ইয়াবা পাচারের নিরাপদ ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপজেলার উপকূল। এ দুই উপজেলার কমপক্ষে ৩৫টি পয়েন্ট দিয়ে বানের পানির মতো ঢুকছে মরণনেশা ইয়াবা, যা পরবর্তীতে চট্টগ্রাম হয়ে পাচার হয় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে আসে।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকা দিয়ে মাদক পাচাররোধ করতে র্যাবের একাধিক টিম কাজ করছে। এরই মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করেছে র্যাব।’ জেলা বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আবদুল আউয়াল বলেন, ‘সড়কপথে পুলিশ অত্যধিক তত্পর হওয়ায় ইয়াবা পাচারকারীরা এখন নতুন রুট হিসেবে বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকাকে ব্যবহার করছে। এ তথ্য পেয়ে উপকূলীয় এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’ ইয়াবা চোরাচালানে স্থানীয় দিনমজুর, স্কুল-কলেজের ছাত্র, পরিবহন শ্রমিকদের ব্যবহার করা হয়। এ কাজে মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্র এবং মসজিদের ইমামদেরও ব্যবহার করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সড়কপথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধি পাওয়ার পর ইয়াবা পাচারকারীরা নৌপথে নতুন রুট সৃষ্টি করেছে। তারা এখন ইয়াবা পাচারের জন্য উপকূলীয় এলাকা আনোয়ারা ও বাঁশখালীকে ব্যবহার করছে। মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান নৌপথে বাংলাদেশে প্র্রবেশ করে পরবর্তীতে বঙ্গোপসাগরের সেন্টমার্টিনের আশপাশ এলাকায় ফিশিং ট্রলারে ‘লোড’ করা হয়। পরে ফিশিং ট্রলারে নিয়ে আসা হয় চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকায়। ফিশিং ট্রলার থেকে দুই উপজেলা আনোয়ারা এবং বাঁশখালীর কমপক্ষে ৩৫টি পয়েন্টে ‘আন-লোড’ করা হয়। ইয়াবা চালান ‘আন-লোড’ হয় এমন পয়েন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে আনোয়ারার ছিপাতলীঘাট, পারকী সৈকত, বাচ্চু মাঝির ঘাট, সাঙ্গুর মোহনা, পূর্ব গহিরা, গলাচিপাসহ কমপক্ষে ২০ পয়েন্ট। বাঁশখালীর প্রেমাসিয়া, গণ্ডামারা, কদমরসুল, বাহারছড়াসহ কমপক্ষে ১৫ পয়েন্ট। আনোয়ারা উপকূলে ইয়াবা চালান ‘আন-লোড’ করার পর চাঁদের গাড়ি, সিএনজি এবং রিকশা করে নিয়ে আসা হয় চৌমুহনী এলাকায়। চৌমুহনী থেকে যাত্রীবাহী বাসে করে ইয়াবার চালান নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এ ছাড়া আনোয়ারা উপকূল থেকে নগরীর ১৩ ও ১৪ নম্বর ঘাট, বাংলাবাজার ঘাট দিয়েও চট্টগ্রামে প্রবেশ করে ইয়াবা চালান। একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় বাঁশখালী উপকূল দিয়ে আসা ইয়াবার চালানগুলোতেও। এসব চালানের বাহক হিসেবে কাজ করে আনোয়ারা এবং বাঁশখালীর দিনমজুর, স্কুল-কলেজের ছাত্র ও পরিবহন শ্রমিক। কয়েকজন মাদ্রাসা শিক্ষক-ছাত্র এবং মসজিদের ইমামও ইয়াবার বাহক হিসেবে কাজ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ইয়াবার এসব চালান পরিবহনের জন্য প্রতি পিসের জন্য বাহকরা ‘পারিশ্রমিক’ হিসেবে পান ৮ থেকে ১০ টাকা।