শনিবার, ৭ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

মাদক স্পট নিয়ন্ত্রণে দাপুটে সম্রাজ্ঞীরা

সাঈদুর রহমান রিমন

মাদক স্পট নিয়ন্ত্রণে দাপুটে সম্রাজ্ঞীরা

সাম্প্রতিক মাদক বাণিজ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন নারীরা। দাপুটে সম্রাজ্ঞীরাই চালাচ্ছেন রাজধানীর শতাধিক মাদক স্পট। তাদের নিয়ন্ত্রণে অন্তত ৫০০ মহিলা এখন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছেন। পুরান ঢাকা মাদক ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে নিরাপদ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। লালবাগের আলোচিত মাদকসম্রাজ্ঞী মনোয়ারা আর ইসলামবাগের ছাফি’র মাদক সাম্রাজ্য বল্গাহীন। এ ছাড়া মুন্নি, টগর, তামান্না ও ময়ূরীর মাদক নেটওয়ার্কে কয়েকশ’ নারী-পুরুষ মাদক কেনাবেচার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। রাজধানীর প্রধান মাদক স্পটগুলোর মধ্যে আনন্দবাজার বস্তি অন্যতম। এখানে রয়েছে মাদক সম্রাজ্ঞী বানুর মাদক স্পট। এর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে নিমতলী বস্তির সাবিনা ও পারুলের। পাইন্যা সর্দারের বস্তির রেণু, গণকটুলীর মনোয়ারা, নাছিমা, শ্যামপুরের ফজিলা, রানী বেগম এবং পারুলী। শাহীনবাগের পারভীন, তেজকুনিপাড়ার সনি, হিরা, রাজেদা। হাজারীবাগের স্বপ্না, কলাবাগানের ফারহানা ইসলাম তুলি, চানখাঁরপুলের পারুল, বাড্ডার সুমি, রামপুরের সীমা, শাহজাহানপুরের মুক্তা ড্রাগ কুইন হিসেবে চিহ্নিত। মহাখালীর আলোচিত মাদকসম্রাজ্ঞী হলো জাকিয়া ওরফে ইভা ও রওশন আরা বানু। বনানীর শীর্ষ মাদকসম্রাজ্ঞী আইরিন। কড়াইল বস্তিতে প্রধান মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত রিনা, জোসনা, বিউটি। গুলশানের অতি পরিচিত মাদকসম্রাজ্ঞী মৌ, বারিধারার নাদিয়া, উত্তরার গুলবাহার ও মুক্তি। অন্যদিকে বারিধারা, গুলশান ও ডিওএইচএস এর মতো অভিজাত এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা হলো-জ্যোত্স্না, জবা, লিপি, রূপা, তানিয়া, শোভা, জয়া, মলি, বিউটি, রিতা, ন্যান্সি-কুমকুম, মনি ওরফে হাসি। মাদকসম্রাজ্ঞী সাহিদা, মাহমুদা, নীলা, জরিনা, মিনা ও কুট্টি মিলেমিশে কাওরানবাজারে মাদকের আড়ত খুলে বসেছে।

শ্যামপুরের ফজিলা, রানী বেগম ও পারুলী, শাহীনবাগের পারভীন, তেজকুনিপাড়ার সনি, হিরা, নাছিমার মাদক বাণিজ্য বন্ধের সাধ্য যেন কারও নেই। সূত্রাপুর এলাকায় মাদক ব্যবসা করছে আনসারী বেগম, রহিমা বেগম, কালামের বউ, আঙ্গুরী। সায়েদাবাদ ব্রিজ এলাকায় ফেনসিডিল ও হেরোইন বাণিজ্য চালায় শাহজাদী। বধূয়া কমিউনিটি    সেন্টার, করাতিটোলা রিকশার গ্যারেজ, গোলাপবাগ পাম্পের পেছনে, ধলপুর নারিকেল বাগান, সেবাপট্টি, মাজারওয়ালার বাড়ির পাশে ও মানিকনগর স্পটে তাদের মাদক বিকিকিনি চলছে। সায়েদাবাদ সিটি পল্লী সবচেয়ে বড় হেরোইনের বাজার। এখানকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে হোসনে আরা ও শাহনাজ। গোপীবাগের রমরমা গোবেনপুর মাদকস্পট নিয়ন্ত্রণ করছে দুই বোন আয়শা ও ম্যাগী। ডেমরা এলাকায় মাদক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে কয়েকটি সিন্ডিকেট। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— পারুল, খোদেজা, রাজিয়া, পারভীন, ফারজানা, মর্জিনা, রহিমা, সারুলিয়া এলাকার পুষ্প ও রুপা। তেজগাঁও এলাকার মাদকের গডমাদার হিসেবে চিহ্নিত মাকসুদা, মাহফুজা, সালমা, নাছিমা ও সখিনা। মিরপুর এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা হচ্ছে— নাসিমা, হাওয়া খাতুন, শাহানুর, লালমাঠ বস্তির মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে বানু, মনি, মুন্নী, আমেনা ও মনু। পল্লবী এলাকায় মাদক ব্যবসা করছে— ময়না, সালমা, রহিমা, হাছিনা ও হাজেরা।

মাদকের ‘খোলা হাট’ : রাজধানীর কাওরানবাজারে গড়ে ওঠা খোলামেলা মাদক হাটটি বন্ধ হচ্ছে না কোনোভাবেই। অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর শীর্ষ পর্যায়ের পাঁচ মাদকসম্রাজ্ঞী সাহিদা, মাহমুদা, নীলা, জরিনা, মিনা ও কুট্টি কাওরানবাজারে মাদক আড়তদারি খুলে বসেছে। গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাদের খোলামেলা মাদক আড়তের রমরমা বাণিজ্য চললেও বাধা দেওয়ার যেন কেউ নেই। থানা পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ, স্থানীয় মাস্তান, নেতা থেকে শুরু করে মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগের বিভিন্ন স্তরে নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়েই বহাল থাকছে তাদের আস্তানা। সেখানে একাধারে খুচরা ও পাইকারিভাবে হরদম মাদক কেনাবেচা চলে। ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাজা, হেরোইন— কী নেই সেখানে? আছে বাংলা মদেরও ছড়াছড়ি। প্রতিদিন কাওরানবাজার রেললাইন ও ঘেঁষা বস্তির আস্তানা থেকে কমবেশি ১০ লক্ষাধিক টাকার মাদক কেনাবেচা চলে।

মাদক ক্লাব, রেস্তোরাঁ, গেস্ট হাউসে : ঢাকা মহানগর মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্ষমতাধর ব্যক্তি এবং সরকারি দলের লোকজনের মদদে অনেক স্থানে মাদক ব্যবসা চলছে। এ কারণে অনেক সময় মাদক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করা যায় না বলে দাবি তাদের। সূত্র জানায়, মতিঝিলের ক্লাবগুলোতে জুয়ার পাশাপাশি এখন মাদকের আখড়া বসছে। সেগুনবাগিচায় ফরিদপুর ম্যানসনের উপরে এক ছাত্রলীগ নেতার মাদকের আসর চলছে। গুলশানে সি-সেল বারের ওপর মিনিবার চলছে অপর এক ছাত্রলীগ নেতার মাধ্যমে। মোহাম্মদপুরে ইয়াবার ডিলার জিপু গড়ে তুলেছেন ইয়াবার শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। কাঁঠালবাগানের বাসিন্দা সবুজের কাছে আসে ইয়াবার বড় বড় চালান। পল্লবীর গডফাদার বাচ্চু পুরো এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন। কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরার বাসিন্দা ও আনন্দবাজার বস্তি এলাকার কোটিপতি হোরোইন বিক্রেতা সৈয়দ আলীও নিজের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সম্প্রতি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছেন। খিলগাঁও এলাকার একটি বড় অংশজুড়ে ইয়াবার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের এক নেতা।

সর্বশেষ খবর