শিরোনাম
শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

শেষ হয় না ঢাকার খনন কাজ

সাঈদুর রহমান রিমন

শেষ হয় না ঢাকার খনন কাজ

গুলশান-১ থেকে ২ ব্যস্ততম সড়ক কেটে কাজ চলছে দীর্ঘদিন —রোহেত রাজীব

বছরজুড়েই অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি-কাটাছেঁড়ায় গুলশান-বনানীর সড়কগুলো বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। কোথাও চলছে স্যুয়ারেজ লাইনের প্রশস্ত পাইপ বসানোর কাজ। আবার কোথাও চলছে ওয়াসার পানি সরবরাহের লাইন মেরামত। টিএন্ডটি ও বিদ্যুৎ বিভাগের ভূগর্ভস্থ লাইন সংস্কার করতেও মাঝ বরাবর সড়ক কেটে চষা জমি বানিয়ে রাখা হয়েছে। ঢাকার বহু সড়কের এখন এই করুণ চিত্র। শেষই যেন হচ্ছে না খনন কাজ। দিন, সপ্তাহ পেরিয়ে কয়েক মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও এসব সড়ক চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে না।

বিভিন্ন সংস্থার লাইন কিংবা স্যুয়ারেজের পাইপ বসানোর জটিলতাতেই শুধু সড়ক বন্ধ থাকছে তা নয়। সংলগ্ন ড্রেন পরিষ্কার করার ক্ষেত্রেও ব্যস্ততম সড়কের অর্ধেকটা পরিত্যক্ত করে ফেলা হয়েছে। গুলশান এভিনিউ, নিকেতনমুখী লিংক রোড, গুলশান ১ থেকে গুলশান ২ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত এবং কূটনৈতিক এলাকা খ্যাত বারিধারার প্রধান সড়ক প্রগতি সরণির অর্ধেক ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা তুলে আটকে রাখা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা বলেছেন, তরল ময়লা রাস্তার ওপর কয়েক দিন রাখা হলে তা রোদে শুকিয়ে বহনযোগ্য হয়, এরপরই ট্রাকে তুলে তা অন্যত্র নেওয়া হয়। কিন্তু ড্রেন সংলগ্ন রাস্তার একাংশ জুড়ে ফেলে রাখা ময়লা-আবর্জনা ১০-১২ দিন ধরেই দেখতে পাচ্ছেন বাসিন্দারা।

গুলশান ২ নম্বর গোলচত্বরের উত্তর পাশে ডিপিডিসি রোডের বেশির ভাগ এলাকা ময়লা-আবর্জনায় আটকে রাখা আছে। রাস্তাটির দক্ষিণ মুখে আছে ড্রেনের জন্য কাটাকাটি। দুই নম্বর গোলচত্বর পেরিয়ে বনানীর কাকলী মোড়ের দিকে এগোতেই কামাল আতাতুর্ক এভিনিউর দুই পাশেই খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। গুলশান ১ নম্বর গোলচত্বর পেরিয়ে সিটি করপোরেশন মার্কেটের পাশ থেকে কয়েকশ গজ সড়কে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে যানবাহন চলাচল বন্ধ। বাঁশের আঁকাবাঁকা বেড়া, ড্রামের প্রতিবন্ধকতা পাশ কাটিয়ে বিপজ্জনকভাবে বাস-মিনিবাস যাতায়াত করে উল্টো রাস্তায়। সেখানে সড়কের বিরাট অংশ ঘেরাও দিয়ে খোঁড়াখুঁড়ির মাধ্যমে বড় ব্যাসার্ধের স্যুয়ারেজ লাইন বসানোর কাজ চলছে। এ নির্মাণ কাজের জন্য গুলশান ১ নম্বর থেকে মহাখালীগামী সড়ক এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ৯টি লিংক রোডে যাতায়াতকারী যাত্রীরা দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন। আজাদ মসজিদ সংলগ্ন রাস্তার মাঝামাঝিতে এবং ধানসিঁড়ি হোটেল গলির অর্ধেকটা জুড়ে খুঁড়ে রাখা হয়েছে দুই মাস আগে। ঠিকাদারের সঙ্গে জটিলতার কারণে সেখানে ওয়াসার কাজ স্থগিত থাকলেও রাস্তাটি খুলে দেওয়া হয়নি আর। ফলে চারটি রোডের বাসিন্দারা ঘুরপথে জ্যাম ঠেলে যাতায়াতে বাধ্য হচ্ছেন। খোঁড়াখুঁড়ির এসব রাস্তায় সবচেয়ে বিপাকে পড়ে স্কুলগামী ছেলেমেয়েরা। রিকশাভ্যান বদল করেও যথাসময়ে স্কুলে পৌঁছাতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। রাস্তায় গাড়ি বদলের ধকলের কারণে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও থাকছেন টেনশনে।

গত কয়েক দিন রাজধানীর অভিজাত এলাকা উত্তরা মডেল টাউনের বিভিন্ন রাস্তা, গুলশান, বনানী, বারিধারা, তেজগাঁও, ফার্মগেট, কুড়িল, বাড্ডা, রামপুরা ও মিরপুরে সরেজমিন পরিদর্শন করে রাস্তাঘাটের বেহালদশা দেখা গেছে। বাসিন্দারা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে মেরামত ও সংস্কারহীন অবস্থায় থাকার কারণে একেকটি সড়ক অনেকটা চাষাবাদের জমির আকৃতি নিয়েছে। এসব রাস্তায় হেঁটে চলাও কষ্টকর। সেখানে চলছে বাস, মিনিবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজি, অটোরিকশা। ভাঙাচোরা, খানাখন্দে পূর্ণ রাস্তা এখন রাজধানীর অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাসাবাড়ি থেকে গেট গলিয়ে বেরিয়ে পথে পা রাখার যেন উপায় নেই। বিভিন্ন সেবা সংস্থার রাস্তা কাটাকাটি, সড়ক মেরামতের জন্য পিচ-সুরকি ভেঙেচুরে রাখা, চারদিকে পানি জমে কাদা-আবর্জনায় পিচ্ছিল হয়ে আছে রাস্তা। বাড্ডা-ভাটারা এলাকার অনেক রাস্তা দিনের পর দিন নোংরা অবস্থায় থাকায় কোনটা রাস্তা, কোনটা ড্রেন-নর্দমা তা মানুষ ভুলে যেতে বসেছে। পা বাড়ালেই গর্ত। পানিভর্তি খোলা ড্রেনে আটকে পড়ে যানবাহনের চাকা, উল্টে যায় মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা।

রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে শাখা রোড, অলিগলি, রাস্তাঘাটের অভিন্ন অবস্থা। প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। তবু মাসের পর মাস তা মেরামত হয় না। মেরুল বাড্ডার দক্ষিণ বারিধারা আবাসিক এলাকার (ডিআইটি প্রজেক্ট) প্রায় সব সড়কের বেহাল দশা। ওই এলাকার ১৫টি সড়কের মধ্যে ১৪টিতেই রিকশা-সিএনজি অটোরিকশা চলাচলের উপায় নেই। সড়কগুলোতে বড় বড় গর্ত। কোনো কোনো গর্ত ডুবে আছে ড্রেন উপচানো পানিতে। এসব গর্ত লাফিয়ে ডিঙিয়ে পথ চলে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ হাজারো পথচারী। এলাকার ১০ নম্বর সড়কের মুখে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহার। এ সড়কের অবস্থা এতটাই বেহাল যে, হেঁটে যাতায়াত করাও কষ্টকর। রাজধানীর মডেল টাউন উত্তরার রাস্তায় নাগরিকরা যে কী ধরনের ভোগান্তি পোহাচ্ছেন, তা চোখে না দেখলে বোঝার উপায় নেই। একদিকে যেমন নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে সময় বেশি লাগছে আবার ভাড়াও গুনতে হচ্ছে অনেক বেশি। মাঝেমধ্যে রিকশা কিংবা অটোরিকশা উল্টে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেকে। ৩ ও ৪ নম্বর সেক্টরের শাখা সড়কগুলো, ৬ নম্বর সেক্টরে আজমপুর বিজিবি কাঁচাবাজারের সামনের সড়ক, নওয়াব হাবিবুল্লাহ স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে রেল লাইন পর্যন্ত সড়কটি খানাখন্দে ভরা। ৭ নম্বর সেক্টরে পার্ক ও উত্তরা হাইস্কুলের সামনে-পেছনের সড়ক দুটির অবস্থা আরও নাজুক। এ ছাড়া ৮ ও ৯ নম্বর সেক্টরের রাস্তায় রিকশায় যাতায়াতেরও যেন উপায় নেই। ঢাকার সঙ্গে পূর্বাচল নতুন শহরের সংযোগ স্থাপন, বিমানবন্দর সড়ক ও প্রগতি সরণি সংযোগস্থলে যানজট কমানো, নগরীর উত্তর-পশ্চিমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নির্মাণ হয়েছে কুড়িলের উড়ালসড়কটি। তবে উড়ালসড়কের ওঠানামার পথে বিপজ্জনক গর্ত, ভাঙাচোরা সুরকি বের হওয়া রাস্তায় গাড়ি চালাতে বেশ বিপাকে পড়েন চালকরা। বিমানবন্দর সড়ক থেকে এই উড়ালসড়কে ওঠার সময় খিলক্ষেতেই পড়তে হয় গর্তে। গাড়িচালকদের সন্তর্পণে এগোতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে এ গর্তের জন্য তৈরি হচ্ছে যানজট, কিন্তু তা মেরামতে উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। একইভাবে সায়েদাবাদে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে সাঁই সাঁই করে চলে গাড়ি। কিন্তু এর নিচেই রাস্তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। যেদিকে চোখ যায় শুধু গর্ত আর গর্ত। এর মধ্যেই আটকে থাকে বাস, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশাসহ শত শত যানবাহন। রাস্তা দেখেই বোঝা যায়, পিচ উঠে গেছে বহু আগে, আর পানি জমতে জমতে গভীর হয়েছে গর্তগুলো। মেয়র হানিফ উড়ালসড়ক পড়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায়। রাস্তার দুর্দশা ঘোচানোর কথা বলে সংস্কারের অর্থ নেওয়া হচ্ছে ঠিকই, রাস্তা আর ঠিক হচ্ছে না। জানা গেল, গত অর্থবছরে সেখানে সংস্কারের জন্য ৭২ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। আরও সাত কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে ড্রেনেজ সিস্টেম উন্নয়নের জন্য। কিন্তু এত টাকা কোথায় ব্যয় হলো, কোথায় সংস্কার হলো রাস্তা, তা ভেবে পান না স্থানীয় বাসিন্দারা। উড়ালসড়ক নির্মাণের সবচেয়ে ভয়াবহ খেসারত দিচ্ছেন বাংলামোটর-মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ এবং মগবাজার থেকে সাতরাস্তা মোড় পর্যন্ত চলাচলকারী মানুষজন। ব্যস্ততম এ দুটি সড়কের কয়েক কিলোমিটার জুড়ে কাটাকাটি, মাটি উত্তোলন করে স্থানে স্থানে ঢিবি বানানো, নির্মাণসামগ্রী যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখায় বেহাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ওই এলাকায় চলাচলকারী যাত্রীসহ বাসিন্দারা তিন বছর ধরে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। বর্ষা মৌসুম না হলেও রাজধানী ঢাকা যেন খানাখন্দ আর গর্তের শহর হয়ে গেছে। দক্ষিণের যাত্রাবাড়ী-শ্যামপুর থেকে উত্তরের উত্তরা, পূর্বের বাসাবো থেকে পশ্চিমে গাবতলী পর্যন্ত সর্বত্রই একই অবস্থা। সরেজমিন দেখা যায়, গেণ্ডারিয়া এলাকার রাস্তা, খিলগাঁও এবং রামপুরার বেশির ভাগ রাস্তা, পূর্ব রামপুরার ঝিলকানন, হাজীপাড়া, জাকের রোড, কুঞ্জবন সড়কসহ আশপাশের অলিগলি, মিরপুরের মাজার রোড, গাবতলী, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বাড্ডার রাস্তাঘাট, বাংলামোটর-মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ এবং মগবাজার থেকে সাতরাস্তা মোড় পর্যন্ত রাস্তায় যাতায়াতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর