বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

মমতা নাকি সূর্যকান্ত কে হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

মমতা নাকি সূর্যকান্ত কে হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী

আজ পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভা নির্বাচনের ভোট গণনা। সর্বত্র চলছে জল্পনা— কে হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি কংগ্রেস বাম জোট নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র? ভোট গণনা উপলক্ষে প্রতিটি গণনা কেন্দ্রই কার্যত দুর্গে পরিণত হয়েছে। কড়া নিরাপত্তায় আজ সকাল ৮টা থেকে শুরু হচ্ছে গণনা। গণনা হবে রাজ্যের ৯০টি কেন্দ্রে। নির্বাচন কমিশনের গাইডলাইন অনুযায়ী প্রথমে পোস্টাল ব্যালট গোনা হবে, এরপর ইভিএমের ভোট। গণনার কাজ তদারকি করতে ইতিমধ্যে রাজ্যে চলে এসেছেন ২৯৪ জন পর্যবেক্ষক। প্রতি রাউন্ডেই ফল ঘোষণা করা হবে। পুরো গণনা প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে বিকাল ৩টা লেগে যেতে পারে। তবে বেলা ১২টার মধ্যেই চিত্রটা মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। গণনার জন্য কলকাতায় থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ৭টি কোম্পানি। গোটা রাজ্যে থাকছে ৭৮ কোম্পানি। কলকাতার গণনা কেন্দ্রগুলোয় তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি ভোট গণনা কেন্দ্রের বাইরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ভোট পরবর্তী সময়ে রাজ্যজুড়ে যেভাবে অশান্তি শুরু হয়েছে তাতে আরও সতর্ক নির্বাচন কমিশন। পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভার ভোট গণনার দিকে তীক্ষ নজর সারা ভারতের। কারণ গোটা ভারতে বামফ্রন্টের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত এই পশ্চিমবঙ্গ এখন তৃণমূলের দখলে। একটানা ৩৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বামফ্রন্টকে উত্খাত করে ২০১১ সালে রাজ্যটিতে পরিবর্তনের সরকার গড়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তাই এবারের ভোট রাজ্যের শাসকদলের কাছে নানা কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৮৪ সাল থেকে শুরু করে ২০১১ সাল পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যত ভোটে লড়াই করেছেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার প্রথম ও একমাত্র পরিচয় ছিল বিরোধী নেত্রী হিসেবে। কিন্তু এই প্রথম প্রশাসক হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে ময়দানে নেমেছেন মমতা। ২০১১ সালে রাজ্যের ২৯৪টি আসনের প্রতিটিতেই তৃণমূল প্রার্থীর নাম ছিল আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ পাঁচ বছর পর ছবিটা সম্পূর্ণ অন্যরকম। কারণ আজ একদিকে যেমন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতার কাজের বিচার হয়েছে, ঠিক তেমনি প্রতিটি জেতা আসনে তৃণমূলের বিধায়কদেরও নম্বর দিয়েছেন ভোটাররা। ২০১১ সালে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এসেছিল মমতার তৃণমূল কংগ্রেস। সেবার তৃণমূলের সহযোগী ছিল সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল কংগ্রেস। রাজ্যে ক্ষমতায় এসেই মমতা বলেছিলেন, ‘বদলা নয়, বদল চাই’। কিন্তু সারদা আর্থিক কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্য, ক্যামেরার সামনে তৃণমূল নেতাদের ঘুষ নেওয়া, কলকাতায় ফ্লাইওভার ধসের ঘটনায় দলের নেতাদের জড়িত থাকাসহ একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। এক সময় যে কংগ্রেস মমতার সঙ্গী ছিল তারাই সরকারের প্রতি বিতশ্রদ্ধ হয়ে বামদের সঙ্গে জোট বেঁধে মমতাকে উত্খাত করতে নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দুর্নীতিকে হাতিয়ার করে মমতাকে বিদ্ধ করেছিল বিজেপিও। তৃণমূলকে হারিয়ে ফের পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। রাজ্যের মানুষের একাংশের তরফেও ফের পরিবর্তনের  স্লোগান উঠেছিল। সেই স্লোগানে পা মিলিয়েছিল বিদ্বজ্জনরাও। এমন এক পরিস্থিতিতে এবার রাজ্যটিতে ভোট হয়েছে। লড়াইটি যে কঠিন তা স্বীকার করেছেন মমতাও। শেষ নির্বাচনী প্রচারে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় গিয়ে মমতা নিজেই জানিয়েছিলেন, ‘এত ধকল, এত কাদা ছোড়াছুড়ি, এত চাপ-এর আগে আমাকে এ রকম নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হয়নি’। গত সোমবার কয়েকটি সংস্থার বুথ ফেরত জরিপে দেখা গেছে, এবারও রাজ্যটিতে ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হবে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে বিরোধী দলের নেতারা এই জরিপকে মানতে চাইছেন না। সিপিআইএম নেতা শমিক লাহিড়ী জানান, বুথ ফেরত জরিপ সবসময় ঠিক হয় না। বিহারের ক্ষেত্রে জরিপ সঠিক হয়নি। সিপিআইএমের রাজ্য সভাপতি সূর্যকান্ত মিশ্রের দাবি, বাম কংগ্রেস জোট ২০০টি আসনে জিতে ক্ষমতায় আসবে। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গেই আসাম এবং দক্ষিণের তিন রাজ্য কেরল, তামিলনাড়ু এবং পুদুচেরিতেও বিধান সভা ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হবে।

সর্বশেষ খবর