সোমবার, ৯ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

কুষ্টিয়ার ৮ নদী এখন মরা খাল

জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়ার ৮ নদী এখন মরা খাল

ভারতের ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাব, দখলবাজি আর সংস্কার না করার কারণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ৮টি নদী। এক সময়ের খরস্রোতা এসব নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। বোঝারই উপায় নেই, এক সময় এসব নদীতে বড় বড় পাল তোলা নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার চলত।

দেশের প্রধান নদী পদ্মা। জেলার দৌলতপুর উপজেলার ভেতর দিয়ে এ নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পদ্মার অন্যতম শাখা গড়াই ও মাথাভাঙ্গা নদীর উত্পত্তিও এ জেলায়। ভারত পদ্মা নদীর উজানে ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করায় দেশের দীর্ঘ ও বৃহত্তম পদ্মা নদী আজ হুমকির মুখে। ঐতিহাসিক গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি হলেও নানা অজুহাতে ভারত পানির ন্যায্য হিস্সা দিচ্ছে না। এতে নদীর অবস্থা দিনকে দিন সঙ্গীন হচ্ছে। ফলে নদীর কোথাও কোথাও এখন হাঁটু পানি। আর এরই প্রভাব পড়েছে গড়াই ও মাথাভাঙ্গা নদী এবং এর শাখা, উপশাখা নদী ও বিল হাওড়গুলোর ওপর। ওয়াকেবহাল সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া থেকে উত্পত্তি হয়ে গড়াই নদী বলেশ্বর নামে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ নদী দেশের উপকূলভাগে মিঠা পানির অন্যতম আধার। শুষ্ক মৌসুমে এ নদী শীর্ণকায় হয়ে পড়ে। ফলে উপকূলভাগ থেকে লোনা পানি উঠে আসে উজানের দিকে। এরই মধ্যে এ লবণাক্ততা মাগুরা জেলার মহাম্মদপুর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রভ বন সুন্দরবনসহ উপকূলীয় জেলাগুলোর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ১৯৯৮ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়াই নদী খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। কিন্তু পরে ক্ষমতার পালাবদলের পর এ কাজের রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় বিগত বছরগুলোতে নদী আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। বর্তমান সরকার গত বছর থেকে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে গড়াই নদী পুনঃখনন প্রকল্প হাতে নিলেও তা কাজে আসছে না। শুষ্ক মৌসুম এলেই গড়াই পরিণত হচ্ছে মরা খালে। পদ্মা নদী থেকে মাথাভাঙ্গা নদীর উত্পত্তি জেলার দৌলতপুর উপজেলায়। শুষ্ক মৌসুমে পদ্মার পানিপ্রবাহ কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে মাথাভাঙ্গার উৎসমুখ শুকিয়ে যায়। এদিকে পদ্মা, গড়াই ও মাথাভাঙ্গার মতো বড় নদীগুলোতে দিন দিন পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে এ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হিসনা, কালী, চন্দনা, সাগরখালী ও কুমারনদী। দৌলতপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হিসনা নদী আর শাখা নদী কুমার। এ নদী দুটির এখন করুণদশা। মাছ চাষের নামে স্থানীয় প্রভাবাশালীরা হিসনা নদীতে অসংখ্য বাঁধ দেওয়ায় এর পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া ওই উপজেলার মথুরাপুর, হোসেনাবাদ, আল্লার দরগা ও ভেড়ামারা শহরের কাছে ক্ষমতাধররা এ নদীর দুপাড় দখল করে বাড়ি ও দোকানপাট নির্মাণ করেছে। আর হিসনার শাখা কুমার নদীর পুরোটায় চলে গেছে দখলদারদের পেটে। ভেড়ামারা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে চন্দনা। তবে পদ্মার শাখা এ নদীর অবস্থাও কুমার নদীর মতো। মিরপুর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সাগরখালি নদী। কয়েক বছর আগে খনন করে এর প্রাণ ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাতে কাজ হয়নি। প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছে এ নদীর দুপাড়। কুষ্টিয়া সদর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে কুমার নদী (২)। গড়াইয়ের শাখা এ নদীটি বিলীন হওয়ার পথে। বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে নদীটিতে। ঝাউদিয়া ও বৈদ্যনাথপুর বাজারসংলগ্ন এলাকায় নদীর বড় অংশ দখল করে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। নদীর অর্ধেক অংশ শুকিয়ে পানিপ্রবাহ থেমে গেছে। বর্ষায় এসব নদীতে পানি থাকলেও তলদেশ ভরাটের ফলে শুষ্ক মৌসুমে অধিকাংশ নদীতে পানি থাকে না। এসব নদীর বুকজুড়ে তখন চাষাবাদ হয়। এ অবস্থায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় নদীগুলো খনন করে পানিপ্রবাহ সচলের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর