শিরোনাম
শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিদেশের জেলে ১৩ হাজার বাংলাদেশি

মির্জা মেহেদী তমাল

বিদেশের জেলে ১৩ হাজার বাংলাদেশি

বিশ্বের ৩৭ দেশের কারাগারে ১৩ হাজার বাংলাদেশি বন্দী রয়েছেন। এসব বন্দীর কেউ বিচারাধীন অবস্থায় আছেন, আবার কেউ সাজা খাটছেন। অবৈধ প্রবেশ, মেয়াদ শেষেও অবস্থান, চুরি, মাদক ব্যবসা, ডাকাতি এবং খুন ও ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িত অভিযোগে বন্দী রয়েছেন এই বাংলাদেশিরা। সবচেয়ে বেশি বন্দী রয়েছেন ভারতের কারাগারে। বেশির ভাগ বন্দী কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এর মধ্যে মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে দিন কাটছে ৩১ বন্দীর। হত্যা-ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধে জড়িত বা সহায়তার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আদালত এদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশির সংখ্যা সৌদি আরবেই বেশি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরবে শিরশ্ছেদের মাধ্যমে, দুবাইয়ে গুলি করে ও অন্য দেশগুলোয় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের অনুরোধে ১৬ বাংলাদেশি অপরাধীকে আটক করতে বিশ্বের সর্বোচ্চ পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল রেড নোটিস জারি করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিদেশের কারাগারগুলোয় বাংলাদেশি বন্দীর সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। গত বছর জুন পর্যন্ত বিদেশের কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ছিল ৭ হাজার। পরবর্তী ছয় মাসে বন্দীর সংখ্যা বেড়েছে ৬ হাজার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, দেশে কর্মসংস্থান সংকুচিত হওয়ায় বৈধ ও অবৈধ পথে প্রতিদিনই বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন বাংলাদেশিরা। পেটের তাগিদে প্রিয় মাতৃভূমি ত্যাগ করে প্রবাসজীবন বেছে নিয়ে পড়তে হচ্ছে চরম কষ্টে। বিদেশে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হচ্ছেন কেউ কেউ। আবার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে অবস্থান করায় কারাবন্দী আছেন অনেকেই। এ ছাড়াও অনেকেই আবার নানা অপরাধে জড়িয়ে গ্রেফতার হচ্ছেন। গত মাসে জাতীয় সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, বর্তমানে বিদেশে বন্দী বাংলাদেশির সংখ্যা ১৩ হাজার ২৪ জন।

সূত্র জানান, আটক বা বিচারাধীন বাংলাদেশির মধ্যে ভারতে রয়েছেন ৩ হাজার ৯৩২ জন। এ ছাড়া মালয়েশিয়ায় ৩ হাজার ৫৩৬, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১ হাজার ৫৮৪, সৌদি আরবে ৯৯২, ওমানে ৯১২, কাতারে ৪৪৭, বাহরাইনে ৩৭০, যুক্তরাজ্যে ২৫৪, মিয়ানমারে ১৫৮, গ্রিসে ১০৪, মেক্সিকোয় ৯৭, সিঙ্গাপুরে ৮৭, যুক্তরাষ্ট্রে ৬৪, জর্ডানে ৬১, লেবাননে ৪৯, চীনে ৪৮, ইরাকে ৪৮, ইতালিতে ৪৬, ফ্রান্সে ৪৬, ইরানে ৩২, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩০, পাকিস্তানে ২২, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৬, নেপালে ১৩, জাপানে ১২, শ্রীলঙ্কায় ১১, জর্জিয়ায় ৮, বুলগেরিয়ায় ৭, আজারবাইজানে ৬, থাইল্যান্ডে ৫, মরিশাসে ৫, মিসরে ৫, ব্রুনাইয়ে ৫, কেনিয়ায় ৪, তুরস্কে ৩, লিবিয়ায় ৩ ও বেলজিয়ামে ২ জন বাংলাদেশি বন্দী আছেন। সূত্র জানায়, প্রতিবেশী দেশ ভারতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি বন্দী আছেন। দেশটির বিভিন্ন কারাগারে এখন পর্যন্ত আটক বাংলাদেশির সংখ্যা ৩ হাজার ৯৩২। এদের বেশির ভাগই অবৈধ প্রবেশের দায়ে আটক হয়েছেন। এ ছাড়া এ তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশের কিছু সন্ত্রাসীও, যারা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছেন। শীর্ষ এ সন্ত্রাসীদের মধ্যে কয়েকজনকে বাংলাদেশ-ভারত বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সূত্র জানায়, ভারতের পর বন্দী সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মালয়েশিয়া। দেশটির বিভিন্ন কারাগারে ৩ হাজার ৫৩৬ জন বাংলাদেশি আটক আছেন।

মৃত্যু পরোয়ানা ৩১ জনের : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশির মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৯, সৌদি আরবে ৯, মালয়েশিয়ায় ৩, কাতারে ৩, জর্ডানে ২, কুয়েতে ১, বাহরাইনে ১, সিঙ্গাপুরে ১, ওমানে ১ ও মিসরে ১ জন রয়েছেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ বিদেশি নাগরিক হত্যা বা সহায়তার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। অনেকে আবার হত্যা ও ধর্ষণ উভয় দোষে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে একাই মালয়েশীয় একটি পরিবারের সাতজনকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছেন, নিজ দেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেক অভিযুক্তের পক্ষে আইনি সহায়তা দেওয়া হয়। বিদেশে অভিযুক্ত ব্যক্তির কোনো স্বজন না থাকলে রাষ্ট্রই আদালতে লড়াই করে।

ইন্টারপোলের রেড নোটিস : বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত পলাতক ১৬ বাংলাদেশিকে আটক করতে বিশ্বের সর্বোচ্চ পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল রেড নোটিস জারি করে। কানাডা, ভারত, বেলজিয়াম ও দুবাই থেকে এ রেড নোটিস জারি করা হয়। প্রতারণা ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি, জালিয়াতি ও চুরির অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রবাসজীবনে প্রতারণাসহ নানা অপকর্মের অভিযোগে ওইসব দেশের আদালতে মামলা হয় ওই ১৬ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে। তারা গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হওয়ায় ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়। তা ছাড়া ওইসব দেশের নিরাপত্তারক্ষীরা বাংলাদেশ পুলিশকেও তাদের সম্পর্কে অবহিত করেছে। বাংলাদেশ পুলিশের মাধ্যমে ইন্টারপোল সদর দফতরে ১১ প্রতারকের ছবি পাঠিয়ে আটকের অনুরোধ জানানো হয়। প্রথমে ইন্টারপোল তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। পরে রেড নোটিস জারি করে ৮৪টি দেশে বিশেষ সতর্কবার্তা পাঠানো হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর