রাজধানী ঢাকাজুড়ে এখন চলছে খোঁড়াখুঁড়ির উৎসব। নগরীর পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত, দক্ষিণ থেকে উত্তর প্রান্ত এমন কোনো সড়ক বা অলিগলি নেই, যেখানে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে না। সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, তিতাস, ডেসকোসহ সবাই মিলে প্রতিদিনই কোনো না কোনো সড়ক, অলিগলি খুঁড়ছে। আজ এই প্রতিষ্ঠান কাটছে তো কাল কাটছে আরেক প্রতিষ্ঠান। সেটি কাজ শেষ করে চলে যাওয়ার পর আরেক প্রতিষ্ঠান এসে নতুন করে খনন করছে রাস্তা। নগরবাসীকে উন্নত রাস্তাঘাট, পরিচ্ছন্ন নর্দমা বা খাল, গ্যাস, বিদ্যুৎ আর পানির সেবা পৌঁছে দিতে চলতে থাকা এমন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নাগরিক জীবন। প্রতিদিন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির ফলে নগরজুড়ে উড়ছে ধুলোবালি। এর প্রভাবে নগরবাসী নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির পাশাপাশি নগরীর ফুটপাথগুলোর অবস্থা অত্যন্ত বেহাল। সব মিলিয়ে এখন রাস্তায় চলাচল করা নগরবাসীর জন্য সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ। অথচ এ দুর্ভোগ সারাতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কোনো রকম তত্পরতাই চোখে পড়ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ঢাকার ভিতর দুই সিটি করপোরেশনের আওতায় রয়েছে প্রায় ২২০০ কিলোমিটার সড়ক। এর মধ্যে কমপক্ষে ৫০ ভাগ সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। এর মধ্যে ৮০ ভাগ সড়কেই উন্নয়ন কাজ করছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এই উন্নয়ন কাজের মধ্যে সড়ক নতুন করে উন্নয়ন, ফুটপাথের উন্নয়ন এবং নর্দমা ও খালের উন্নয়ন হচ্ছে অন্যতম। আর এই উন্নয়ন করতে গিয়েই কয়েক মাস ধরে রাজধানীর রাস্তাঘাট হয়ে পড়েছে বিপন্ন। আর এই উন্নয়নের খপ্পরে নগরবাসী পড়েছেন মহাবিপাকে। শুষ্ক মৌসুমে এসব উন্নয়ন কাজ শুরু হলেও বর্ষা মৌসুম প্রায় চলে আসার পরও থেমে নেই রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ি। রাজধানীর মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর-১০, ১, ২, সাড়ে ১১, মোহাম্মদপুর, জাকির হোসেন রোড, জহুরি মহল্লা, বিজরি মহল্লা, লালমাটিয়া, ধানমন্ডি, পুরান ঢাকার কবি নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে লক্ষ্মীবাজার, সোহরাওয়ার্দী কলেজ মোড়, টিকাটুলি, হাটখোলাসহ বিভিন্ন এলাকা, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, মালিবাগ, খিলগাঁও, বাসাবো, মতিঝিল, আরামবাগ, মৌচাক, সেগুনবাগিচা, পল্টন, কমলাপুর, রামপুরা, হাজীপাড়া, বাড্ডা, গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরার বিভিন্ন সেক্টরের সড়কগুলো কেটে একাকার করে দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, অধিকাংশ রাস্তায় উন্নয়ন কাজ চলছে। কোথাও কোথাও চলছে সংস্কারের কাজ। রাস্তা মেরামতের পাশাপাশি এসব এলাকায় পুরনো ভাঙাচোরা ফুটপাথ নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। এসব কারণে নগরবাসীকে কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই দুর্ভোগ সাময়িক জানিয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, শিগগিরই রাস্তা সংস্কারের কাজ শেষ হবে। সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যেসব এলাকায় একবার রাস্তা খোঁড়া হয়েছে, তা আর ঠিক হয়নি। লালমাটিয়া এলাকায় কয়েক মাস ধরেই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে। এখানে মূলত রাস্তা কাটাছেঁড়া করছে ওয়াসা। নতুন পানির লাইন বসানোর নামে ওয়াসা কয়েক মাস ধরে দুই-তিন দিন পরপর একই রাস্তা দফায় দফায় কেটেছে। কিন্তু ওয়াসার কাজ সম্প্রতি শেষ হলেও সে রাস্তা আজও মেরামত হয়নি। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই এসব রাস্তায় ব্যাপকভাবে কাদাপানি জমে থাকছে। এ অবস্থায় এসব রাস্তা দিয়ে চলাচল করাই দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। একই অবস্থা গুলশান এলাকায়। এখানে ওয়াসা পানির লাইন স্থাপনের কাজ করেছে। কিন্তু তাদের কাজ সম্প্রতি শেষ হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত রাস্তা মেরামত হয়নি। ফলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নগরীর অভিজাত এলাকার নাগরিকরা। একইভাবে এলিফ্যান্ট রোড থেকে সোনারগাঁও রোড পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ ক্যাবল স্থাপনের জন্য চলছে সড়ক কাটাছেঁড়া। বাংলামোটর থেকে মগবাজার, মৌচাক হয়ে শান্তিনগর পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে দীর্ঘদিন ধরে। নগরবাসীর অভিযোগ, সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার অভাবে একই রাস্তা কাটাছেঁড়া চলে দফায় দফায়। এ কারণে জনদুর্ভোগের মাত্রাও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। নগরবিদদের মতে, নগরবাসীর স্বার্থেই সিটি করপোরেশনের কাছে সেবা সংস্থাগুলোর জবাবদিহির ব্যবস্থা করা জরুরি। তাহলে সবগুলো সংস্থার মধ্যে সমন্বয় থাকবে। নগরবাসীকেও দুর্ভোগ পোহাতে হবে না।