শিরোনাম
শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

বনানীতে গ্যাস বিস্ফোরণে ভবনে ব্যাপক ক্ষতি, আহত ২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

বনানীতে গ্যাস বিস্ফোরণে ভবনে ব্যাপক ক্ষতি, আহত ২৫

গ্যাস লাইনের বিস্ফোরণ হয়ে আগুনে রাজধানীর বনানীর একটি ৬ তলা ভবন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গতকাল বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ভবনটি বসবাসের অযোগ্য ঘোষণা করেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর বনানীতে গ্যাস লাইনে বিস্ফোরণে ছয়তলা একটি ভবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাশের আরও অন্তত ৫টি বহুতল ভবন। গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ২টার দিকে বনানীর ব্লক-বি, রোড-২৩ এর ‘সিলভারস্টোন    সাফারি’ নামক ষষ্ঠতলা ভবনের কাছে এই বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে গেলে গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে তিনজন দগ্ধসহ প্রাণ বাঁচাতে হুড়োহুড়ি করে ভবন থেকে নামতে গিয়ে আরও ২২ জন আহত হন। আহতদের  বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ১৫টি ইউনিটের সাহায্যে রাতভর চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার জন্য গ্যাস লাইনের ত্রুটিকে দায়ী করেছেন স্থানীয়রা। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই যে, সেগুলোতে কোনো মানুষ বসবাস করতেন। বিস্ফোরণে ভবনগুলোর দেয়াল ও জানালা কপাট যেমন ধসে গেছে, তেমনি আগুনের ধোঁয়ায় কালো রংয়ের রূপ পেয়েছে। ওই বাড়ির মালিক শামসুল আলম বলেন, তার ভবনে ২০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ভবনের সামনে তিন দিন ধরে রাস্তা কেটে ওয়াসার কাজ চলছে। এ সময় গ্যাসের লাইন ফুটো হয়ে গ্যাস বের হতে থাকে। পরে বিষয়টি তিতাস কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হয়। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তিতাস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলেও তিনি জানান। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ভবনের ভিতরে আগুন লাগায় বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকে আতঙ্কে ছাদে গিয়ে আশ্রয় নেন। তৃতীয়তলা থেকে ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রথমে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে আটকে পড়াদের উদ্ধারে কাজ শুরু করা হয়। রাত ৩টার দিকে তিতাস গ্যাসের একটি গাড়ি এসে ওই ভবনের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে।

ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি ও আগুন নেভানোর কাজ পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি বলেন, আমরা এখানে দেখেছি নিচে গ্যাস লাইনে লিক করছে। এ থেকে আগুন লাগতে পারে। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে ভবনটি পরীক্ষা করা হবে। পরে নিশ্চিত হয়ে এর বাসিন্দাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কারও গাফিলতি থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, ভবনের দরজা-জানালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে বিভিন্ন ফ্লোর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুরো ভবন। ভেঙেছে দেয়াল। আগুনে পুড়েছে বাসার ব্যবহূত সরঞ্জাম। টুকরো টুকরো হয়েছে জানালার কাচ। ভবনের বাসিন্দাদের বের করে আনা হয়েছে। ভিতরে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। ভবনের সামনে পুলিশ কন্ট্রোল রুম বসানো হয়েছে। ৯ নম্বর বাড়ি ছাড়াও গ্যাস বিস্ফোরণে ৭, ১৪, ৯২, ৯৪, ৯৬ নম্বর বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ওই বাড়ির ৪র্থ তলার বাসিন্দা ইবনে চৌধুরী বলেন, আগুন জ্বলে ওঠার সময় বিকট শব্দ হয়। এ সময় তিনিসহ পরিবারের অনেকেই নিচে বা ছাদে চলে যান। তাদের মতো ২০টি পরিবারের একই অবস্থা হয়। বাসায় উঠতে না পেরে কষ্টের পরিধি বাড়ছে। গ্যাসের পাইপ লাইন থেকেই আগুনের সূত্রপাত বলে তিনি মনে করেন। ১৪ নম্বর বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী মিলন বলেন, রাস্তায় কয়েক দিন ধরে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। গত বুধবার রাত ২টার দিকে গ্যাসের লাইন ফুটো হয়ে যায়। শোঁ শোঁ শব্দে গ্যাস বের হচ্ছিল। রাস্তায় জমে থাকা পানিতে বুদ্বুদ করতে দেখা যায়। সেখানে গ্যাসের গন্ধও পাওয়া যাচ্ছিল। অভিযোগ দেওয়া হলে বালু দিয়ে ভরাট করে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া গেলে তিতাস কর্তৃপক্ষকে বলা হলে তারা বলেন, আপনারা সতর্কভাবে থাকবেন পাশাপাশি আমাদের লোকও থাকবে। তিতাস কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই বিস্ফোরণের ঘটনা। তিতাস গ্যাসের পরিচালক (অপারেশন) এইচ এম আলী আশরাফ বলেন, ভবনের বাসিন্দাদের অভিযোগ পাওয়ার পরও তিতাস গ্যাস ব্যবস্থা নেয়নি কথাটি ঠিক নয়। কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত করা হবে। এরপরই আগুনের কারণ বেরিয়ে আসবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর