শনিবার, ৭ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা
পরিকল্পনামন্ত্রীর সন্তোষ

পদ্মা সেতু এলাকায় প্রাণের স্পন্দন

লাবলু মোল্লা, মুন্সীগঞ্জ

পদ্মা সেতু এলাকায় প্রাণের স্পন্দন

পরিকল্পনামন্ত্রী  আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কাজের অগ্রগতি দেখে তিনি উচ্ছ্বসিত হয়েছেন। কারণ এ প্রকল্প এলাকায় চলছে নানামুখী কর্মযজ্ঞ। ব্যস্ততম গোটা এলাকায় বিরাজ করছে নতুন প্রাণের স্পন্দন। সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মা সেতু এলাকায় নদীশাসন কাজসহ ভাঙনপ্রবণ দুই তীর শান্ত করতে চলছে নানা কর্মযজ্ঞ। পদ্মা নদী প্রতি বছর কিছুটা সরে যাচ্ছিল। এর গতিপথ রক্ষায় পরিকল্পিতভাবে চলছে নদীশাসন প্রক্রিয়া। সংশ্লিষ্টরা জানান, সাড়ে ৭ কোটি ব্লক ব্যবহার করা হবে এখানে। এজন্য ম্যানেজমেন্ট সাপোর্ট কনসালট্যান্ট নিয়োগ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘হাই পয়েন্ট রেনডেন্ট’ পুরো পদ্মা সেতুর তদারকি করছে। এর সঙ্গে যুক্তরাজ্য ছাড়াও জাপান ও বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। সূত্র জানায়, মাওয়ার পদ্মা সেতুর নদীশাসনের ড্রেজিং এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ১ মিলিয়ন (১০ লাখ) ঘনমিটার বালি অপসারণ করা হয়েছে। এখন জাজিরা পয়েন্টে ড্রেজিং চলছে। ড্রেজিংয়ের বালি পাইনপাড়া চরে রাখা হচ্ছে। এর ফলে পানির নিচে থাকা এ চর ফসল চাষের উপযোগী হচ্ছে। এখানে ১ মিলিয়ন ঘনফুট বালি অপসারণ হবে বলে সূত্র জানায়। সংশ্লিষ্টরা আরও জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু ব্যবহার করে ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে যাতায়াতব্যবস্থা সহজতর করতে সংশ্লিষ্ট সড়কগুলোকে চার লেনে উন্নীত করা হবে। যানজট এড়াতে মহাসড়কগুলোয় ধীরগতিসম্পন্ন যানবাহনের আলাদা লেন থাকবে। এ ছাড়া এ সড়কের প্রতিটি ইন্টার সেকশনে ইউলুপ নির্মাণ করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে মাওয়া পর্যন্ত সড়ককে চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। মোট ৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়কের জন্য ব্যয় হবে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থ দিয়ে প্রকল্পের অধীনে খুলনার পাঁচ্চর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পৃথক লেন করা হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের আওতায় ২৪.৮৮ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ, ১২১ লাখ ঘনমিটার মাটির কাজ, পেভমেন্ট ওয়ার্ক ৫২ হাজার ৮৫০ এলএম, ফাউন্ডেশন ওয়ার্ক ১২ লাখ ৮ হাজার ১৭৮ এলএম, ১৯টি পিসি গার্ডার ব্রিজ, ৮টি আরসিসি ব্রিজ, ৫ দশমিক ৪ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ ব্রিজ, ২টি ফ্লাইওভার, ৪টি রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ দুর্বারগতিতে এগিয়ে চলেছে। পাল্টে গেছে এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান। ভিটেমাটি হারানো মানুষের ঠিকানা হয়েছে অত্যাধুনিক পুনর্বাসন কেন্দ্রে। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ মানুষগুলো এখন বাস করছেন শহরের আদলে নতুন এক শহরে। তারা এর আগে ভাবতেও পারেননি এমন সুবিধায় এত সুন্দর পরিবেশে তারা বসবাস করার সুযোগ পাবেন। এদিকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারানো পরিবারগুলোর জন্য নির্মাণ করা হয়েছে কুমারভোগ পুনর্বাসন কেন্দ্র। ভিতরে প্রবেশ করে দেখা যায় নতুন এক পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা। মানুষের কারও ভিটে-জমি কিংবা ফসলি জমি গেছে পদ্মা সেতু প্রকল্পে। পরিবর্তে তাদের পছন্দমতো পুনর্বাসন কেন্দ্রে মিলেছে প্লট ও নগদ অর্থ। সে টাকায় তারা কেউ টিনের ঘর তুলেছেন, কেউ বানিয়েছেন বহুতল ভবন। সরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে মসজিদ, প্রাথমিক বিদ্যালয়। দেওয়া হয়েছে পানি-বিদ্যুতের সংযোগ। ফলে আগের সেই চেনা পরিবেশ আর নেই। স্বজন ছেড়ে নতুন এলাকায় নতুন জীবনে অভ্যস্ত হতে শুরু করেছেন সবাই। দেখা যায়, কুমারভোগ এলাকায় শিশু-কিশোরদের জন্য বানানো স্কুলটিতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। স্কুলটি চালু হওয়ার পথে। তবে এখানকার মানুষের কিছু আপত্তিও রয়েছে। এখানে আসার তিন বছর পর জমির দলিল দেওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো পাননি তারা। পুরো পদ্মা সেতু প্রকল্পে সাতটি কেন্দ্রে ২ হাজার ৬৩৫টি পরিবারকে পুনর্বাসনের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত করা হয়েছে ১ হাজার ৬০০ পরিবারকে। বাকিরা পাওয়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।

সর্বশেষ খবর