বুধবার, ১৮ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাজার থেকে কিনে গুদামে গম বিক্রি করছেন নেতারা

মেহেরপুর প্রতিনিধি

গেল বছর চাষি সেজে জেলার খাদ্য গুদামগুলোয় গম সরবরাহ করেছিল ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সিন্ডিকেট। এবারও সেই একই কৌশলে সরকারি গুদামে গম সরবরাহ করছেন দলের নেতা-কর্মীরা। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ২৪ এপ্রিল মেহেরপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে গম সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। তবে এখনো কোনো কৃষক গম দিতে পারেননি। গম সংগ্রহ অভিযান শেষ হবে ৩১ মে। কেজিপ্রতি গমের সরকার নির্ধারিত মূল্য ২৮ টাকা। অন্যদিকে বাজারে ১৭-১৮ টাকা। সরকার নির্ধারিত মূল্য কেজিতে ১০-১১ টাকা বেশি হওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের সিন্ডিকেটগুলো গম দিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। জেলা ও উপজেলায় গম ক্রয় কমিটি বৈঠক করলেও কবে গম কেনা শুরু হবে তা চাষিদের জানানো হয়নি। তবে সিন্ডিকেট ইতিমধ্যে গুদামে গম ঢোকাতে শুরু করেছে। খোলা বাজার থেকে কম দামে কিনে বেশি দামে সরকারি গুদামে গম দিয়ে যে বিপুল পরিমাণ লাভ আসবে তা ভাগাভাগি হবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন নেতা-কর্মীর মধ্যে। তবে লভ্যাংশের বেশির ভাগটি যাবে এমপিদের পকেটে। মূলত জেলার এমপিরাই সিন্ডিকেটের নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। কেন্দ্রীয় গম সংগ্রহ কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত বছর এমপি ও তার স্বজনরা যেভাবে গমের লাখ লাখ টাকা পকেটে ভরেছেন একইভাবে এবারও ভরবেন। খাদ্য অধিদফতর থেকে জানা গেছে, চলতি বছর ৫ হাজার ৯৬০ মেট্রিক টন গম সংগ্রহ করা হবে। খাদ্য সংগ্রহ নীতিমালা অনুযায়ী উপজেলায় গমের বরাদ্দকৃত কোটা ইউনিয়ন ভিত্তিতে ভাগ হবে। উপজেলা ও ইউনিয়ন কৃষি কর্মকর্তারা গম চাষি শনাক্ত করবেন। শনাক্ত হওয়া চাষিরা জাতীয় পরিচয়পত্র ও কৃষি উপকরণসহায়ক কার্ড দেখিয়ে গম দিতে পারবেন। একজন চাষি সর্বনিম্ন ১০০ কেজি ও সর্বোচ্চ ৩ টন পর্যন্ত সরকারি গুদামে গম দিতে পারবেন। নীতিমালায় আরও বলা আছে, প্রকৃত কৃষক ছাড়া আন্যের কাছ থেকে গম কেনা যাবে না। কিন্তু মেহেরপুর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম পেরেশান বলেন, আমঝুপি গুদামের প্রকৃত গম চাষিদের গম দিতে দেওয়া হচ্ছে না। পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস, আমঝুপি ইউনিয়নের বোরহান উদ্দিন চুন্নু ও মহাজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমাম হোসেন মিলুর পছন্দের লোক ছাড়া কেউ গম দিতে পারছে না। জেলার খাদ্য গুদামে এদের স্বাক্ষরিত স্লিপ নিয়ে গম সরবরাহ করতে হচ্ছে। কোনো কৃষক গম নিয়ে গেলে পেটোয়া বাহিনী তাদের মারধর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে। আমঝুপি গ্রামের কৃষক আমানুল্লাহ বলেন, ‘গত মঙ্গলবার আমঝুপি খাদ্য গুদামে গম দিতে গেলে বোরহান উদ্দিন চুন্নুর স্লিপ না থাকায় তার লোকজন আমাকে ও অন্য কৃষক জুয়েলকে মারধর করেন। এ বিষয়ে খাদ্য গুদামের কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাইনি।’ গাংনী উপজেলার চাষি রাসেল বলেন, ‘ক্ষমতাসীন এমপি ও নেতাদের কারণে গুদামের সামনেই যাওয়া যাচ্ছে না।’ সদর উপজেলার কৃষক রাইহানুর বলেন, ‘চাষিরা কৃষি উপকরণসহায়তা কার্ড নিয়ে গিয়েও গম দিতে পারছেন না।’ এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে চাষিদের মাঝে গম কেনার ব্যাপারে কোনো প্রচার-প্রচারণাও চালানো হচ্ছে না। ফলে অনেক গম চাষি এখনো জানেন না সরকারিভাবে গম কেনার কথা। গুদামের গেটে বসানো হয়েছে পুলিশ প্রহরা, কোনো কৃষক গম নিয়ে গেলে পুলিশ দিয়ে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কৃষি উপকরণসহায়তার কার্ড নিয়ে গেটের সামনে কৃষকের বিক্ষোভেও কোনো লাভ হয়নি। এদিকে ক্ষমতাসীন দলের চক্রগুলো নিজেরাই বাজার থেকে গম কেনা শুরু করেছে। আবার কেউ কেউ সিন্ডিকেট গুদামে গম সরবরাহের টোকেন পাইকারি ও বেপারিদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। মেহেরপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা আবদুল ওয়াহেদ বলেন, কৃষি উপকরণসহায়তা কার্ড ও ব্যাংক হিসাব দেখেই চাষিদের কাছ থেকে গম নেওয়া হচ্ছে। কোনো ব্যক্তির স্লিপে গম নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানেন না।

সর্বশেষ খবর