বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

দেশে বাড়ছে বেকারত্ব

বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী গত দুই বছরে মাত্র ৬ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে

মানিক মুনতাসির

দেশে বাড়ছে বেকারত্ব

সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ দুই বছরে মাত্র ছয় লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এতে প্রতি বছরে তিন লাখ মানুষ চাকরি বা কাজ পেয়েছে। অথচ এ সময়ে দেশের কর্মবাজারে প্রবেশ করেছে প্রায় ২৭ লাখ মানুষ। সে হিসাবে দেশে দুই বছরে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ৪৮ লাখ। এর আগে ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর চাকরি বা কাজ পেয়েছিল ১৩ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। এদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও’র প্রকাশিত জানুয়ারি-২০১৬-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বিদায়ী বছরেও (২০১৫) আগের বছরের তুলনায় বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের হার কমেছে। চলতি বছরও কমবে। শুধু তাই নয় পরের তিন বছর অর্থাৎ ২০১৯ সাল পর্যন্ত শ্রমবাজার ও চাকরির বাজার সংকুচিত হবে বাংলাদেশের পাশাপাশি সারাবিশ্বে। এতে বলা হয়েছে চলতি বছর বাংলাদেশে কর্মসংস্থান কমবে ৪ দশমিক ২ শতাংশ হারে। এ ছাড়া ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে কমবে ৪ শতাংশ হারে।

এর আগে গত বছরের শেষদিকে আইএলও প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল বিশ্বে বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০টি দেশের তালিকায় ১২তম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, দেশে গত এক দশকে বেকারত্ব বেড়েছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। আর নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার কমেছে ২ শতাংশ। বিবিএসের হিসাবে প্রতি বছর ২৭ লাখ কর্মক্ষম মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। অথচ সরকারি বা বেসরকারিভাবে কাজ পাচ্ছে মাত্র ১ লাখ ৮৯ হাজার মানুষ। ফলে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক মানুষ বেকার থাকছে। এতে উত্পাদন কমে যাচ্ছে। আর সার্বিকভাবে ভোগের মাত্রা বাড়ছে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে এই বেকার জনশক্তি। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আর বিনিয়োগ বৃৃদ্ধির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোক্তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিবিএসের সর্বশেষ প্রকাশিত (২০১৫ সালের অক্টোবরে) প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে এখনো কৃষি খাতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। এ খাতে ৪৫ ভাগ মানুষের কর্মস্থান হচ্ছে। এরপর সেবা খাতে ৩৪ এবং শিল্প খাতে ২১ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে হবে। সরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে। তবে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হলে সরকারি বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলাসহ বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে বেকারত্ব বৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ। যা এক বছর আগে ছিল ৪ দশমিক ২০ শতাংশ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০১৯ সাল শেষে মোট বেকারের সংখ্যা বর্তমানের দ্বিগুণ হয়ে যাবে পূর্বাভাস দিয়েছে আইএলও। সংস্থাটির মতে, বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১১তম। আর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। এর কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে বিনিয়োগ না হওয়া। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো সমস্যা। সেই সঙ্গে এশিয়ার দেশগুলোর কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বর্তমান কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে আইএলও-এর প্রতিবেদনে। তবে বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা টানা কয়েক বছর ধরে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। যা এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলো এমন কি ভারতও করতে পারছে না। ২০১৫ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত বিসিএসের জরিপ মতে বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা ২ কোটি ৬০ লাখ। এর প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষিত বেকার। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বলছে বাংলাদেশে বেকারত্ব বৃদ্ধির বর্তমান হার ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১৯ সাল শেষে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তরসহ উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেছেন প্রায় চার লাখ। অথচ প্রতি বছর চাকরি পান ৫০ হাজারের কমসংখ্যক শিক্ষিত যুবক-যুবতী। এ ছাড়া শিক্ষিত নন কিন্তু প্রতি বছর কর্মক্ষম হচ্ছেন এমন মানুষের সংখ্যা কমপক্ষে ১৮ লাখ। ২০১৫ সালে এর সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এর চূড়ান্ত হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর