রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা
বদলে যাচ্ছে বলরুম, সুইমিং পুল

হোটেল রূপসী বাংলা আসছে নতুন রূপে

জিন্নাতুন নূর

রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল ‘রূপসী বাংলা (সাবেক ইন্টারকন্টিনেন্টাল)’ নতুন রূপে আসছে। সংস্কারে বদলে যাচ্ছে পুরনো আদল। আয়তন বড় করায় এখন ২৭০টি রুমের জায়গায় থাকছে ২২৬টি রুম। ঘটছে রুম, রান্নাঘর, সুইমিং পুলসহ সব কিছুতেই পরিবর্তন।

রাজধানী ঢাকায় এখন পাঁচ তারকা মানসম্পন্ন বেশ কয়েকটি হোটেল রয়েছে। অন্যান্য হোটেলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রূপসী হোটেল  কর্তৃপক্ষ এর সংস্কার কাজ শুরু করেন। বর্তমানে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে সে কাজ। এ জন্য ভিতরের নকশায় আনা হচ্ছে বেশ পরিবর্তন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে হোটেল কর্তৃপক্ষ জানান, ২০১৭ সালের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে তারা আশাবাদী। দীর্ঘ সময় ধরে ইন্টারকন্টিনেন্টাল-ঢাকা, হোটেল শেরাটন কিংবা ‘রূপসী বাংলা’ নামে রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে কৃতিত্বের সঙ্গে তার কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। নতুনরূপে শিগগিরই আরও ভালো সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দেশি-বিদেশি অতিথিদের কাছে এটি ফিরে আসছে। সরেজমিন হোটেলটি পরিদর্শন করে দেখা যায়, শ্রমিকরা সংস্কার কাজে ব্যস্ত। ফলে ভবনটিতে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ। দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, পুরো হোটেলটির সংস্কার কাজ তিনটি ধাপে ভাগ করে করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি দুই ধাপের কাজও একসঙ্গে চলছে। প্রথম ধাপে হোটেলের রুমগুলোর আকৃতি বড় করা হয়েছে। আগে অতিথিদের জন্য হোটেলে ছিল মোট ২৭০ ইউনিট বা রুম। কিন্তু এখন প্রতি তিনটি রুম ভেঙে দুটি রুম তৈরি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে এখন মোট হোটেলের ইউনিট সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২২৬টি। আর দ্বিতীয় ধাপে বিভিন্ন মেশিন যেমন— জেনারেটর, আইটি, শীতাতপ যন্ত্র ইত্যাদি লাগানো হচ্ছে। রুম ভেঙে দেয়াল ঠিক করার কাজ পুরোপুরি হয়ে গেছে। হোটেলের সম্মুখভাগে অতিথিদের জন্য যে রুমটি ছিল— তার দেয়ালের গাঁথুনির কাজও হয়েছে। আগে যেখানে সুইমিং পুল ছিল, এখন সেখানে রলরুম তৈরি হচ্ছে। আর সুইমিং পুল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হোটেলের ছাদে। এটি তৈরি হচ্ছে ঠিক বলরুমের ওপরে। আর আগের বলরুমের জায়গায় আরও বড় করে হোটেলের রান্নাঘর তৈরি হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, হোটেলটি সংস্কারে প্রথমে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা পরবর্তীতে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। যা বাংলাদেশি টাকায় ৪২০ কোটি টাকা। চুক্তি অনুযায়ী এই ব্যয় বহন করছে বাংলাদেশ সার্ভিস লিমিটেড (বিএসএল)। রূপসী বাংলার বিপণন ও যোগাযোগ ব্যবস্থাপক সাহিদুস সাদিক বলেন, আমরা ২০১৭ এর মধ্যেই হোটেলের সংস্কার কাজ শেষ করতে পারব। হোটেলটি ৬০-এর দশকে তৈরি করা হয়েছিল তখন রুমগুলো ছোট ছিল। প্রতি রুমের আয়তন ছিল ২৬ বর্গমিটার। কিন্তু পাঁচ তারকা হোটেলে রুমের আয়তন আরও বড় হয়। বর্তমানে মান অনুযায়ী পাঁচ তারকা হোটেলের রুমের আয়তন কমপক্ষে ৩৮ বর্গমিটার। আর আমাদের হোটেলে রুমের আয়তন কমপক্ষে ৪০ বর্গমিটার করে তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া নতুন হোটেলটি হচ্ছে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। আগের থেকে নতুন হোটেলটি ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হচ্ছে। যেহেতু এটি ৫০ বছরের পুরনো একটি হোটেল এবং বর্তমানে ঢাকায় অনেক আধুনিক মানের হোটেল তৈরি হচ্ছে— সে হিসেবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে হোটেলটিকে নতুন রূপ দেওয়ার দরকার হয়ে পড়েছিল। এ জন্য হোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশে নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী ইন্টারকন্টিনেন্টালে যে ধরনের সুবিধা পাওয়া যায় এই হোটেলটিও সেভাবে অতিথিদের জন্য নতুন রূপে আসছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন সংস্থা বিএসএল বর্তমান হোটেলটির মালিক। ২০১০ সালের ১ মে বিএসএলকে শেরাটন কর্তৃপক্ষ হোটেলের ব্যবস্থাপনা দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়। সে সময় শেরাটন হয় রূপসী বাংলা। আর ২০১২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বিএসএল-এর সঙ্গে ইন্টারকন্টিনেন্টালের চুক্তি হয়। আর সংস্কার কাজের জন্য ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিরতিতে যায় হোটেলটি। পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম বিলাসবহুল পাঁচ তারকা হোটেল হিসেবে ইন্টারকন্টিনেন্টাল-ঢাকা যাত্রা শুরু করে রমনা এলাকায়। স্বাধীনতার পর ১৯৮৬ সালে হোটেল ইন্টারকনের মালিকানা গ্রহণ করে ঢাকা শেরাটন কর্তৃপক্ষ। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শেরাটন হোটেলের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালে হোটেলের মালিকানা হস্তান্তর হয় বিএসএল কর্তৃপক্ষের কাছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর