বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

জেল-জরিমানার বিধান রেখে সম্প্রচার আইনের খসড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

সম্প্রচার কমিশনকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার ক্ষমতা দিয়ে সম্প্রচার আইন, ২০১৬-এর খসড়া গতকাল প্রকাশ করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত এ আইনে ইন্টারনেট, টিভি-রেডিওসহ সম্প্রচারের সব মাধ্যম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকাশিত এ খসড়ার ওপর আগামী ৪ মে’র মধ্যে মতামত জানানোর অনুরোধ করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। ডাকযোগে অথবা ইমেইলের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর মতামত দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। অংশীজনদের মতামত সংগ্রহের পর তা চূড়ান্ত করে পাসের জন্য জাতীয় সংসদে তোলা হবে। আগামী জুনে তা সংসদে তোলা হতে পারে বলে মন্ত্রণালয়সূত্রে জানা গেছে। এর আগে ২০১৪ সালের আগস্টে সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন করেছিল সরকার। ওই নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্যই সম্প্রচার আইন করা হচ্ছে। তাতে জেল-জরিমানার বিধান রাখা হচ্ছে। আইনের খসড়ায় লাইসেন্স ছাড়া কেউ সম্প্রচার করলে সাত বছর কারাদণ্ড, ১০ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। সম্প্রচার আইনের অধীনে সাত সদস্যের একটি সম্প্রচার কমিশন গঠন করবে সরকার। এ কমিশন সম্প্রচারের লাইসেন্স ছাড়াও সম্প্রচার যন্ত্রপাতির লাইসেন্স দেবে। কমিশনের অনুমতি ছাড়া সম্প্রচার লাইসেন্স হস্তান্তর করলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। নির্ধারিত ফি দিয়ে লাইসেন্স নবায়ন করা যাবে। খসড়া আইন অনুযায়ী, সম্প্রচার কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আইনের বিধানাবলি, বিধিমালা বা কমিশনের আদেশ-নির্দেশনা লঙ্ঘন করলে তিন মাস কারাদণ্ড, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ ছাড়া অপরাধ সংঘটন চলমান রাখলে প্রতিদিনের জন্য অনধিক এক লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। ১৪ পৃষ্ঠার খসড়া সম্প্রচার আইনে সম্প্রচার কমিশন গঠন, কমিশনারদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, মেয়াদ, পদত্যাগ, অপসারণ, পদমর্যাদা ও পারিশ্রমিক ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রচার কমিশনের ক্ষমতা ও কার্যাবলি সম্পর্কেও বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। সম্প্রচার আইন বলবৎ হওয়ার পর সম্প্রচার কমিশন গঠন করা হবে। কমিশন হবে সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। কমিশন হবে সাত সদস্যের, যাতে কমপক্ষে একজন নারী কমিশনার থাকবেন। রাষ্ট্রপতি কমিশনারদের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান নিয়োগ করবেন। চেয়ারম্যান কমিশনের নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন। সাত সদস্যের কমিশন সম্প্রচারকারীদের জন্য একটি সহায়ক নির্দেশিকা তৈরি করবে। এ নির্দেশিকা ছাড়াও জাতীয় সম্প্রচারনীতি এবং কোড অব ইথিকস যথাযথভাবে প্রতিপালন হচ্ছে কিনা, তা নজরে রাখবে কমিশন। দেশের নিরাপত্তা ও অখণ্ডতার প্রতি সম্ভাব্য হুমকি, দেশের শান্তি, ঐক্য বা জনশৃঙ্খলা বিনষ্টের আশঙ্কা সৃষ্টি, অশ্লীল, মিথ্যা ও বিদ্বেষমূলক তথ্য পরিবেশন করলে কমিশন নিজ উদ্যোগে ব্যবস্থা নেবে। প্রস্তাবিত খসড়া আইন অনুযায়ী, সম্প্রচার কমিশনকে সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের কর্মরত সংবাদকর্মী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওয়েজ বোর্ড গঠন করে এ বিষয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ দিতে হবে। খসড়া আইনের ২৪(৪)-ঘ ধারায় বলা হয়েছে, ‘অনধিক ১০ (দশ) কোটি টাকা জরিমানা প্রদান করতে প্রশাসনিক আদেশ বা নির্দেশ (সম্প্রচার কমিশন) দিতে পারবে এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধনীমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও নির্দেশ দিতে পারবে।’ সম্প্রচার কমিশনের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ২৪ (৫) ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি এই রূপ দাবি কোন আদালত বা কর্তৃপক্ষের নিকট উত্থাপিত হয় তাহলে আদালত বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ তা সরাসরি বাতিল করবে।’ একই সঙ্গে ২৮ ধারায় কমিশনের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এ আইনের অধীনে সব অপরাধ অ-আমলযোগ্য ও জামিনযোগ্য হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। আগামী ৪ মে পর্যন্ত তথ্যসচিবকে (সচিব, তথ্য মন্ত্রণালয়, ভবন নম্বর-৪, বাংলাদেশ সচিবালয়) চিঠি দিয়ে অথবা [email protected], [email protected] ইমেইল করে নাগরিকরা মতামত জানাতে পারবেন।

সর্বশেষ খবর