শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

কলকাতায় ফ্লাইওভার ধসে নিহত ২২

বাংলাদেশিদের জন্য হেল্প লাইন

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

কলকাতায় ফ্লাইওভার ধসে নিহত ২২

উত্তর কলকাতার পোস্তা এলাকায় গতকাল নির্মীয়মাণ ফ্লাইওভারের একাংশ ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর কলকাতার পোস্তা এলাকায় নির্মীয়মাণ একটি ফ্লাইওভারের একাংশ ধসে পড়ে কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ধ্বংসস্তূপের নিচে একটি যাত্রীবাহী বাস আটকা পড়েছে। সেখানে আরও বহু মানুষ চাপা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ কলকাতার সব হাসপাতালেই হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, উত্তর কলকাতার অত্যন্ত ব্যস্ততম পোস্তা এলাকায় দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে নির্মীয়মাণ বিবেকানন্দ ফ্লাইওভারটির একটি অংশ ধসে পড়ে। ধসে পড়ার সময় প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে উঠে গোটা এলাকা। চারদিক ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। ভেঙে পড়া ফ্লাইওভারের নিচে পার্কিং করা একাধিক গাড়ি, দোকান সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। ফ্লাইওভারের নিচেই আটকে পড়ে যাত্রীবোঝাই একটি বাস। তবে দুর্ঘটনা ঘটার পর রাজ্য প্রশাসন প্রথমে পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে না পারায় উদ্ধারকাজ শুরু করতে বেশ খানিকটা সময় কেটে যায়। প্রাথমিকভাবে উদ্ধারকাজে স্থানীয় বাসিন্দা হাত লাগালেও পরে দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে সেনাবাহিনীর সহায়তা চায় রাজ্য সরকার। এরপরই উদ্ধারকাজে নেমে পড়ে ৪০০ সেনা জওয়ান। উদ্ধারের জন্য বিশেষ যন্ত্রপাতি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ইঞ্জিনিয়াররাও। এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়েই মেদিনিপুর থেকে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ স্থগিত রেখে কলকাতায় ছুটে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ তদারকি করেন মুখ্যমন্ত্রী। এ সময় সঙ্গে ছিলেন ফায়ার সার্ভিস মন্ত্রী জাভেদ খান, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, রাজ্যের মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারসহ পুলিশের কর্মকর্তারা। ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে এই ফ্লাইওভারটি নির্মাণে বিগত বামফ্রন্ট সরকারকে দোষারোপ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন ‘বাম শাসনকালেই এই ব্রিজটির টেন্ডার দেওয়া হয়েছিল। নির্মাণকারীদের কাছে আমরা বার বার প্ল্যান চেয়েছি কিন্তু তারা দেয়নি। ফলে কাজ শেষ হতে দেরি হচ্ছিল। আমরা এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব’। পাশাপাশি দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণেরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে। নিহতদের পরিবার পাবে পাঁচ লাখ টাকা, আহতরা দুই লাখ টাকা ও অল্প আহতরা এক লাখ টাকা করে পাবেন। দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে শোকপ্রকাশ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে সব রকম সহায়তা করার ব্যাপারে আশ্বাসও দেন তারা।এদিকে ফ্লাইওভার নির্মাণকারী সংস্থা আইভিআরসিএল ইনফ্রাস্ট্রাকচার কোম্পানির কর্মকর্তা কে পি রাও জানান ‘এরকম ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। ৪৫ শতাংশ কাজ বাকি ছিল। কিন্তু তার মধ্যেই এই ঘটনা ঘটে যাওয়ায় আমরা সত্যিই মর্মাহত।

হেল্প লাইন চালু করেছে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন : বিবেকানন্দ ফ্লাইওভার দুর্ঘটনায় নিহতের প্রতি শোকজ্ঞাপন করেছে কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন। একইসঙ্গে কলকাতায় অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ কিংবা যে কোনো সহায়তা প্রদানের জন্য উপ হাইকমিশনে একটি কন্ট্রোল রুম (২৪ ঘণ্টা) চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশিদের ৯১-৩৩-৪০১২৭৫০০ নম্বরে যোগাযোগের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর