বুধবার, ১৮ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

তিন বছরের মধ্যেই কক্সবাজার দোহাজারী রেললাইন চালু

প্রকল্পের টেন্ডার চলতি মাসেই

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

বহুল প্রতীক্ষিত কক্সবাজার-দোহাজারী-ঘুনধুম রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়নে চলতি মাসেই টেন্ডার আহ্বান করা হচ্ছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুমোদনের জন্য এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. মোজাম্মেল হক।

তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তিন বছরের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে সব কর্মকাণ্ড দ্রুত এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পে সংশোধনী এনে ব্যয়ও বাড়ানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী একনেকে অর্থ ছাড় দেওয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আরও গতি পাবে বলে তিনি জানান।

জানা যায়, প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা অনুমোদন দিয়ে আগামী তিন বছরের মধ্যেই কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে    একে ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্পের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতেও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। যদিও প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুনের মধ্যে সম্পন্ন করার সময় নির্ধারিত রয়েছে।

প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প পরিচালক (এপিডি) মফিজুর রহমান বলেন, প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৪ হাজার ৯১৯ কোটি ৭ লাখ ও এডিবি ঋণ থেকে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা জোগান হবে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় দুই ধাপে ১২৯ দশমিক ৫৮৩ কিলোমিটার রেলপথ নির্মিত হবে। এর মধ্যে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার এবং রামু থেকে মিয়ানমার-সংলগ্ন ঘুনধুম পর্যন্ত হবে ২৮ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার রেলপথ। বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্যকে প্রাধান্য দিয়ে দোহাজারী-ঘুনধুম প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। এগুলো হলো ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে (টিএআর-১) করিডরের মিসিং লিঙ্ক নির্মাণ, পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা, পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগব্যবস্থা প্রবর্তন, সহজে ও কম খরচে মাছ, লবণ, কাগজের কাঁচামাল এবং বনজ ও কৃষি দ্রব্যাদি পরিবহন। এর আগে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু নানা জটিলতায় প্রকল্পটির কাজ পিছিয়ে যায়। সিঙ্গেল লাইন মিটার গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি বর্তমানে ডুয়েল গেজ প্রকল্পে পরিণত করা হয়েছে। প্রকল্পের জন্য কক্সবাজারে ৯৯৬ দশমিক ৫৪৩ একর ও চট্টগ্রামে ২৮০ দশমিক ৬১ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। জমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বিগত অর্থবছরে বাজেটে জমি অধিগ্রহণে ৩০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্য থেকে ৩০২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে প্রদান করা হয়। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পটি ডুয়েল গেজে রূপান্তরের লক্ষ্যে কেনারেল কনসালট্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল (কানাডা), ডিবি ইন্টারন্যাশনাল জিএমবিএইচ (জার্মানি), স্মেক ইন্টারন্যাশনাল পিটিওয়াই লিমিটেড (অস্ট্রেলিয়া) ও এসিই কনসালট্যান্ট লিমিটেড (বাংলাদেশ) নামের চারটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাদের চালানো জরিপের প্রজেক্ট প্রোফাইল (পিপি) রেল কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়। যেখানে নতুন করে আরও চারটি স্টেশন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। সূত্র জানায়, ১৯৫৮ সালে পূর্ব বাংলা রেলওয়ে চট্টগ্রামের দক্ষিণ দিক থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের জন্য সার্ভে পরিচালনা করে। ১৯৭১ সালে জাপান রেলওয়ে টেকনিক্যাল সার্ভিস (জেআরটিএস) লাইনটির ট্রাফিক সম্ভাবনা যাচাইয়ে সমীক্ষা চালায়। পরে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে জেআরটিএস ১৯৭৬-৭৭ সালে ডাটা সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন করে। ১৯৯২ সালে এটি ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের রুট হিসেবে চিহ্নিত হয়।

সর্বশেষ খবর