বুধবার, ৩০ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

আতঙ্কে বিএনপি প্রার্থী পোলিং এজেন্ট

শাহজাদা মিয়া আজাদ, রংপুর

আতঙ্কে বিএনপি প্রার্থী পোলিং এজেন্ট

দ্বিতীয় দফা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে কাল ভোটযুদ্ধে অংশ নেবেন রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ১১ ইউনিয়নের ভোটাররা। সর্বত্র উৎসবমুখর পরিবেশ। কে চেয়ারম্যান আর কে মেম্বার পদে বিজয়ী হবেন, শেষ সময়ে ভোটার এমন হিসাব-নিকাশ কষতে শুরু করেছেন। তবে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এবং তাদের পোলিং এজেন্টদের নানাভাবে হুমকি অব্যাহত রাখায় উৎসবমুখর এ নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা-শঙ্কা রয়েছে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে। গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ১১টি ইউনিয়নেই চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকা পীরগঞ্জ। নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা এখান থেকে এমপি নির্বাচিত হন। কিন্তু বিগত উপজেলা নির্বাচনে এখানে বিএনপির প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এ নিয়ে দলের স্থানীয় নেতারা শেখ হাসিনার তোপের মুখে পড়েন। এবার ইউপি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা যাতে নির্বাচিত হতে না পারেন সে জন্য জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করছেন। পাশাপাশি তারা প্রতিদ্বন্দ্বী ও তাদের পোলিং এজেন্টদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভেণ্ডাবাড়ী ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌফিকুর রহমান জুয়েল অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার বিজয় নিশ্চিত জেনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও তার কর্মীরা আমাকে এবং আমার পোলিং এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক, যারা আমার সমর্থনে প্রচারণায় নেমেছেন, তাদের ‘‘চাকরি খেয়ে নেওয়ার’’ হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।’ একই অভিযোগ করেন পাঁচগাছী ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী নজরুল ইসলামসহ দলটির একাধিক প্রার্থী।

ভেণ্ডাবাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী তাজিমুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের পুত্রবধূ। এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছেন। এখন তার দলের নেতারা বিভিন্ন চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের পোলিং এজেন্টদের হুমকি দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে আমরা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারব কি না এ নিয়ে সংশয়ে আছি।’ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের পোলিং এজেন্টদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। প্রশাসনে অভিযোগ করার পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। নিরাপত্তার ভয়ে অনেক পোলিং এজেন্ট দায়িত্ব পালনে রাজি হচ্ছেন না। বেছে বেছে দলীয় সমর্থকদের প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এ ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহাতাব হোসেন বলেন, বিএনপি প্রার্থী তৌফিকুর রহমান জুয়েল বিভিন্ন সমস্যার কথা বলেছেন। তাকে লিখিতভাবে অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত তিনি অভিযোগ করেননি। এদিকে কুমেদপুর ইউনিয়নে গিয়ে জানা গেল, এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক লাল। এলাকায় তার যথেষ্ট জনপ্রিয়তা থাকায় মোজাম্মেল হক লালকে জেলা নেতারা মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও পীরগঞ্জ উপজেলা নেতারা তাতে সায় না দিয়ে মুসলিম লীগ নেতার ছেলে ফুয়াদ চৌধুরীকে মনোনয়ন দেন। জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মকবুল হোসেন আকস্মিকভাবে ফুয়াদ চৌধুরীকে সমর্থন দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে মকবুল হোসেনকে বয়কট করে মোজম্মেল হক লালকে সমর্থন দিয়ে তার পক্ষে প্রচারণায় নামেন। লাল অভিযোগ করেন, দলীয় প্রার্থীর পরাজয় নিশ্চিত জেনে ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা তার পোলিং এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ করেও কোনো ফল হচ্ছে না। অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বড়দরগাহ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী মোতাহেরুল হক বাবলু বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হবে। পরাজয় নিশ্চিত জেনে বিএনপি নেতা ও চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিভ্রান্তিমূলক কথা বলছেন। পীরগঞ্জ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকা। দলীয় প্রভাব খাটালে উপজেলা নির্বাচনে এখানে বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হতে পারতেন না। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কে এন রায় নিয়তি জানান, হুমকি-ধমকির মতো কোনো লিখিত অভিযোগ রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। পেলে ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জানান, ১১টি ইউনিয়নে ১০৭টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৮৫টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ১১ ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৯৯ হাজার ৩৪৯ জন।  ১১টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ১১, বিএনপির ৮, জাতীয় পার্টির ৮ এবং সিপিবি ও জাকের পার্টির একজন করে প্রার্থী রয়েছেন। অন্যরা স্বতন্ত্র প্রার্থী। এ ছাড়া সংরক্ষিত মহিলা আসনে ১৩৭ জন এবং সদস্য পদে ৪৪১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সর্বশেষ খবর