সোমবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিএনপি নেতারাই নৌকার মাঝি

চতুর্থ ধাপে ৫৫ ইউপিতে বিএনপির প্রার্থী নেই ♦ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হচ্ছেন ৬ জন ♦ মামলায় শত শত মানুষ এলাকা ছাড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি নেতারাই নৌকার মাঝি

ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন শেষে এখন চলছে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। আরও চলছে চতুর্থ ধাপের প্রার্থিতা যাচাই-বাছাই। তবে এ দুই ধাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক ত্যাগী নেতা দলের মনোনয়ন না পেলেও বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগের নৌকার মাঝি হয়েছেন। আর অনেক নেতাই নৌকা ছেড়ে স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন। এসব নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে গৃহদাহ চলছে। এ কারণে নির্বাচনে দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষও চলে আসছে। এমনকি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রাজাকারের ছেলেকেও মনোনয়ন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনও করেছেন। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ৭২৭টির মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫৫টিতে প্রার্থী দিতে পারেনি বিএনপি। ছয় ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। এ ধাপে ৭২৭ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ৭২৫টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে।

এদিকে বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করা হলেও অজ্ঞাত আরও ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ফলে এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ছাড়া বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলায় নির্বাচন-পরবর্তী হামলা, নির্যাতন, মারধর ও চাঁদাবাজিতে শত শত মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। ১ হাজার ৮১৩ মনোনয়নপত্র : ইসি জানিয়েছে, চতুর্থ ধাপের জন্য ৭ এপ্রিল ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ৭২৭ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ৭২৫টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ৭২৭, বিএনপির ৬৭২, জাতীয় পার্টির ১৭৮টিসহ রাজনৈতিক দলের মোট ১ হাজার ৮১৩টি মনোনয়নপত্র রয়েছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র হিসেবে ১ হাজার ৯১২ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এ ধাপের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই আজ চলবে। এরই মধ্যে আপিল কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়ে কোনো প্রার্থী রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করতে পারবেন। ১৮ এপ্রিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়। প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৯ এপ্রিল। আর ভোট গ্রহণ ৭ মে। এবার দেশের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ইউপিতে ছয় ধাপে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এর মধ্যে দুই ধাপের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৩ এপ্রিল হবে তৃতীয় ধাপের ভোট।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ—

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে অনেক ইউনিয়নে একসময়ের বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগের নৌকার মাঝি হয়েছেন। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলটির অভ্যন্তরে গৃহদাহ শুরু হয়েছে। ফলে ১৩টির মধ্যে ১১টি ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। এতে বিরোধী দলের প্রার্থীদের পরিবর্তে নিজ দলের বিদ্রোহীদের মোকাবিলায় ব্যস্ত রয়েছেন দলীয় প্রার্থীরা। তবে নির্বাচনী মাঠে প্রচারণায় এখন পর্যন্ত বিদ্রোহী প্রার্থীরাই এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে। এ চিত্র শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জে নয়, দেশের সব জেলায় কম-বেশি বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। এমনকি রাজাকারের ছেলেকেও মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। জানা গেছে, গোবরাতলা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বিএনপি ছেড়ে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদানকারী সাবেক চেয়ারম্যান আসজাদুর রহমান মান্নুকে। এখানে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ শাহ জামাল। বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের মনোনয়ন পেয়েছেন সদ্য আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া বর্তমান চেয়ারম্যান মো. তরিকুল ইসলাম। বারঘরিয়া ইউনিয়নে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান হারুন-অর রশিদকে। এখানে তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন আওয়ামী লীগের অন্য দুই নেতা প্রদীপকুমার পাল ও আসলাম উদ্দীন। মহারাজপুর ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন একসময়ের বিএনপি নেতা এজাবুল হক বুলি। রানীহাটি ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী রয়েছেন গতবারের পরাজিত প্রার্থী মো. মহসিন আলী। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন গতবারের বিজয়ী চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. দুরুল হোদা। দেবীনগর ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যন মো. হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে লড়ছেন অন্য আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক বিশ্বাস। নারায়ণপুর ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক বিএনপি নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আলমগীর কবিরকে। দলীয় এ প্রার্থীর পিতা মরহুম হুমায়ন কবিরের (হুমায়ন দারোগা) বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কামাল উদ্দিন হোদা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম রেজা ও স্থানীয় নেতা হযরত আলী। সুন্দরপুর ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী হাবিবুর রহমান, তার বিরুদ্ধে লড়ছেন সদর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমানুল্লাহ বাবু। ঝিলিম ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী লুত্ফুল হাসানের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী শিরিন আকতার। চরঅনুপনগর ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী সাদিকুল ইসলাম বাচ্চুর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন গতবারের বিজয়ী চেয়ারম্যান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এস আবদুল বাদী বাদশা। শাহজাহানপুর ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী আবদুস সালামের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন দলের অন্য নেতা আবদুর রশিদ। ইসলামপুর ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী জসিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামন টিপু। চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. ওমর আলীর বিরুদ্ধে লড়ছেন একাধিক মাদক মামলার আসামি শহীদ রানা টিপু। বিদ্রোহী প্রার্থীর বিষয়ে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম জানান, যেসব আওয়ামী লীগ নেতা দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু যারা প্রত্যাহার করেননি তাদের দল থেকে বহিষ্কারের নোটিস দেওয়া হবে। অন্যদিকে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও নারায়ণপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী কামাল উদ্দিন হোদা বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশনা ও প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে জেলা কমিটির কিছু নেতা তাদের পছন্দের প্রার্থীর নাম কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। বগুড়া : গাবতলী উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় রামেশ্বরপুর ইউনিয়নের বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ইউনিয়নর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহাব মণ্ডলকে প্রধান আসামি করে ৪৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে গাবতলী মডেল থানার এসআই আবু জাররা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। বাগেরহাট : মোরেলগঞ্জ উপজেলার সোনাখালী গ্রামে নির্বাচনের পর বিজয়ী চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া শামীম ও তার কথিত রামদাবাহিনীর হামলা, নির্যাতন, মারধর ও চাঁদাবাজির ভয়ে শত শত মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।

গতকাল বাগেরহাট প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সোনাখালী গ্রামের আবদুর রহিম খানসহ নির্যাতনের শিকার এলাকাবাসী হামলা ও নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেন।

সর্বশেষ খবর