শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

দুর্নীতি করবেন না প্রশ্রয়ও দেবেন না

সিভিল সার্ভিসের নবনিযুক্ত ক্যাডারদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতি করবেন না প্রশ্রয়ও দেবেন না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল পি-৬০তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

কোনো দুর্নীতিতে নিজেকে জড়াব না এবং কারও দুর্নীতি প্রশ্রয় দেব না— এই আদর্শ নিয়ে কাজ করার জন্য সিভিল সার্ভিসের নবনিযুক্ত ক্যাডারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেন, মনে রাখতে হবে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়ে যেন আমাদের কাজের গতি ধীর না হয়। জনগণকে কখনই অবহেলা করা যাবে না। কারণ জনগণের অর্থেই আমাদের বেতন-ভাতা সব কিছু আসে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল দুপুরে বাংলাদেশ জনপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) ৬০তম ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্সে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, সিভিল সার্ভিসের প্রত্যেক সদস্যের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের সেবায় সর্বোত্তম প্রয়াস চালানো। জনগণের সেবক হিসেবে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, অবশ্যই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে। কারণ আইনের শাসন ছাড়া কোনো উন্নয়ন-অগ্রগতি হয় না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিটি জনগণের সামাজিক নিরাপত্তার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। সর্বোপরি আপনাদেরকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন জোরদারে গৃহীত প্রকল্পসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা লাভের পরপরই ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ এবং পাশাপাশি একটি স্বাধীন দেশের উপযোগী প্রশাসন ব্যবস্থা চালুর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর পরবর্তী শাসকরা এসব গণমুখী উদ্যোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এবং বিএপিটিসি’র রেক্টর এএলএম আবদুর রহমান এবং অংশগ্রহণকারীদের পক্ষে হিয়া পাল এবং সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বক্তব্য রাখেন। মুক্তিযুদ্ধকালে বাঙালি সরকারি কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক সরকারি কর্মকর্তা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং দেশকে মুক্ত করতে শাহাদাতবরণ করেছেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনেও সরকারি কর্মকর্তারা ব্যাপক অবদান রেখেছেন। তিনি বলেন, সিভিল-মিলিটারি কোনো জায়গায় বাঙালিরা উচ্চ পদে যেতে পারত না। বঙ্গবন্ধু ছয় দফা ঘোষণার পরে কিছুটা হয়েছিল। দেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই এখন সব উচ্চ পদে বাঙালিরা জায়গা পাচ্ছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আমাদের প্রশিক্ষণ জরুরি। প্রশিক্ষণ ছাড়া কোনো কাজের উত্কর্ষ সম্ভব নয়। তিনি বলেন, কর্মকর্তাদের অবসর গ্রহণের বয়স বৃদ্ধি করা হয়েছে। সর্বোচ্চ ১২৩ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করে নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমার জানা নেই অন্য কোনো দেশ বা সরকার সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা এত বেশি বৃদ্ধি করে কিনা। আমি আশা করি, এই বেতন-ভাতা বৃদ্ধির ফলে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে সন্তুষ্টি বিরাজ করবে, তাদের পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে আসবে এবং তাদের দুর্নীতি থেকে দূরে রাখবে। তিনি বলেন, আমরা গত সাত বছরে অসংখ্য নতুন পদ সৃষ্টি করেছি। প্রতিটি ক্যাডারে ব্যাপকভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত আমরা ১১৩ জনকে সচিব, ৬০৯ জনকে অতিরিক্ত সচিব, ১ হাজার ৪১১ জনকে যুগ্ম সচিব এবং ১ হাজার ৪৩৪ জনকে উপ-সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছি। দেশের ইতিহাসে এত বেশি পদোন্নতি ইতিপূর্বে কখনো দেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের জন্য বিপিএটিসি-তে অবকাঠামো না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে অবিলম্বে কেন্দ্রে উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব দেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ প্রদান করেন।

সর্বশেষ খবর