সোমবার, ৯ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

পার্বত্য চুক্তির বেশিরভাগই বাস্তবায়িত

পাহাড়ে থাকবে চার ব্রিগেড সেনা, বাকি সব প্রত্যাহার : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

পার্বত্য চুক্তির বেশিরভাগই বাস্তবায়িত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার পার্বত্যাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করছে। ইতিমধ্যে শান্তিচুক্তির মাধ্যমে সে অঞ্চলে সংঘাত বন্ধ করেছি। চুক্তি অনুযায়ী চারটি ব্রিগেড ছাড়া বেশির ভাগ সেনা ক্যাম্পও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নানা অবকাঠামো উন্নয়ন করেছি। আর যেটুকু বাকি আছে, আমরা সব করে দেব। কেবল ভূমিসংস্কার ছাড়া পার্বত্য চুক্তির বেশির ভাগই বাস্তবায়িত হয়েছে। গতকাল সকালে রাজধানীর বেইলি রোডে অফিসার্স ক্লাবের পাশে দুই একর জমির ওপর পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স নির্মাণের ভিত্তিফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীরাও বাংলাদেশের নাগরিক। তারা আমাদের স্বজন, আমাদের লোক। তাদের দেখাশোনা তো আমাদেরই করতে হবে। সরকার ওই অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ খাত এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পার্বত্য চুক্তির পুরোপুরি বাস্তবায়নে সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতেও আহ্বান জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ভূমিসংস্কারের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন একাধিকবার গঠন করেছে। কিন্তু  কমিশনের কাজ সন্তোষজনকভাবে এগোয়নি। কারণ, সেখানে কিছুটা অবিশ্বাস ও দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছিল। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে। তিনি বলেন, সেনা ক্যাম্পগুলো বেশির ভাগই তুলে নেওয়া হয়েছে। চারটি জায়গায় কেবল চারটি ব্রিগেড থাকবে। বাকিগুলো সব সরিয়ে নেওয়া হবে। এ জন্য রামুতে একটি সেনানিবাস করা হয়েছে। ওই অঞ্চলে তার সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আইন ২০০১-এর কতিপয় সংশোধনীর বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে পর্যালোচনা চলছে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে সম্ভব সবকিছু করতেই সরকার প্রস্তুত রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। পার্বত্যাঞ্চলের উন্নয়নেও কাজ করছি। এ অঞ্চলে পর্যটকরা যেন আরও বেশি আকৃষ্ট হন, সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই অঞ্চলের উন্নয়নে আমরা নজর দিয়েছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা রাস্তা করে দিয়েছি, চাষাবাদের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ব্রিজ করেছি। এক হাজার কিলোমিটার রাস্তা করেছি, বিদ্যুৎ দিয়েছি। ৮৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছি প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর জন্য। কারিগরি প্রতিষ্ঠান করে দিয়েছি, যেন ছেলেমেয়েরা শিক্ষা নিতে পারে। তিনি স্মরণ করেন, পার্বত্যাঞ্চলে একসময় সংঘাত ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেই সংঘাত বন্ধে শান্তিচুক্তি করেছে। অথচ বিএনপি সেই শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করেছিল। তারা হরতাল ডেকেছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে যখন অস্ত্র সমর্পণের আয়োজন করা হয়, তখন বিএনপি হরতাল ডাকে। তারা বলেছিল অস্ত্র সমর্পণ কর?া যাবে না। বিএনপি নেত্রী সেসময় বলেছিলেন, এই চুক্তি হলে নাকি ফেনী থেকে পুরো পার্বত্যাঞ্চল ভারতের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। দেশের ভিতর থেকেই এই চুক্তির বিরোধিতা হয়েছে। কেন হয়েছে তাও জানি না, তবু সেই চুক্তি হয়েছে। পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি ফিরেছে। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের সুসম্পর্ক ছিল এবং আছে। যে কারণে শান্তিচুক্তি করা সম্ভব হয়েছিল। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি হয়েছিল। যদিও শান্তিচুক্তি এত সহজ ছিল না। পাহাড়ি অঞ্চলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এখন সেই পরিস্থিতি নেই। শান্তিচুক্তির অধিকাংশ ধারা আমরা বাস্তবায়ন করেছি। শান্তিচুক্তি হলেও ২০০১ বিএনপি ক্ষমতায় এসে পার্বত্য অঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্ক দেয়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেন নেটওয়ার্ক দেয়নি জানি। আমরা ক্ষমতায় এসে সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্কের ব্যবস্থা করেছি। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা চারবার সেখানে গিয়েছিলেন। তিনিও পার্বত্য অঞ্চলের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আমরাও পার্বত্য অঞ্চলকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। পার্বত্য অঞ্চলে নতুন নতুন ইউনিয়ন ও উপজেলা করে দিচ্ছি। যেন ওই অঞ্চলে মানুষ সহজে সেবা পেতে পারে। অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক এবং জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র. আ ম উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শেষ অংশে দর্শক সারিতে বসে পাহাড়ি অঞ্চলের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় দুই একর জমির ওপর নির্মাণাধীন এই পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স প্রকল্পে ছয় তলা ভবন, মাল্টিপারপাস হল, ডরমেটরি, প্রশাসনিক ভবন, জাদুঘর, গ্রন্থাগার, ডিসপ্লে সেন্টার, থিয়েটার হল, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর বাসভবন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের বাসভবন থাকবে।

সর্বশেষ খবর