শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা
না.গঞ্জে ঠিকাদার গ্রেফতার

ছাড়িয়ে নিতে রাতভর থানায় মেয়র আইভী

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জে সিটি করপোরেশনের এক ঠিকাদারকে গ্রেফতারের ঘটনায় বুধবার রাতে থানা ঘেরাও করেছেন করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর সমর্থকরা। এসময় বুধবার সারা রাত মেয়র আইভী নারায়ণগঞ্জ সদর থানার চত্বরে অবস্থান করে গতকাল সকাল সাড়ে ৬টার দিকে থানা ত্যাগ করেন। বিষয়টি নিয়ে বুধবার রাতেই সদর থানায় পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইভীর তুমুল বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। এ সময় আইভী ওই ঠিকাদারকে  ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও পুলিশ জানায় রেলওয়ের দায়ের করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামিকে তারা ছাড়তে পারেন না। এ সময় আইভী পুলিশকে ওই ঠিকাদারকে ছেড়ে তাকে গ্রেফতার করতে বলেন। গ্রেফতারকৃত ওই ঠিকাদারের নাম জাকির হোসেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ শহরের জিমখানা এলাকায় সিটি করপোরেশনের চলমান ৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ঠিকাদার ও রত্না এন্টাপ্রাইজের কর্ণধার। বুধবার (৩০ মার্চ) সন্ধ্যায় রেলওয়ের কানুনগো ইকবাল মাহমুদ বাদী হয়ে নাসিকের ঠিকাদার ও রত্না-মুনিয়া কনসোর্টিয়ামের মালিক আবু সুফিয়ানকে প্রধান আসামি করে রত্না এন্টারপ্রাইজের মালিক জাকির হোসেনসহ ৭-৮ জনের নামে মামলা করেন। রেলওয়ের ওই নিজস্ব জমিতে কোনো প্রকার লিজ বা অনুমতি না নিয়েই ওই প্রকল্পের কাজ করছিল সিটি করপোরেশন। রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত ২৭ জানুয়ারি রেলওয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা লেক ও পার্ক নির্মাণের কাজ বন্ধ করতে গেলে ঠিকাদারের লোকজন তাদের ধাওয়া করে। এনিয়ে রেলওয়ে মন্ত্রীর সঙ্গেও গত মাসে দেখা করেছিলেন মেয়র আইভী, কিন্তু ওই জায়গায় পার্ক বা কোনো প্রকল্প করার অনুমতি মিলেনি। উল্টো রেলওয়ের মহা পরিচালক বিষয়টিকে জোর পূর্বক ও বেআইনি বলে মন্তব্য করেন। এদিকে বুধবার রাতভর থানায় থাকলেও ৩ জন কাউন্সিলর ব্যতীত শহর, বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার অন্যান্য কাউন্সিলররা মেয়রের পাশে না থাকার বিষয়টি নিয়েও গতকাল দিনভর সিটি করপোরেশনে চলে আলোচনা সমালোচনা। এ ব্যাপারে শহরের ১২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শওকত হাশেম জানান, মেয়র হয়তো মনে করেন উন্নয়নের ভাগিদার কাউন্সিলররা নন, ঠিকাদাররা। তাই গত ১ বছরে একাধিক কাউন্সিলর গ্রেফতার হলেও তিনি থানায় যাওয়া তো দূরে থাক তাদের বাসায় গিয়ে পরিবারের প্রতি ন্যূনতম সহমর্মিতাও জানাননি। তাই রাতভর একজন ঠিকাদারের জন্য থানায় অবস্থান নিলেও আমরা সেখানে যাইনি। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আবদুল মালেক জানান, বুধবার সন্ধ্যায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলার আসামি ঠিকাদার জাকির হোসেনকে রাত পৌনে ১০টার দিকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০টা দিকে সদর মডেল থানায় হাজির হন মেয়র আইভীসহ আওয়ামী লীগ যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। ওই সময় আইভীর সঙ্গে সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ওবায়দুল্লাহ, কাউন্সিলর অসিত বরণ, কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনির, জেলা যুবলীগ সভাপতি আবদুল কাদির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল মালেক পিপিএমকে উদ্দেশ্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র আইভী বলেন, ‘আমি থানার ভিতর থেকে এক পাও নড়ব না। কার নির্দেশে এই মামলা হয়েছে সেটা জানতে চাই। কাল থেকে আর উন্নয়ন কাজ চলবে না। এই শহর শামীম ওসমানের শহর। শামীম ওসমানই থাকুক।’ এ সময় তাদের সঙ্গে থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়। পরে মেয়র আইভী সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো অপরাধ ছাড়া আমাদের ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। ঠিকাদার জাকিরকে কাজ আমি দিয়েছি। গ্রেফতার করতে হলে আমাকে করেন। একটি বিশেষ মহলের নির্দেশে মামলা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে আমি সারা রাত থানায় থাকব। প্রয়োজনে সকালে আমাকেও আদালতে চালান করা হোক’।  এ সময় সাংবাদিকরা পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, কাজটি টেন্ডারের মাধ্যমে হয়েছিল, তাহলে আপনি কি করে তাকে কাজ দেন এবং ওই প্রকল্পের জমিটি কার? এমন প্রশ্ন শুনে মেয়র আইভী কোনো উত্তর না দিয়ে উল্টো ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় সাংবাদিকরা আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত ঠিকাদারের বিরুদ্ধে বন্দরে একটি শিশু আহত হওয়ার অভিযোগে ও ফতুল্লায় শ্রমিকের মৃত্যু, লাশ গুমের অভিযোগে মামলা হয়েছিল। ওই মামলাগুলোও কি বিশেষে মহলের ইশারায় হয়েছে এবং সে ব্যক্তি কে? এমন প্রশ্নের উত্তরও এড়িয়ে যান মেয়র আইভী। উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) উদ্যোগে শহরের জিমখানায় রেলওয়ের নিজস্ব জমিতে রেলের কোনো অনুমতি বা লিজ না নিয়েই পার্ক নির্মাণের জন্য ৭ কোটি ৭৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকার টেন্ডার দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর