সোমবার, ৯ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

কোয়েল পাখিতে দারিদ্র্য জয়

নওগাঁ প্রতিনিধি

কোয়েল পাখিতে দারিদ্র্য জয়

নওগাঁ সদরের আনন্দনগর মহল্লায় বেকার দরিদ্র হোসেন আলী কোয়েল পাখি পালনের মাধ্যমে দারিদ্র্য জয় করেছেন। ছয় বছর আগে মাত্র ২০০টি কোয়েল পাখি পালন শুরু করে এখন প্রায় ৪ হাজার কোয়েল পাখির মালিক হয়েছেন। তার খামার থেকে দিনে এক থেকে দেড় হাজার ডিম এবং মাসে ৪ হাজার পাখি উৎপাদিত হচ্ছে। মাসে সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ হচ্ছে গড়ে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। হোসেন আলী জানান, বেকার অবস্থায় মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে সংসারের খরচ মেটাতে হিমশিম খেতেন। এরই একপর্যায় কিছু টাকা হাতে জমা হলে ২০১০ সালে ডিম ও মাংস খাওয়ার জন্য স্ত্রী মরিয়ম বেগমের সঙ্গে পরামর্শ করে মাত্র ১০ হাজার টাকা দিয়ে ২০০ কোয়েল পাখি কিনে ঘরের মেঝেতে পালন শুরু করেন। মাসখানেক পর বুঝতে পারেন এগুলোর অর্ধেক পুরুষ এবং অর্ধেক মেয়ে পাখি। পরে তিনি পুরুষ পাখির বেশির ভাগ বাজারে বিক্রি করে মেয়ে পাখিগুলো পালন শুরু করেন। হোসেন আলী আরও জানান, প্রায় ৪৫ দিন পর পাখি ডিম দেয়া শুরু করে। কয়েক দিনের ডিম জড়ো করে বাজারে বিক্রি করে ভালো লাভ পান। এরপর বিভিন্নজনের সঙ্গে পরামর্শ করে বাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে ডিম ফুটানোর মেশিন কেনেন। তাতে বাচ্চা ফোটানো শুরু করেন। বাচ্চা ফুটতে ১৮ দিন লাগে। এভাবে ক্রমেই কোয়েল পাখি বৃদ্ধি পেতে থাকে। পাখি এবং ডিম বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় বছরে আরও ৩টি মেশিন কেনেন। বর্তমানে মোট ৪টি মেশিনে ৪ দিন পরপর ৪ হাজার ডিম মেশিনে লোড দেওয়া হয়। চার দিন পর সেখান থেকে ২ হাজার থেকে ২২০০ বাচ্চা পান। বাকি ডিম নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে একটি ডিম পাইকারি ২ টাকায় বিক্রি হয়। এ ছাড়া একদিনের ফুটানো বাচ্চা ৫-৬ টাকা দরে বিক্রি করেন। তিনি আরও জানান, চার হাজার ডিম বিক্রি করে আট হাজার টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু একই পরিমাণ ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন করে ১১ হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা পাওয়া যায়। ডিম বিক্রির চেয়ে বাচ্চা উৎপাদনে বেশি লাভ হয়। এ জন্য হোসেন আলী নিজেই তার খামারে বাচ্চা উৎপাদন করেন। চার হাজার ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন করতে মাত্র দেড়শ টাকার বিদ্যুৎ বিল আসে। প্রতিটি কোয়েল পাখি প্রায় ৯ মাস ডিম দিয়ে থাকে। আর এক হাজার কোয়েল পাখির জন্য প্রতি মাসে মাত্র ৫ বস্তা খাবারের প্রয়োজন হয়। প্রতি বস্তা খাবারের দাম ২১০০ টাকা। এ পাখির রোগবালাই খুবই কম হয়। প্রতিপালনে পরিশ্রমও কম করতে হয়। এক মাস বয়সী এবং ডিম দেয়া শেষ হয়েছে এমন প্রতিটি কোয়েল পাখি পাইকারি ২০-২২ টাকায় বিক্রি হয়। মাসে তিনি গড়ে বড় (খাওয়ার উপযুক্ত) তিন হাজার কোয়েল পাখি বাজারে বিক্রি করেন। এক হাজার কোয়েল পাখির উৎপাদন ও খাদ্য খরচ বাদ দিয়ে গড়ে দুই থেকে তিন হাজার টাকা লাভ হয়। এক হিসাব থেকে হোসেন আলী জানিয়েছেন, ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন শেষে বড় কোয়েল পাখি বিক্রি করে মাসে খামার থেকে তার খরচ বাদ দিয়ে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা লাভ হয়। তিনি জেলার বিভিন্ন উপজেলায়, রাজধানী ঢাকা, রাজশাহী, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় কোয়েল পাখি পাইকারিভাবে বিক্রি করেন। হোসেন আলীর স্ত্রী মরিয়ম বেগম জানান, আগে সংসারে অভাব ছিল। অভাবের তাড়নায় হোসেন রিকশা চালাতেন। কিন্তু কোয়েল পাখি পালন করে এখন ভাগ্যে পরিবর্তন এসেছে। সংসারে এখন সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। দুই ছেলে মানিক এবং সাগরকে পড়াশোনার জন্য ভালো স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। নওগাঁ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহফুজার রহমান জানান, হাঁস-মুরগির মতো কোয়েল পাখি পালন করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। কোয়েল পাখির রোগব্যাধি কম। এ জন্য টিকা দিতে হয় না এবং কৃমির ওষুধও খাওয়াতে হয় না।

 জাতভেদে কোয়েল পাখি তিন ধরনের হয়। যেমন বন্য, বাণিজ্যিক ও ব্রিডার কোয়েল পাখি। জাত ও উপজাত ভেদে কোয়েলের গায়ের রং, ওজন, আকার, আকৃতি, ডিমপাড়ার হার, ডিমের ওজন ইত্যাদির পার্থক্য হয়।

ডিম এবং মাংস উৎপাদনের জন্য খামারিদের কাছে বাণিজ্যিক জাতের কোয়েল পাখি গুরুত্বপূর্ণ। কোয়েল পাখি সাধারণত ৬-৭ সপ্তাহের মধ্যে ডিম দেওয়া শুরু করে এবং বছরে ২৯০-৩০০টি ডিম দেয়।

সর্বশেষ খবর