রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

চলছে পাল্টাপাল্টি হামলা, এলাকায় এলাকায় তাণ্ডব

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন ঘিরে চলছে হামলা-পাল্টা হামলা। ভাঙচুর করা হচ্ছে বাড়িঘর। লুট করা হচ্ছে মালামাল। অনেক এলাকায় গুলি ও ককটেল হামলাও হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকালও বরিশালের গৌরনদী, কুষ্টিয়ার মিরপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, সাতক্ষীরার সদর, পিরোজপুর, নেত্রকোনায় সংঘাত-সহিংসতায় ১২৩ জন আহত হয়েছেন। এদিকে মোরেলগঞ্জে আওয়ামী লীগের এক প্রার্থীর হাত-পা কাটার পরিকল্পনা করার অভিযোগ তুলে এক গ্রামে তাণ্ডব চালিয়েছে দলটির কর্মী-সমর্থকরা।

বরিশাল থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, জেলার গৌরনদী উপজেলার শরিকল ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী মঞ্জুর হোসেন মিলন ও আওয়ামী লীগের ফারুক মোল্লার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা এবং চারটি বসতঘর ও অন্তত ২০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে বিএনপি প্রার্থীর স্ত্রী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী খালেদা পারভীনসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। ছবি তুলতে গিয়ে সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনতাই ও মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। সংঘর্ষের সময় ককটেল ও গুলির একাধিক শব্দ শোনা গেছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারছেন না শিবচরের পাঁচ্চর ইউনিয়ন পরিষদের বিএনপির প্রার্থী হাজি মো. শাখাওয়াত হোসেন নান্নু মোল্লা। আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনের লোকজনের প্রচারে বাধা, মাইক ছিনিয়ে নেওয়া, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা, কর্মী অপহরণ, গালাগাল ও ক্রমাগত এলাকা ছাড়ার হুমকির মুখে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। শুক্রবার বিকেলে প্রচারে নামলে বাহাদুরপুর মোড় থেকে নান্নু মোল্লার ছেলে আবুল কালাম ও দুই কর্মীকে ধরে নিয়ে যায় দেলোয়ার হোসেনের লোকজন। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া ইউনিয়নে জাসদের প্রার্থী আরিফুল ইসলাম আরিফের পাঁচটি নির্বাচনী ক্যাম্পে হানা দিয়ে সমর্থকদের মারধর করেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন।  তারা আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। গতকাল দুপুরে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন জাসদের প্রার্থী।

মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিনিধি জানান, আওয়ামী লীগের এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর হাত-পা কেটে দেওয়ার পরিকল্পনার অভিযোগ তুলে মোরেলগঞ্জের গুয়াতলা গ্রামে তাণ্ডব চালিয়েছেন দলটির কর্মী-সমর্থকরা। তারা বিভিন্ন প্রার্থীর বসতবাড়ি ও ছয়টি দোকান ভাঙচুর করে মালামাল লুটে নেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। পরে আওয়ামী লীগের কর্মীরা লাঠিমিছিল করলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকাজুড়ে। তবে এ ঘটনাকে সাজানো নাটক বলে আখ্যায়িত করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন রুনু। এ ছাড়া হাত-পা কাটার পরিকল্পনা করার অভিযোগে দুজনকে ধারালো অস্ত্র ও হাতুড়িসহ আটক করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) তারক বিশ্বাস বলেন, আটক দুজন পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেছেন। তারা বহিরাগত আরও সাত-আটজনকে সঙ্গে নিয়ে প্রার্থী আবদুর রহিম বাচ্চুর একটি হাত ও একটি পা কেটে দেওয়ার জন্য পথে অপেক্ষা করছিলেন।

পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, পটুয়াখালীতে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অর্ধশত কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। গতকাল দশমিনা উপজেলার আলীপুরা ইউনিয়নে এবং শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার ছোট বিঘাই ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বিদ্রোহী প্রার্থীর বাড়িঘর ভাঙচুর, মোটরসাইকেল ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে। ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও র‌্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বরগুনা প্রতিনিধি জানান, বরগুনায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুক্রবার রতে হামলা-পাল্টা হামলায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৮ জন। বরগুনা ও পাথরঘাটায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পাথরঘাটার কালমেঘা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুরের অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোলাম নাছির। একই রাতে বুড়িরচর ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী আবদুল আজিজ শরীফের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মীরা। বরগুনার গৌরিচন্না ইউনিয়নে উত্তর মনসাতলী গ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারে অংশ নেওয়ায় সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছেন নৌকার কর্মীরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা ইউনিয়ন দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাড়িতে বোমা হামলা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. সেলিম ও বিদ্রোহী প্রার্থী কামরুল হাসান মোবারকের বাড়িতে পৃথক বোমা হামলা করা হয় বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন তারা।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, সদর উপজেলার ভোমরা ও কুশখালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা হামলা চালিয়ে বিএনপি প্রার্থীর একটি অস্থায়ী নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচার মাইক ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। এ সময় ভোমরা ইউনিয়নের বিএনপির প্রার্থী আসাদুর রহমান এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহিদুল ইসলামের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ছয়জন আহত হয়েছেন। এদিকে বিকেলে কুশখালী ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শ্যামলের আনারস প্রতীকের প্রচার মাইক ভাঙচুর ও ইঞ্জিনচালিত ভ্যান ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. কুতুব উদ্দিনের কর্মী-সমর্থকরা। এ সময় পিটিয়ে জখম করা হয় স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ভ্যানচালককে।

নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাওর উপজেলা খালিয়াজুরী। এ উপজেলার চাকুয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে পাথরা গ্রামটি হিন্দু অধ্যুষিত। শুক্রবার মধ্যরাতে দলীয় ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রচারণাকে কেন্দ্র করে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কিছু বাড়িঘরে ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় তিনজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার হলতাগুলিসাখালী ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হারুন আর রশীদের সমর্থককে কুপিয়ে জখম করেছেন আওয়ামী লীগরে চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মীরা। এদিকে পিরোজপুর সদর উপজেলার কদমতলা ইউনিয়নের বিএনপির প্রার্থী মো. আবদুস ছালাম শেখকে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান ও তার সমর্থক কর্তৃক হয়রানির অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছে সদর উপজেলা বিএনপি। এ ছাড়া পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী উপজেলার কুরিয়ানা বাজারে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মীদের হামলায় বিএনপি প্রার্থীর ছয় কর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় বিএনপি প্রার্থীর চারটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছেন আওয়ামী লীগ কর্মীরা।

সর্বশেষ খবর