সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

জব্বারের বলী খেলা শুরু আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

জব্বারের বলী খেলা শুরু আজ

কখনো তীব্র দাবদাহ, আবার কখনো মেঘলা-মেদুর হাওয়া, মেঘ- রোদ্দুর লুকোচুরি। এরই মধ্যে আজ পর্দা উঠছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলা ১০৭তম আসরের। উৎসবের জন্য প্রস্তুত লালদীঘি ময়দান ও তার আশপাশের প্রায় তিন বর্গকিলোমিটার এলাকা। বলী খেলাকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরাও হরেক রকমের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। উৎসবের মূল আকর্ষণ ‘বলী খেলা’য় আজ বিকালে লালদীঘি ময়দানে অংশগ্রহণ করবেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় দুই শতাধিক বলী।

জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার বলেন, ‘আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। এবারের উৎসব সুষ্ঠু ও সফলভাবে সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’ এবারের মেলায় সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন। এ ব্যাপারে গ্রামীণফোনের চট্টগ্রাম সার্কেল হেড এম শাওন আজাদ বলেন, ‘নিজেদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধারণ করে চট্টগ্রামবাসীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে এগিয়ে যেতে চায় গ্রামীণফোন। এরই ধারাবাহিকতায় জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী উৎসবে সহযোগিতা করছে গ্রামীণফোন। ভবিষ্যতেও গ্রামীণফোনের এ ধারা অব্যাহত থাকবে।’ বলী খেলাকে কেন্দ্র করে লালদীঘি ও আশপাশের প্রায় তিন বর্গকিলোমিটার জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে অন্যরকম এক আবহ। আন্দরকিল্লা মোড় থেকে কোতোয়ালি মোড়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা থেকে জেল রোড সব জায়গা উৎসবকে কেন্দ্র করে আসা ‘মৌসুমি’ ব্যবসায়ীদের দখলে। বাদ যায়নি কোর্ট রোড, লয়েল  রোড, পুরাতন গির্জা, কেসি দে রোডসহ আশপাশের সব এলাকাও। রাস্তা, ফুটপাথ, আইল্যান্ডসহ সব জায়গায় বসেছে পণ্যের পসরা। বিভিন্ন এলাকা থেকে হাতপাখা, শীতলপাটি, মাটির কলস, চুড়ি, ফিতা, রঙিন সুতা, হাতের কাঁকন, নাকের  নোলক, মাটির ব্যাংক, ঝাড়ু, খেলনা, ঢোল, বাঁশি, হস্তশিল্প,  বেতের ফার্নিচার, মৃিশল্প, শিশুদের নানা ধরনের খেলনা, বাহারি চুড়ি, গৃহস্থালি সামগ্রী, প্লাস্টিক সামগ্রী, কুটিরশিল্প, মুড়ি-মুড়কিসহ বিভিন্ন ফলদ ও বনজ উদ্ভিদের চারাসহ সব ধরনের সামগ্রী নিয়ে জড়ো হয়েছে উৎপাদক ও বিক্রেতারা। বলী খেলা ও বৈশাখী  মেলাকে ঘিরে লালদীঘি ময়দানে নাগরদোলা, সার্কাস ও বিচিত্রানুষ্ঠানেরও আয়োজন রয়েছে।

জব্বারের বলী খেলার ইতিহাস : ভারত বর্ষের স্বাধীন নবাব টিপু সুলতানের শাসন অবসানের পর ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামল শুরু হয়। বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ ও বাঙালি যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব তৈরি করতে এগিয়ে আসেন বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর। ১৩১৬ বাংলা বর্ষের ১২ বৈশাখ আবদুল জব্বার সওদাগর বলী খেলার আয়োজন করেন। পরে এ প্রতিযোগিতা জব্বারের বলী খেলা নামে পরিচিতি লাভ করে। এরপর থেকে প্রতি বছর ১২ বৈশাখ তার নামেই এ বলী খেলা হয়। ব্যতিক্রমধর্মী ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য ব্রিটিশ সরকার আবদুল জব্বারকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও আরাকান অঞ্চল থেকে অনেক নামিদামি বলী এ খেলায় অংশগ্রহণ করতেন। বর্তমানে প্রায় প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দুই শতাধিক বলী ‘জব্বারের বলী’ খেলায় অংশগ্রহণ করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর