শিরোনাম
শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

এপ্রিলের মধ্যে সিম নিবন্ধন শেষ করতে চ্যালেঞ্জে সরকার

আহমদ সেলিম রেজা

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগামী এপ্রিলের মধ্যে সিম নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করা নিয়ে চ্যালেঞ্জে পড়েছে সরকার। দেশে চালু থাকা মোট সিমের তিন ভাগের এক ভাগও এখনো বায়োমেট্রিক বা আঙ্গুলের ছাপ পদ্ধতিতে নিবন্ধন করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে আবার সিম নিবন্ধনে আঙ্গুলের ছাপ পদ্ধতির বৈধতা নিয়ে আদালতে রিট করায় এই কার্যক্রমে আরও খানিকটা ভাটা পড়েছে। ফলে আগামী এক মাসের মধ্যে আদৌ অর্ধেক সিম নিবন্ধনও সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। গ্রাহকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে দোমনা ভাব। ৬ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানান, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে এখন পর্যন্ত ২ কোটি ৫৩ লাখ সিম নিবন্ধিত হয়েছে। এ সংখ্যা বর্তমানে চালু থাকা ১৩ কোটি ১৯ লাখ সিমের ১৯ শতাংশ। জানা যায়, রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি একেএম সাহিদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ ১৪ মার্চ সরকারের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। রুলে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সিম নিবন্ধন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না—তা জানতে চাওয়া হয়। এই রুলে সরকারের পাশাপাশি গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি, এয়ারটেল, সিটিসেল ও টেলিটক কর্তৃপক্ষকে পার্টি করা হয়েছে। আদালতের এই নির্দেশনার পর সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক বায়োমেট্রিক পয়েন্টই এখন উঠে গেছে। বিশেষ করে রাজধানীর বিভিন্ন ফোনসেট বিক্রির দোকানে আগে যারা দুপয়সা উপরি কামানোর জন্য সিম নিবন্ধন শুরু করেছিল, তাদের অনেকেই তা বন্ধ করে দিয়েছেন। এর কারণ জানতে চাইলে অনেকে বলছেন, এর আগেও আদালতের রায়ে নিবন্ধন বাতিল হয়েছিল। নতুন করে আর ঝামেলায় পড়তে চাই না। সাধারণ গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলেও সিম নিবন্ধনে অনাগ্রহের বিষয়টি পাওয়া গেছে। এ দিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলছেন, অপপ্রচার ও  গুজবের ভিত্তিতে কোনো মামলা হলে তার মেরিট থাকে না। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন চলছে এবং চলবে। উল্টো চ্যালেঞ্জ হিসেবে তিনি বিষয়টিকে আইনগতভাবে মোকাবিলার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, সময়মতো আমরা আদালতে হাজির হব এবং আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর যুক্তি আদালতে উপস্থাপন করা হবে। একটি বিশেষ মহল এই অপপ্রচার চালাচ্ছে। একইভাবে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন বলেন, ওই যন্ত্রে আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করার কোনো প্রযুক্তি নেই। আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে সিম নিবন্ধন করা হচ্ছে তা শুধু অনলাইনে যাচাই করা হচ্ছে, এনআইডি ডাটাবেজ থেকে কোনো তথ্য বের হয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।

ভুয়া সিম শনাক্ত করতে সিমবক্স ডিটেকশন সিস্টেম : ডাকও টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার কাজে ব্যবহূত ভুয়া রেজিস্ট্রেশনকৃত সিম এবং অবৈধ সিম ব্যবহারকারীদের নিরুৎসাহিত করতে বিটিআরসি ‘সিমবক্স ডিটেকশন সিস্টেম’ চালু করেছে। এ ছাড়া সেলফ রেগুলেটরি পদ্ধতিতে অবৈধ সিম শনাক্তকরণের মাধ্যমে অবৈধ ভিওআইপির ওপর নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিভিন্ন ফোন কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারের এসব পদক্ষেপ অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। বিটিআরসি জানায়, গত বছর পর্যন্ত ৫৫ লাখ ৫৮ হাজার ৩৭২টি অবৈধ ভিওআইপি সিম বন্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে সেলফ রেগুলেশনে ৫২ লাখ ১১ হাজার ৩১১টি সিমবক্স ডিটেকশন সিস্টেমে ২ লাখ ২৬ হাজার, ৭৪৯টি, ভিওআইপি অপারেশনের মাধ্যমে ১ লাখ ২০ হাজার, ৩১২টি সিম বন্ধ করা হয়।  গত ১ জানুয়ারি থেকে যে কোনো সেলফোন গ্রাহক স্বতপ্রণোদিত হয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করতে পারবেন বলে বিটিআরসি জানায়। নিবন্ধিত ও নিবন্ধনের বাইরে থাকা সব সিমের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পুনর্নিবন্ধন বাধ্যতামূলক ঘোষণা করা হয়। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে সিম নিবন্ধন করতে যারা ব্যর্থ হবে তাদের সিম বন্ধ করে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেয় সরকার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর