বুধবার, ৩০ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

স্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে বিমান ছিনতাই, পরে আটক

প্রতিদিন ডেস্ক

বিমান ছিনতাই নিয়ে জমজমাট নাটক দেখল সাইপ্রাসের লারনাকা বিমানবন্দর। মিসরীয় বিমান সংস্থার ‘ইজিপ্টএয়ার’-এর ওই এমএস-১৮১ এয়ারবাসটিতে ছিলেন ৫৬ জন যাত্রী ও সাতজন বিমানকর্মী। এই আরোহীদের জিম্মি করে একজন ছিনতাইকারী। এই জিম্মি অবস্থা চলে প্রায় ছয় ঘণ্টা। পরে অবশ্য একে একে সব আরোহীকে মুক্তি দেন ছিনতাইকারী। এরপর তিনি নেমে আসেন এবং পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। আর এই ছিনতাইকারী কিন্তু যেনতেন ব্যক্তি নন। তিনি মিসরের বিখ্যাত আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিনের অধ্যাপক। তার নাম সাইফ এলদিন মুস্তাফা। প্রাক্তন স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য তিনি এ কাজ করেছেন বলে জানা গেছে। এই বিমান ছিনতাই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় বলে জানিয়েছেন সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট।

বিমানটি মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া থেকে কায়রো যাওয়ার পথে গতকাল ছিনতাই হয়। পরে বিমানটিকে সাইপ্রাসের লারনাকা বিমানবন্দরে অবতরণে বাধ্য করা হয়। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ছিনতাইকারী যাত্রীবেশে ছিলেন। তার শরীরে বিস্ফোরকের বেল্ট বাঁধা আছে বলে দাবি করেন তিনি। এরপর তিনি ক্রুদের সাইপ্রাসের দিকে বিমানটিকে নিয়ে যেতে নির্দেশ দেন। ইজিপ্ট এয়ার জানায়, লারনাকা বিমানবন্দরে বিমানটি অবতরণের একপর্যায়ে সমঝোতার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে একজন ক্রু ও চারজন বিদেশি যাত্রী বাদে সবাইকে ছেড়ে দেন ছিনতাইকারী।

এ সময় বিমান-যাত্রীদের আত্মীয়-স্বজনের চোখে-মুখে ছিল উদ্বেগের ছাপ। যারা সে সময় মুক্তি পান, তারা এবং তাদের পরিজনরা বিশ্বাস করে উঠতে পারছিলেন না তারা মুক্ত। কিন্তু যারা সেই সময়েও বিমানে আটক ছিলেন সেই যাত্রী আর তাদের পরিজনদের অবস্থাটা কেমন, তা বলাই বাহুল্য! লারনাকা বিমানবন্দরে নামার পর বিমানটির ধারে-কাছেই ঘেঁষতে পারছিলেন না সাইপ্রাসের পুলিশ ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা রক্ষীরা। ছিনতাইকারী সাইফ এলদিন হুমকি দেন। তারা ধারে-কাছে এলেই বোমা বা বিস্ফোরক দিয়ে বিমানটি উড়িয়ে দেবেন।

ছিনতাইয়ের ছয় ঘণ্টা পর বিমান থেকে বাকি জিম্মিরা নেমে যাওয়ার পর ছিনতাইকারী আত্মসমর্পণ করেন। এক টুইট বার্তায় সাইপ্রাসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায় বিমান ছিনতাইয়ের পরিসমাপ্তি হয়েছে। ঘটনার পর লারনাকা বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়। নির্ধারিত ফ্লাইটগুলো অন্যত্র ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।

অধ্যাপক ছিনতাইকারী : সাইপ্রাসের পুলিশ জানায়, তারা খবর নিয়ে জেনেছে, ছিনতাইকারী সাইফ এলদিন আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিনের অধ্যাপক। প্রাক্তন স্ত্রীর সঙ্গে তার বহু দিন দেখাশোনা, কথাবার্তা নেই। কিন্তু তাকে তার দেখার ইচ্ছে খুব। তার সঙ্গে দেখা করতে চান সাইফ। আর তার স্ত্রী থাকে সাইপ্রাসেই। এজন্য তিনি কিছু দিন আগে সাইপ্রাসে আশ্রয় চেয়েছিলেন। তা না পেয়েই নাকি সাইপ্রাস সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বিমান ছিনতাই করেছেন। গতকাল লারনাকা বিমানবন্দরে ছিনতাই হওয়া বিমানের ককপিট থেকেই আরবি ভাষায় লেখা একটি চিঠি ছুড়ে দেন সেই অধ্যাপক। সেই চিঠিটি তার প্রাক্তন স্ত্রীর উদ্দেশে লেখা। প্রেমের চিঠি। বিরহ- বেদনারও! এএফপি, বিবিসি।

সর্বশেষ খবর