শিরোনাম
রবিবার, ২৯ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা
কেমন বাজেট চাই

এখন ভ্যাট নিয়েই বিতর্ক হতে পারে

রুহুল আমিন রাসেল

এখন ভ্যাট নিয়েই বিতর্ক হতে পারে

ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ

দেশে এখন মূল্য সংযোজন কর—মূসক বা ভ্যাট নিয়েই বিতর্ক হতে পারে বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। প্রাজ্ঞ এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৫ শতাংশ হারে সব পণ্যের ওপর ঢালাওভাবে ভ্যাট প্রয়োগ করলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এবং স্বল্পবিত্ত মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব পড়তে পারে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের ওপর ভ্যাটের ভার বেশি পড়ার একটা আশঙ্কা আছে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ ভ্যাট প্রসঙ্গে বলেন, অনেক ব্যবসায়ীই দুর্বল হিসাবরক্ষণের জন্য বড় ব্যবসায়ীদের মতো নিজেদের কর রেয়াত পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। এর ফলে করের ওপর কর বোঝা (ডাবল ট্যাক্সেশন) তৈরি হতে পারে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) এই চেয়ারম্যান মনে করেন, আসছে বাজেটের আকার বড় মনে হলেও মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) অনুপাতে এবং দেশের প্রয়োজনীয় চাহিদার তুলনায় এটি আসলে বড় বলা চলে না। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বাজেটের আকার বড় করার সবচেয়ে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো রাজস্ব সংগ্রহের দুর্বলতা। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছর রাজস্ব আয় ১৫ শতাংশের কাছাকাছি বাড়লেও আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ শতাংশের কাছাকাছি ধরা হচ্ছে। মূলত ভ্যাট থেকে আরও বিস্তৃত ও কার্যকর প্রয়োগ থেকেই এই রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, ভ্যাট ভোগ্যপণ্যের ওপর একটি পরোক্ষ কর। সব ক্রেতাসাধারণের ওপর এই ভ্যাটের ভার সমানভাবে বর্তায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের অবসর নেওয়া এই শিক্ষকের মতে, আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট বাস্তব প্রয়োজনেই বড় হতে হবে। কারণ এ বাজেটের আকার বেশি বাড়বে রাজস্ব ব্যয় ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির জন্য। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় এটি ৩০ শতাংশ বেশি ধরা হয়েছে। সে তুলনায় উন্নয়ন বাজেট বাড়বে ২০ শতাংশের কিছু বেশি, যা মোট বাজেট ব্যয়ের এক-তৃতীয়াংশে নেমে আসবে। তবে বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যাচ্ছে, নতুন অর্থবছরও উন্নয়ন বাজেটের বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষত আগামী অর্থবছরে সরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ ও প্রয়োজন দুটোই আছে। নানা কারণে দেশের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে মন্দা ভাব কাটছে না। ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, নতুন অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করার ক্ষেত্রে কী ধরনের পদক্ষেপ থাকবে, ব্যবসায়ীরা এ জন্য অপেক্ষা করছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও জমির সমস্যার কারণে তারা বিনিয়োগে আগ্রহী কম। এ কারণে সরকারি খাতের মিনিমাম (ন্যূনতম বা কমসংখ্যক) প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করে বেসরকারি বিনিয়োগের ঘাটতি পূরণ করা জরুরি। তার মতে, উন্নয়ন বাজেটে যুক্তিসংগত কারণেই অবকাঠামো-বিদ্যুৎ ইত্যাদি খাতের বড় প্রকল্পগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে এই বড় প্রকল্পগুলোকে উন্নয়ন বাজেটে আলাদা করে দেখানো হবে বলে বলা হয়েছে। তা সত্ত্বেও এই প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন সক্ষমতা ও সময়সূচি নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকবেই। এসব প্রকল্পের প্রয়োজন থাকলেও অর্থায়ন, কারিগরি নকশা, পরিবেশের প্রভাব ও অর্থনৈতিক লাভ-ক্ষতির বিষয়গুলোতে স্বচ্ছতা ও সক্ষমতার ঘাটতি আছে বলে মনে হয়। পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) এই প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান মনে করেন, ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনা বা সরবরাহকারীদের স্বার্থ-সংক্রান্ত বিষয়গুলোর বাস্তবতা মেনে নিলেও সরকারি প্রকল্পগুলোর যথাযথ মূল্যায়নের বিকল্প নেই। তাই যথাযথ মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রকল্পের অগ্রাধিকার নির্ধারণের বিষয়টি খুবই জরুরি। তা না হলে এ প্রকল্পগুলো নিয়ে পরিবেশ, পরিবেশের ঝুঁকি ও অন্যান্য বিষয়ে বিতর্ক থেকেই যাবে বলে মনে করেন ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।

সর্বশেষ খবর