিবন্ধন করছে, কোম্পানির পক্ষ থেকে একটি সিমকার্ড দেওয়া হচ্ছে। এই সিমকার্ডে নিবন্ধিত ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য থাকে। নিবন্ধিত হতে ঙঘ গণঊ েলিখে ২৭৫৫৫ এই নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। এসএমএস দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফিরতি এসএমএস আসবে। এরপর ঐঊখচ লিখে পাঠাতে হবে একই নম্বরে। আসবে আরেকটি এসএমএস। অতঃপর গণ ওঘঋঙ লিখে ২৭৫৫ নম্বরে পাঠালে নিবন্ধিত ব্যক্তির তথ্য আসবে। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রায় তিন লাখ বাংলাদেশি অবৈধভাবে অবস্থান করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর