নবম শ্রেণি পড়া অবস্থায় মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয় সাবিহা বেগমের। বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার কুশারীগাঁও (বড়বাড়ি) গ্রামে। এখন তার বয়স ৩২ বছর।
মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় তাকে দীর্ঘ ৯ বছর একটি ঘরে হাতে শিকল বেঁধে বন্দী অবস্থায় রাখা হয়েছে। সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাতে শিকলবন্দী অবস্থায় কাঠের একটি চৌকিতে বসে আছেন সাবিহা। তার মা আলেয়া বেগম জানান, নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয় সাবিহার। বিয়ের ৩ মাস পরই পারিবারিক কলহের কারণে স্বামীর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে তার মেয়ে। এরপর মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় মায়ের কুশারীগাঁও গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় স্বামী মিজানুর রহমান। এ অবস্থাতেই সাবিহা বেগম গর্ভবতী হয়ে এক ছেলে সন্তানের জননী হন। এরপর আর কোনো খোঁজ রাখেনি স্বামী মিজানুর রহমান। তার স্বামীর বাড়ি জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার রাতোর গ্রামে। দরিদ্র মা-বাবার পরিবারেই নতুন জীবন শুরু হয় সাবিহা ও তার ছেলে সন্তানের। সাবিহা তার বাবা-মায়ের একমাত্র কন্যা সন্তান। সাবিহার মা-বাবা দুজনই দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছিলেন; কিন্তু বাবা ইমাম উদ্দিন চার বছর আগে মারা যান। এরপর ৬৯ বছর বয়সী বৃদ্ধ মা-ই কখনো অন্যের ক্ষেতে আবার কখনো অন্যের বাড়িতে কাজ করে পরিবারের খরচ জোগান দিয়ে আসছেন। এর মধ্যে মেয়ে যেন ভালো হয়ে যায় এ আশায় কষ্ট করে কিছু টাকা জমিয়ে ডাক্তার দেখিয়েছেন। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। কারণ তার পক্ষে সাবিহার উন্নত চিকিৎসা করানোর অর্থ জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। শিকলে বেঁধে ঘরে আটকে রাখার কারণ জানতে চাইলে তার মা বলেন, শিকল ছাড়া থাকলে অন্যের বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর করে। মানুষকে ইট ছুড়ে মারে। আমাকে অনেক সময় মারধর করে। এ জন্য ৯ বছর যাবৎ তার হাতে শিকল বেঁধে বন্দী অবস্থায় রাখা হয়েছে। সাবিহার ছেলে মাখমুদ রহমান বর্তমানে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। তার ছেলে বলেন, বাবা মিজানুর তার কোনো খোঁজ নেয় না। কষ্ট করেই নানী তাকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। সে আরও বলে, মাকে যদি ভালো ডাক্তার দেখানো যেত তাহলে মা সুস্থ হয়ে যেত। কিন্তু টাকার কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। সে আক্ষেপ করে বলে, নিজের বাবা বেঁচে থেকেও নেই। তাদের কোনো খোঁজ নেয় না। টাকার অভাবে কখন যে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় এই ভয় সব সময় করে। খুব কষ্ট করেই দিন পার করতে হচ্ছে; অন্যদিকে মায়ের চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না।