শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

৪৪ লাখ লিবীয় দিনার নিয়ে বিপাকে দুই রাষ্ট্রীয় ব্যাংক

মুদ্রা নিতে দূতাবাসের অস্বীকৃতি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত লিবিয়ার দিনার নিয়ে বিপাকে পড়েছে দেশের দুই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। পাঁচ বছর ধরে প্রায় ৪৪ লাখ দিনার জমা পড়ে আছে সরকারি মালিকানাধীন সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংকে। এই অর্থ কেউ নিচ্ছে না। এমনকি লিবিয়ার সরকারও এখন নিজেদের মুদ্রা নিতে অসম্মতি জানাচ্ছে। কোটি টাকার দিনার নিয়ে সমস্যায় পড়া ব্যাংক দুটি এখন সমাধানের জন্য সরকারের দ্বারস্থ হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ব্যাংক দুটি পৃথকভাবে সরকারকে জানিয়েছে, ভল্টে দীর্ঘদিন ধরে লিবীয় দিনার অসাড় অবস্থায় মজুদ থাকায় তারা (সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংক) যেমন ‘আর্থিক ক্ষতি’র সম্মুখীন হচ্ছে, তেমনি রক্ষিত মুদ্রার নোটগুলোও ‘ড্যাম’ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গত ১ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড জানায়, ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ চলাকালে দেশে ফেরত আসা প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে সরকারের নির্দেশে তারা প্রায় ২৬ লাখ দিনার কিনে নিতে বাধ্য হয়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে জমে থাকা দিনার তারা সিঙ্গাপুরের ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংকের মাধ্যমে বিনিময়ের প্রস্তাব দেয়। এতে কোনো সুফল মেলেনি। এমনকি ক্রয় করা লিবীয় দিনার গ্রহণে ঢাকাস্থ লিবিয়া দূতাবাস অসম্মতি জানিয়ে দিয়েছে বলে ব্যাংকটির এমডি ও সিইও সৈয়দ আবদুল হামিদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

অগ্রণী ব্যাংক জানিয়েছে, ২০১১ সালে তারা যখন লিবীয় দিনার কিনে রেখেছিল, তখন প্রতিটির মূল্য পড়েছিল ৫৬ টাকা ৫০ পয়সা। এর ফলে     ২৬ লাখ দিনার কিনতে তাদের প্রায় ১৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়। একই সমস্যায় পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। সরকারের মৌখিক নির্দেশে লিবিয়া-ফেরত শ্রমিকদের কাছ থেকে ২০১১ সালে তারা প্রায় ১৮ লাখ দিনার কিনে নেয়। দেশের বৃহত্তম এই ব্যাংকটি জানিয়েছে, লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর ২০১১ সালে যেসব শ্রমিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিল, সরকারের নির্দেশে তাদের কাছ থেকে এসব দিনার কিনে রাখে সোনালী ব্যাংকের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শাখা। ওই বছরের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত শ্রমিকদের কাছ থেকে ক্রয়কৃত মুদ্রার পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ৮০ হাজার লিবীয় দিনার, স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১০ কোটি টাকা। দুই ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ দিনার আটকে থাকার বিষয়টি নিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে লিবিয়ার অর্থনীতি এখন পর্যুদস্ত। ফলে জমে থাকা এই দিনার বিনিময় করা খুব সহজ হবে না। তবে এ বিষয়ে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহায়তা নেওয়া যেতে পারে, যাতে করে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের শ্রমিক লিবিয়ায় গেলে তাদের বিমানভাড়া বা খরচ হিসেবে এ দিনার ব্যবহারের সুযোগ থাকে।’ জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের মতো সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষও একাধিকবার বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হওয়ার পর সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আফ্রিকা শাখার মাধ্যমে লিবীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তবে দেশটির দূতাবাস তাদের মুদ্রা নিতে অপারগতার বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে। গত ২৩ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক চিঠিতে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১১ সালে লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলাকালে সেখানে কর্মরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। ফলে দেশটির অভ্যন্তরীণ সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি তাদের অর্জিত স্থানীয় মুদ্রা ডলারে রূপান্তরের কোনো সুযোগ পায়নি। এদিকে লিবিয়া-ফেরত শ্রমিকরা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছার পর নিজেদের কাছে থাকা দিনার গ্রহণ করে স্থানীয় মুদ্রা (টাকা) দেওয়ার অনুরোধ জানায় সরকারের কাছে। ওই সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে লিবিয়া-ফেরত শ্রমিকদের দিনার কিনে রাখার জন্য বিমানবন্দর সোনালী ব্যাংক শাখাকে নির্দেশ দেয় সরকার। পরে তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংক, জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থাগুলোর উপস্থিতিতে বিমানবন্দর সোনালী ব্যাংক শাখা প্রবাসী শ্রমিকদের লিবীয় দিনার কিনে রাখে। পরে তা সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ের ভল্টে তা জমা রাখা হয়। সেই থেকে ভল্টে পড়ে আছে লিবীয় দিনার। সোনালী ব্যাংকের এমডি ও সিইও বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, টাকায় কেনা ওই দিনার দীর্ঘদিন ধরে ভল্টে পড়ে আছে। স্থানীয় মুদ্রায় রূপান্তরের সুযোগ না পাওয়ায় ওই অর্থ বিনিয়োগ করাও সম্ভব হচ্ছে না। এতে ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর