শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

আজও স্বীকৃতি পাননি নওগাঁর ৯ বীরাঙ্গনা

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

স্বাধীনতার ৪৪ বছর পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত রানীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের আতাইকুলা পালপাড়া গ্রামের ৯ বীরাঙ্গনা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি। ফলে সরকার ঘোষিত সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন তারা।

এই বীরাঙ্গনারা হলেন আতাইকুলা গ্রামের প্রয়াত বাণী রানী পাল, রেনু বালা, ক্ষান্ত বালা পাল, মায়া সূত্রধর, সুষমা সূত্রধর, রাশমুনী সূত্রধর, কালীদাশী পাল, সন্ধ্যা পাল ও সুষমা পাল। সামাজিক বঞ্চনা এবং দুঃখ-দুদর্শা-অসুস্থতার মধ্যদিয়ে তারা জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে ৪৪ জনের মতো বীরাঙ্গনা নারীকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও সেই তালিকায় উত্তর জনপদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত আবদুল জলিলের জন্মভূমি রানীনগরের ৯ জন বীরাঙ্গনার নাম তালিকাভুক্ত হয়নি। এতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা হতাশ হয়ে আছেন। প্রসঙ্গত, রানীনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে নওগাঁর ছোট যমুনা নদীর তীরে ছায়াঘেরা শান্ত আতাইকুলা পালপাড়া গ্রামে ’৭১-এর ২৫ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের স্থানীয় দোসর রাজাকার আলবদরদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পৈশাচিকতা চালায়। এ সময় গণহত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ সংখ্যালঘু পরিবারের  কিশোর, যুবক, মাঝ বয়সী ও বিভিন্ন বয়সী নারীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রামের সুরেস্বর পালের বাড়ির বারান্দায় ব্রাশফায়ার করে গোবিন্দচরণ পাল, সুরেশ্বর পাল, বিক্ষয় সূত্রধর, নিবারণ পালসহ ৫২ জন মুক্তিকামী জনতাকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। সরেজমিন সম্প্রতি আতাইকুলা গ্রামে গিয়ে কথা হয় বীরাঙ্গনা কালীদাশি পালের (৭২) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার এক ছেলে আছে। অভাবের সংসারে সে দিনমজুরের কাজ করে। আমিও পেটের তাগিদে কখনো ধান কুড়িয়ে, বয়লারের চাতালে কাজ করে, কিংবা অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করে দু-মুঠো ডাল ভাত খেয়ে কোনোমতো বেঁচে আছি। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পার হলেও আমাদের খোঁজখবর কেউ নেয়নি।’ প্রায় একই কথা বলেন বীরাঙ্গনা সুষমা পাল (৬৯), সদ্য প্রয়াত বাণী রানী পালের মা ও ছোট ভাই জয়ন্ত পাল, রেণু বালা, ক্ষান্ত বালা পাল, মায়া সূত্রধর, রাশমুনী সূত্রধর, সন্ধ্যা পাল, সুষমা সূত্রধর। আতাইকুলা গ্রামের শহীদ পরিবারের সদস্য গৌতুম পাল জানান, স্বাধীনতার সাড়ে চার দশক সময় অতিবাহিত হলেও এই গ্রামের শহীদ ও বীরাঙ্গনার পরিবারের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি। এমনকি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তাদের স্থান হয়নি। রানীনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সহকারী কমান্ডার (সাংগঠনিক) নূরুল ইসলাম বলেন, আতাইকুলার ৯ বীরাঙ্গনার ব্যাপারে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করা হয়েছে। আমরা এখন গেজেটভুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছি। স্থানীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম বলেন, আতাইকুলা গ্রামের ৯ বীরাঙ্গনার ব্যাপারে নিয়মমাফিক যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যাতে তারা তালিকাভুক্ত হতে পারেন, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর