শনিবার, ৭ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

দারুণ কদরে চাঁদবিলের রকমারি তৈজসপত্র

মাহবুবুল হক পোলেন, মেহেরপুর

দারুণ কদরে চাঁদবিলের রকমারি তৈজসপত্র

মেহেরপুর সদর উপজেলার চাঁদবিল গ্রামে কুমারদের তৈরি তৈজসপত্রের কদর দেশজুড়ে। এঁটেল মাটি দিয়ে তাদের তৈরি মুড়ি ভাজার হাঁড়ি, রুটি বানানোর তাওয়া, মালসা, পানির কলস, ফুলের টব, ফুলদানি দেব-দেবীর মূর্তিসহ ঘর সাজানোর বিভিন্ন তৈজসপত্র শুধু প্রত্যন্ত জনপদের মানুষের কাছে নয়— রাজধানী ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কদর পাচ্ছে। মেহেরপুর শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের আমঝুপি ইউনিয়নের একটি ছোট্ট গ্রাম চাঁদবিল। এ  গ্রামের নারী-পুরুষ সবাই নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় বিভিন্ন ডিজাইনের মাটির তৈজসপত্র তৈরি করেন। এদের মধ্যে বয়সের ভারে ক্লান্ত চাঁদবিলের বিষ্ণু পাল। নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি করছেন তৈজসপত্র। তিনি জানান, ১৯৫৪ সাল থেকে তিনি এখানে মাটির মায়ায় জড়িয়ে আছেন। নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি করছেন বিভিন্ন তৈজসপত্র। আর এসব তৈজসপত্র দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছেন পাইকার-ক্রেতারা। জগন্নাথ পালের স্ত্রী সমিতা পাল জানান, কিশোরী বয়সে বাবা-মার  দেখাদেখি তিনি এ কুমোর পেশার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। রাত-দিন কাদা মাটির কাজ করে মাটির মানুষ হয়ে গেছেন। সংসারে ৬ মেয়ে ২ ছেলে। এই পেশায় থেকেই তিনি দুই বিঘা জমি কিনেছেন। পাকা দালান গড়েছেন। ছেলে-মেয়েদের  লেখা-পড়া করাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আগে মাটি এমনিই পাওয়া যেত। এখন মাটি কিনতে হয় বলে উৎপাদিত সামগ্রীর দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।’ গ্রামের নবীন পাল জানান, মাটির তৈরি অন্যান্য জিনিসের পাশাপাশি বেড়েছে পোড়া মাটির রিংয়ের চাহিদা। স্বল্প খরচে ভূ-গর্ভস্থ ট্যাংক তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে এই রিং দিয়ে। যেখানে ইট, বালি, সিমেন্ট দিয়ে একটি ট্যাংক তৈরি করতে খরচ হয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা, সেখানে রিং দিয়ে সম পরিমাণ ট্যাংক তৈরি করতে খরচ হয় সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। যার কারণে মানুষের কাছে এ রিংয়ের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। আমঝুপি ইউনিয়নের প্রবীণ ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম বাবলু জানান, আমঝুপির চাঁদবিল গ্রামের কুমারদের তৈরি সামগ্রীর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। কারণ মান ভালো। এজন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই গ্রামে এসে এগুলো কিনে নিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে বিক্রি করেন পাইকাররা। তিনি আরও জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে, কুমারদের প্রশিক্ষণ এবং উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করা হলে এ শিল্পে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। এ গ্রামের পরিচিতি ফুটিয়ে তুলতে পারলে যেমন এলাকার সুনাম বৃদ্ধি পাবে, তেমনি দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীরা এসে তাদের পছন্দের তৈজসপত্রও সংগ্রহ করতে পারবেন। এতে এখানকার সুনিপুণ কারিগররা মধ্যস্বত্ব ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে অধিক মুনাফার মুখ দেখবেন।

সর্বশেষ খবর